Header Ads


অষ্টাদশ অধ্যায় - মোক্ষ যোগ

                 "ওঁ তৎ সৎ"

      "ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়ঃ।"

             -:শ্রীমদ্ভগবদ গীতা:-

               *অষ্টাদশ অধ্যায়*

                "।মোক্ষ যোগ।"

  (শ্লোক, শব্দ, বঙ্গানুবাদ ও সারাংশ)


শ্লোক:১

অর্জুন উবাচঃ

সন্ন্যাসস্য মহাবাহো তত্ত্বমিচ্ছামি বেদিতুম্ ।

ত্যাগস্য চ হৃষীকেশ পৃথক্কেশিনিসূদন ॥১॥


শব্দার্থঃ 

সন্ন্যাসস্য - সন্ন্যাসের, মহাবাহো - হে মহাবাহো, তত্ত্বম্ - তত্ত্ব, ইচ্ছামি - ইচ্ছা করি, বেদিতুম্ - জানতে। 

ত্যাগস্য - ত‍্যাগের, চ - ও, হৃষীকেশ হে হৃশীকেশ, পৃথক্ - পৃথকভাবে, কেশি-নিসূদন- হে কেশিহন্তা ॥১॥

অনুবাদ:- অর্জুন বললেন- হে মহাবাহো ! হে হৃষীকেশ ! হে কেশিনিসূদন ! আমি সন্ন্যাস ও ত্যাগের তত্ত্ব পৃথকভাবে জানতে ইচ্ছা করি।


শ্লোক:2:

শ্রীভগবানুবাচঃ

কাম্যানাং কর্মণাং ন্যাসং সন্ন্যাসং কবয়ো বিদুঃ ।সর্বকর্মফলত্যাগং প্রাহুস্ত্যাগং বিচক্ষণাঃ ॥২


শব্দার্থঃ

 কাম্যানাম্ - কাম‍্য , কর্মণাম্ - কর্মসমূহের , ন্যাসম্ - ত‍্যাগকে, সন্ন্যাসম্ - সন্ন্যাস, কবয়ঃ - পণ্ডিতগণ, বিদুঃ - জানে। 

সর্ব-সমস্ত, কর্ম-কর্ম, ফল- ফল, ত্যাগম্ - ত‍্যাগ কে, প্রাহুঃ - বলেন, ত্যাগম্ - ত‍্যাগ, বিচক্ষণাঃ - বিচক্ষণ ব‍্যক্তিগণ ॥২॥


অনুবাদ:- পরমেশ্বর ভগবান বললেন- পণ্ডিতগণ কাম্য কর্মসমূহের ত্যাগকে সন্ন্যাস বলে জানেন এবং বিচক্ষণ ব্যক্তিগণ সমস্ত কর্মফল ত্যাগকে ত্যাগ বলে থাকেন।

 

শ্লোক:3:

ত্যাজ্যং দোষবদিত্যেকে কর্ম প্রাহুর্মনীষিণঃ ।

যজ্ঞদানতপঃকর্ম ন ত্যাজ্যমিতি চাপরে ॥৩॥

শব্দার্থঃ 

ত্যাজ্যম্ - ত‍্যাজ‍্য, দোষবৎ - দোষযুক্ত, ইতি - সেই হেণতু, একে - এক শ্রেণীর, কর্ম - কর্ম, প্রাহুঃ বলেন, মনীষিণঃ - মনীষীগণ।

যজ্ঞ- যজ্ঞ, দান-দান, তপঃ- তপস্যা, কর্ম - কর্ম, ন - নয়, ত্যাজ্যম্ - ত‍্যাজ‍্য, ইতি - এভাবে, চ - এবং, অপরে - অন‍্যেরা ॥৩॥


অনুবাদ:- এক শ্রেণীর মনীষীগণ বলেন যে, কর্ম দোষযুক্ত, সেই হেতু তা পরিত্যজ্য৷ অপর এক শ্রেণীর পণ্ডিত যজ্ঞ, দান, তপস্যা প্রভৃতি কর্মকে অত্যাজ্য বলে সিদ্ধান্ত করেছেন।


শ্লোক:4:

নিশ্চয়ং শৃণু মে তত্র ত্যাগে ভরতসত্তম ।

ত্যাগো হি পুরুষব্যাঘ্র ত্রিবিধঃ সংপ্রকীর্তিতঃ ॥৪॥

শব্দার্থঃ 

নিশ্চয়ম্ - নিশ্চয় সিদ্ধান্ত, শৃণু - শ্রবণ কর, মে - আমার, তত্র - সেই, ত্যাগে - ত‍্যাগ সম্বন্ধে, ভরতসত্তম - হে ভারতশ্রেষ্ঠ,

ত্যাগঃ - ত‍্যাগ, হি - অবশ্যই, পুরুষব্যাঘ্র - হে পুরুষব‍্যাঘ্র, ত্রিবিধঃ - তিন প্রকার, সংপ্রকীর্তিতঃ - কীর্তিত হয়েছে ॥৪॥


অনুবাদ:- হে ভরতসত্তম! ত্যাগ সম্বন্ধে আমার নিশ্চয় সিদ্ধান্ত শ্রবণ কর৷ হে পুরুষব্যাঘ্র! শাস্ত্রে ত্যাগও তিন প্রকার বলে কীর্তিত হয়েছে।


শ্লোক:5:

যজ্ঞদানতপঃকর্ম ন ত্যাজং কার্যমেব তৎ ।

যজ্ঞো দানং তপশ্চৈব পাবনানি মনীষিণাম্ ॥৫॥

শব্দার্থঃ 

যজ্ঞ- - যজ্ঞ, দান-দান, তপঃ-তপস্যা, কর্ম - কর্ম, ন - নয়, ত্যাজম্ - ত‍্যাজ‍্য, কার্যম্ - করা কর্তব্য, এব - অবশ্যই, তৎ, - তা।

যজ্ঞঃ - যজ্ঞ, দানম্ - দান, তপঃ - তপস্যা, চ - ও, এব - অবশ্যই, পাবনানি - পবিত্র করে, মনীষিণাম্ - মনীষীদের পর্যন্ত ॥৫॥


অনুবাদ:- যজ্ঞ, দান ও তপস্যা ত্যাজ্য নয়, তা অবশ্যই করা কর্তব্য৷ যজ্ঞ, দান ও তপস্যা মনীষীদের পর্যন্ত পবিত্র করে।


শ্লোক:6:

এতান্যপি তু কর্মাণি সঙ্গং ত্যক্ত্বা ফলানি চ ।

কর্তব্যানীতি মে পার্থ নিশ্চিতং মতমুত্তমম্ ॥৬॥

শব্দার্থঃ 

এতানি - এসমস্ত , অপি - অবশ্যই, তু - কিন্তু, কর্মাণি - কর্ম, সঙ্গম্ - আসক্তি, ত্যক্ত্বা - পরিত্যাগ করে, ফলানি - ফল সমূহ, চ - ও ।

কর্তব্যানি - কর্তব‍্যবোধে অনুষ্ঠান করা উচিত, ইতি  - ইহা, মে - আমার, পার্থ - হে পৃথাপুত্র, নিশ্চিতম্ - নিশ্চিত, মতম্ - অভিমত, উত্তমম্ - উত্তম ॥৬॥


অনুবাদ:- হে পার্থ! এই সমস্ত কর্ম আসক্তি ও ফলের আশা পরিত্যাগ করে কর্তব্যবোধে অনুষ্ঠান করা উচিত। ইহাই আমার নিশ্চিত উত্তম অভিমত।


শ্লোক:7:

নিয়তস্য তু সন্নাসঃ কর্মণো নোপপদ্যতে ।

মোহাত্তস্য পরিত্যাগস্তামসঃ পরিকীর্তিতঃ ॥৭॥

শব্দার্থঃ 

নিয়তস্য - নিত্য, তু - কিন্তু, সন্নাসঃ - ত‍্যাগ, কর্মণঃ - কর্মের, ন - নয়, উপপদ্যতে - উপযুক্ত।

মোহাৎ - মোহবশত, তস্য - তার, পরিত্যাগঃ - পরিত্যাগ, তামসঃ - তামসিক, পরিকীর্তিতঃ - বলা হয়  ॥৭॥


অনুবাদ:- কিন্তু নিত্যকর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়৷ মোহবশত তার ত্যাগ হলে, তাকে তামসিক ত্যাগ বলা হয়।


শ্লোক:8:

দুঃখমিত্যেব যৎ কর্ম কায়ক্লেশভয়াত্ত্যজেৎ ।

স কৃত্বা রাজসং ত্যাগং নৈব ত্যাগফলং লভেৎ ॥৮॥

শব্দার্থঃ 

দুঃখম্ - দুঃখ জনক, ইতি - এভাবে, এব - অবশ্যই, যৎ - যে, কর্ম - কর্ম, কায়- দৈহিক, ক্লেশ- ক্লেশের, ভয়াৎ - ভয়ে,

ত্যজেৎ - ত‍্যাগ করেন।

সঃ - তিনি, কৃত্বা - করেন, রাজসম্ - রাজসিক, ত্যাগম্ - ত‍্যাগ, ন - না, এব - অবশ্যই, ত্যাগ - ত‍্যাগের, ফলম্ - ফল, লভেৎ - লাভ করেন ॥৮॥


অনুবাদ:- যিনি নিত্যকর্মকে দুঃখজনক বলে মনে করে, দৈহিক ক্লেশের ভয়ে ত্যাগ করেন,

তিনি অবশ্যই সেই রাজসিক ত্যাগ করে ত্যাগের ফল লাভ করেন না।


শ্লোক:9:

কার্যমিত্যেব যৎ কর্ম নিয়তং ক্রিয়তেহর্জুন ।

সঙ্গং ত্যক্ত্বা ফলং চৈব স ত্যাগঃ সাত্ত্বিকো মতঃ ॥৯॥

শব্দার্থঃ 

কার্যম্ - কর্তব্য, ইতি এব - এই মনে করে, যৎ - যে, কর্ম - কর্ম, নিয়তম্ - নিত্য, ক্রিয়তে - অনুষ্ঠান করা হয়, অর্জুন - হে অর্জুন।

সঙ্গম্ - আসক্তি, ত্যক্ত্বা - পরিত্যাগ করে, ফলম্ - ফল, চ - ও, এব - অবশ্যই, সঃ - সেই, ত্যাগঃ - ত‍্যাগ, সাত্ত্বিকঃ - সাত্ত্বিক, মতঃ - আমার মতে ॥৯॥

অনুবাদ:- হে অর্জুন ! আসক্তি ও ফল পরিত্যাগ

করে কর্তব্যবোধে যে নিত্যকর্মের অনুষ্ঠান করা

হয়, আমার মতে সেই ত্যাগ সাত্ত্বিক।


শ্লোক:10:

ন দ্বেষ্ট্যকুশলং কর্ম কুশলে নানুষজ্জতে ।

ত্যাগী সত্ত্বসমাবিষ্টো মেধাবী ছিন্নসংশয়ঃ ॥১০॥

শব্দার্থঃ 

ন - না, দ্বেষ্টি - বিদ্বেষ করেন, অকুশলম্ - অশুভ, কর্ম - কর্মে, কুশলে - শুভ, ন - না, অনুষজ্জতে - আসক্ত হন ,

ত্যাগী - ত‍্যাগী, সত্ত্ব-সমাবিষ্টঃ - সত্ত্বগুণে আবিষ্ট, মেধাবী - বুদ্ধিমান, ছিন্ন- ছিন্ন, সংশয়ঃ - সমস্ত সংশয় ॥১০॥


অনুবাদ:- সত্ত্বগুণে আবিষ্ট, মেধাবী ও সমস্ত সংশয়-ছিন্ন ত্যাগী অশুভ কর্মে বিদ্বেষ করেন না এবং শুভ কর্মে আসক্ত হন না ।


শ্লোক:11:

ন হি দেহভৃতা শক্যং ত্যক্তুং কর্মাণ্যশেষতঃ ।

যস্তু কর্মফলত্যাগী স ত্যাগীত্যভিধীয়তে ॥১১॥

শব্দার্থঃ 

ন - নয়, হি - অবশ্যই, দেহভৃতা - দেহধারী জীবের, শক্যম্ - সম্ভব, ত্যক্তুম্ - পরিত‍্যাগ করা, কর্মাণি - কর্ম সমূহ, অশেষতঃ - সম্পূর্ণ রূপে।

 যঃ - যিনি, তু - কিন্তু, কর্ম - কর্ম, ফল - ফল, ত্যাগী - পরিত‍্যাগী, সঃ - তিনি, ত্যাগী - ত‍্যাগী, ইতি - এরূপ, অভিধীয়তে - অভিহিত হন॥১১॥

অনুবাদ:- অবশ্যই দেহধারী জীবের পক্ষে সমস্ত কর্ম পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়, কিন্তু যিনি সমস্ত কর্মফল পরিত্যাগী, তিনিই বাস্তবিক ত্যাগী বলে অভিহিত হন।


শ্লোক:12:

অনিষ্টমিষ্টং মিশ্রং চ ত্রিবিধং কর্মণঃ ফলম্ ।

ভবত্যত্যাগিনাং প্রেত্য ন তু সন্ন্যাসিনাং ক্বচিৎ ॥১২॥

শব্দার্থঃ 

অনিষ্টম্ - নরক প্রাপ্তিরূপ, ইষ্টম্ - স্বর্গ প্রাপ্তিরূপ, মিশ্রম্ - মিশ্র, চ - এবং, ত্রিবিধম্ - তিন প্রকার, কর্মণঃ - কর্মের, ফলম্ - ফল।

 ভবতি - হয়, অত্যাগিনাম্ - ত‍্যাগ রহিত ব‍্যক্তিদের, প্রেত্য - পরলোকে, ন - না, তু - কিন্তু, সন্ন্যাসিনাম্ - সন্ন্যাসীদের, ক্বচিৎ - কখনও ॥১২॥

অনুবাদ:- যাঁরা কর্মফল ত্যাগ করেননি, তাঁদের

পরলোকে অনিষ্ট, ইষ্ট ও মিশ্র- এই তিন প্রকার

কর্মফল ভোগ হয়। কিন্তু সন্ন্যাসীদের কখনও

ফলভোগ করতে হয় না।


শ্লোক:13:

পঞ্চৈতানি মহাবাহো কারণানি নিবোধ মে ।

সাংখ্যে কৃতান্তে প্রোক্তানি সিদ্ধয়ে সর্বকর্মণাম্ ॥১৩॥

শব্দার্থঃ 

পঞ্চ - পাঁচটি, এতানি - এই, মহাবাহো - হে মহাবাহো, কারণানি - কারণ, নিবোধ - অবগত হও, মে - আমার থেকে।

সাংখ্যে - বেদান্ত শাস্ত্রে, কৃত-অন্তে - সিদ্ধান্তে, প্রোক্তানি - কথিত, সিদ্ধয়ে - সিদ্ধির উদ্দেশ্যে, সর্ব - সমস্ত, কর্মণাম্ - কর্মের॥১৩॥

অনুবাদ:- হে মহাবাহো! বেদান্ত শাস্ত্রের সিদ্ধান্তে সমস্ত কর্মের সিদ্ধির উদ্দেশ্যে এই পাঁচটি কারণ নির্দিষ্ট হয়েছে, আমার থেকে তা অবগত হও।


শ্লোক:14:

অধিষ্ঠানং তথা কর্তা করণং চ পৃথগ্ বিধম্ ।

বিবিধাশ্চ পৃথক্ চেষ্টা দৈবং চৈবাত্র পঞ্চমম্ ॥১৪॥

শব্দার্থঃ 

অধিষ্ঠানম্ - স্থান, তথা - ও, কর্তা - কর্তা, করণম্ - করণ, চ - এবং, পৃথক্-বিধম্ - নানা প্রকার।

বিবিধাঃ - বিবিধ, চ - এবং, পৃথক্ - পৃথক, চেষ্টাঃ - প্রচেষ্টা, দৈবম্ - দৈব, চ - এবং, এব - অবশ্যই, অত্র - এখানে, পঞ্চমম্ - পাঁচটি॥১৪॥

অনুবাদ:- অধিষ্ঠান অর্থাৎ দেহ, কর্তা, নানা

প্রকার করণ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়সমূহ, বিবিধ প্রচেষ্টা

ও দৈব অর্থাৎ পরমাত্মা-- এই পাঁচটি হচ্ছে

কারণ।


শ্লোক:15:

শরীরবাঙ্মনোভির্যৎ কর্ম প্রারভতে নরঃ ।

ন্যায্যং বা বিপরীতং বা পঞ্চৈতে তস্য হেতবঃ ॥১৫॥

শব্দার্থঃ 

শরীর- দেহ, বাক্- বাক‍্য, মনোভিঃ - মনের দ্বারা, যৎ - যে, কর্ম - কর্ম, প্রারভতে - আরম্ভ করে, নরঃ - মানুষ।

ন্যায্যম্ - ন‍্যায়যুক্ত, বা - অথবা, বিপরীতম্ - বিপরীত, বা - অথবা, পঞ্চ - পাঁচটি, এতে - এই, তস্য - তার, হেতবঃ - কারণ॥১৫॥

অনুবাদ:- শরীর, বাক্য ও মনের দ্বারা মানুষ যে কর্ম আরম্ভ করে, তা ন্যায্যই হোক অথবা অন্যায্যই হোক, এই পাঁচটি তার কারণ।


শ্লোক:16:

তত্রৈবং সতি কর্তারমাত্মানং কেবলং তু যঃ ।

পশ্যত্যকৃতবুদ্ধিত্বান্ন স পশ্যতি দুর্মতিঃ ॥১৬॥

শব্দার্থঃ 

তত্র - সেখানে, এবম্ - এভাবে, সতি - হলেও, কর্তারম্ - কর্তারূপে, আত্মানম্ - নিজেকে, কেবলম্ - কেবল, তু - কিন্তু, যঃ - যে।

পশ্যতি - দর্শন করে, অকৃত-বুদ্ধিত্বাৎ - বুদ্ধির অভাব বশত, ন - না, সঃ - সেই, পশ্যতি - দর্শন করতে পারে, দুর্মতিঃ - দুর্মতি ॥১৬॥

অনুবাদ:- অতএব, কর্মের পাঁচটি কারণের কথা বিবেচনা না করে নিজেকে কর্তা বলে মনে করে, বুদ্ধির অভাববশত সেই দুর্মতি যথাযথ ভাবে দর্শন করতে পারে না।


শ্লোক:17:

যস্য নাহঙ্কৃতো ভাবো বুদ্ধির্যস্য ন লিপ্যতে ।

হত্বাপি স ইমাঁল্লোকান্ন হন্তি ন নিবধ্যতে ॥১৭॥

শব্দার্থঃ 

যস্য - যাঁর, ন - নেই, অহঙ্কৃতঃ - অহংকারের , ভাবঃ - ভাব, বুদ্ধিঃ - বুদ্ধি, যস্য - যাঁর, ন - না, লিপ্যতে - লিপ্ত হয়।

হত্বা-অপি হত্যা করেও, সঃ - তিনি, ইমান্ - এই সমস্ত, লোকান্ - প্রাণী কে, ন - না, হন্তি - হত্যা করেন, ন - না, নিবধ্যতে - আবদ্ধ হন॥১৭॥


অনুবাদ:- যাঁর অহঙ্কারের ভাব নেই এবং যাঁর বুদ্ধি কর্মফলে লিপ্ত হয় না, তিনি এই সমস্ত প্রাণীকে হত্যা করেও হত্যা করেন না এবং হত্যার কর্মফলে আবদ্ধ হন না।


শ্লোক:18:

জ্ঞানং জ্ঞেয়ং পরিজ্ঞাতা ত্রিবিধা কর্মচোদনা ।

করণং কর্ম কর্তেতি ত্রিবিধঃ কর্মসংগ্রহঃ ॥১৮॥

শব্দার্থঃ 

জ্ঞানম্ - জ্ঞান, জ্ঞেয়ম্ - জ্ঞেয়, পরিজ্ঞাতা - জ্ঞাতা, ত্রিবিধা - তিন প্রকার, কর্ম - কর্মের, চোদনা - প্রেরণা,

করণম্ - ইন্দ্রিয়গুলি, কর্ম - কর্ম, কর্তা - কর্তা, ইতি - এই, ত্রিবিধঃ - তিন প্রকার, কর্ম - কর্মের, সংগ্রহঃ - আশ্রয়॥১৮॥

অনুবাদ:- জ্ঞান, জ্ঞেয় ও পরিজ্ঞাতা- এই তিনটি কর্মের প্রেরণা; করণ, কর্ম ও কর্তা এই তিনটি কর্মের আশ্রয়।


শ্লোক:19:

জ্ঞানং কর্ম চ কর্তা চ ত্রিধৈব গুণভেদতঃ ।

প্রোচ্যতে গুণসংখ্যানে যথাবচ্ছৃণু তান্যপি ॥১৯॥

শব্দার্থঃ 

জ্ঞানম্ - জ্ঞান, কর্ম - কর্ম, চ - ও, কর্তা - কর্তা, চ - ও, ত্রিধা - ত্রিবিধ, এব - অবশ্যই, গুণভেদতঃ - গুণভেদ হেতু,

প্র-উচ্যতে - কথিত হয়, গুণসংখ্যানে - বিভিন্ন গুণ সম্বন্ধে, যথাবৎ - যথাযথ রূপে, শৃণু - শ্রবণ কর, তানি - সেই সমস্ত, অপি - ও ॥১৯॥

অনুবাদ:- প্রকৃতির তিনটি গুণ অনুসারে জ্ঞান, কর্ম ও কর্তা তিন প্রকার বলে কথিত হয়েছে৷ সেই সমস্তও যথযথ রূপে শ্রবণ কর।


শ্লোক:20:

সর্বভূতেষু যেনৈকং ভাবমব্যয়মীক্ষতে ।

অবিভক্তং বিভক্তেষু তজ্ জ্ঞানং বিদ্ধি সাত্ত্বিকম্ ॥২০॥

শব্দার্থঃ 

সর্বভূতেষু - সমস্ত প্রাণীতে, যেন - যার দ্বারা, একম্ - এক, ভাবম্ - ভাব, অব্যয়ম্ - অব‍্যয়, ঈক্ষতে - দর্শন হয়,

অবিভক্তম্ - অবিভক্ত, বিভক্তেষু - পরস্পর ভিন্ন, তৎ - সেই, জ্ঞানম্ - জ্ঞানকে, বিদ্ধি - জানবে, সাত্ত্বিকম্ - সাত্বিক॥২০॥

অনুবাদ:- যে জ্ঞানের দ্বারা সমস্ত প্রাণীতে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়, অনেক জীব পরস্পর ভিন্ন হলেও চিন্ময় সত্তায় তারা এক, সেই জ্ঞানকে সাত্ত্বিক বলে জানবে।


শ্লোক:21:

পৃথক্ত্বেন তু যজ্ জ্ঞানং নানাভাবান্ পৃথগ্বিধান্ ।

বেত্তি সর্বেষু ভূতেষু তজ্ জ্ঞানং বিদ্ধি রাজসম্

॥২১॥

*

পৃথক্ত্বেন - পৃথকরূপে, তু - কিন্তু, যৎ - যে, জ্ঞানম্ - জ্ঞান, নানা-ভাবান্ - ভিন্ন ভিন্ন ভাব, পৃথক্-বিধান্ - নানা বিধ।

 বেত্তি - জ্ঞানে, সর্বেষু - সমস্ত, ভূতেষু - প্রাণীতে, তৎ - সেই, জ্ঞানম্ - জ্ঞানকে, বিদ্ধি - জানবে, রাজসম্ - রাজসিক ॥২১॥

অনুবাদ:- যে জ্ঞানের দ্বারা সমস্ত প্রাণীতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের আত্মা অবস্থিত বলে পৃথকরূপে দর্শন হয়, সেই জ্ঞানকে রাজসিক বলে জানবে।


শ্লোক:22:

যত্তু কৃৎস্নবদেকস্মিন্ কার্যে সক্তমহৈতুকম্ ।

অতত্ত্বার্থবদল্পং চ তত্তামসমুদাহৃতম্ ॥২২॥

শব্দার্থঃ 

যৎ - যে, তু - কিন্তু, কৃৎস্নবৎ - পরিপূর্ণের ন‍্যায়, একস্মিন্ - কোন একটি, কার্যে - কাজে, সক্তম্ - আসক্তি,

অহৈতুকম্ - কারণ রহিত, অতত্ত্বার্থবৎ - প্রকৃত তত্ত্ব অবগত না হয়ে, অল্পম্ - তুচ্ছ, চ - এবং, তৎ - সেই, তামসম্ - তামসিক, উদাহৃতম্ - কথিত হয় ॥২২॥

অনুবাদ:- আর যে জ্ঞানের দ্বারা প্রকৃত তত্ত্ব অবগত না হয়ে, কোন একটি বিশেষ কার্যে

পরিপূর্ণ্যের ন্যায় আসক্তির উদয় হয়, সেই তুচ্ছ

জ্ঞানকে তামসিক জ্ঞান বলে কথিত হয়।


শ্লোক:23:

নিয়তং সঙ্গরহিতমরাগদ্বেষতঃ কৃতম্ ।

অফলপ্রেপ্সুনা কর্ম যত্তৎসাত্ত্বিকমুচ্যতে ॥২৩॥

*

নিয়তম্ - নিত‍্য, সঙ্গরহিতম্ - আসক্তি রহিত, অরাগদ্বেষতঃ - রাগ ও দ্বেষ বর্জন পুর্বক, কৃতম্ - অনুষ্ঠিত হয়,

অফল-প্রেপ্সুনা - ফলের কামনা শূন‍্য, কর্ম - কর্ম, যৎ - যে, তৎ - তাকে, সাত্ত্বিকম্ - সাত্বিক, উচ্যতে - বলা হয় ॥২৩॥

অনুবাদ:- ফলের কামনাশূন্য ও আসক্তি রহিত হয়ে রাগ ও দ্বেষ বর্জনপূর্বক যে নিত্যকর্ম অনুষ্ঠিত হয়, তাকে সাত্ত্বিক কর্ম বলা হয়।


শ্লোক:24:

য্ত্তু কামেপ্সুনা কর্ম সাহঙ্কারেণ বা পুনঃ ।

ক্রিয়তে বহুলায়াসং তদ্ রাজসমুদাহৃতম্॥২৪॥

*

য্ৎ, তু, কাম-ঈপ্সুনা, কর্ম, স-অহঙ্কারেণ, বা,

পুনঃ, ক্রিয়তে, বহুল-আয়াসম্, তৎ, রাজসম্, উদাহৃতম্ ॥২৪॥


যৎ – যে, তু—– কিন্তু, কামেপ্সুনা--ফলের আকাঙ্ক্ষা যুক্ত, কর্ম -কর্ম, সাহঙ্কারেণ— অহঙ্কার যুক্ত হয়ে, বা— অথবা, পুন:— পুনরায়, ক্রিয়তে - অনুষ্ঠিত হয়, বহুলায়াসম্ – বহু কষ্টসাধ্য, তৎ—সেই, রাজসম্ - রাজসিক, উদাহৃতম্ – অভিহিত হয়।।২৪।।


অনুবাদ:- কিন্তু ফলের আকাঙ্ক্ষাযুক্ত ও

অহঙ্কারযুক্ত হয়ে বহু কষ্টসাধ্য করে যে কর্মের অনুষ্ঠান হয়, সেই কর্ম রাজসিক বলে অভিহিত হয়।



শ্লোক:25:

অনুবন্ধং ক্ষয়ং হিংসামনপেক্ষ্য চ পৌরুষম্ ।

মোহাদারভ্যতে কর্ম যত্তত্তামসমুচ্যতে ॥২৫॥

*

অনুবন্ধম্, ক্ষয়ম্, হিংসাম্, অনপেক্ষ্য, চ,পৌরুষম্ , মোহাৎ, আরভ্যতে, কর্ম, যৎ, তৎ, তামসম্, উচ্যতে ॥২৫॥


অনুবন্ধম্ —–ভাবী বন্ধন; ক্ষয়ম্ - ক্ষয়, হিংসাম্– হিংসা, অনপেক্ষ্য — পরিণতির কথা বিবেচনা না করে, চ– ও, পৌরুষম্— নিজ সামর্থ্যের, মোহাৎ— মোহবশত, আরভ্যতে—আরম্ভ হয়, কর্ম - কর্ম, যৎ – যে, তৎ– তাকে, তামসম্— তামসিক, উচ্যতে বলা হয়।


অনুবাদ:- ভাবী বন্ধন, ধর্ম জ্ঞানাদির ক্ষয়,

হিংসা এবং নিজ সামর্থ্যের পরিণতির কথা

বিবেচনা না করে মোহবশত যে কর্ম অনুষ্ঠিত হয়, তাকে তামসিক কর্ম বলা হয়।


শ্লোক:26:

মুক্তসঙ্গোহনহংবাদী ধৃত্যুৎসাহসমন্বিতঃ ।

সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোর্নির্বিকারঃ কর্তা সাত্ত্বিক উচ্যতে ॥২৬॥


শব্দার্থঃ

মুক্তসঙ্গঃ—সমস্ত জড় আসক্তি থেকে মুক্ত, অনহংবাদী—অহঙ্কারশূন্য, ধৃতি - ধৃতি উৎসাহ–উদ্যম; সমন্বিতঃ— সমন্বিত, সিদ্ধি— সিদ্ধি, অসিদ্ধ্যোঃ—অসিদ্ধিতে, নির্বিকারঃ—নির্বিকার, কর্তা - কর্তা, সাত্ত্বিকঃ — সাত্ত্বিক, উচ্যতে - বলা হয়।


অনুবাদ:- সমস্ত জড় আসক্তি থেকে মুক্ত,

অহঙ্কারশূন্য, ধৃতি ও উৎসাহ সমন্বিত এবং সিদ্ধি ও অসিদ্ধিতে নির্বিকার- এরূপ কর্তাকেই সাত্ত্বিক বলা হয়।


শ্লোক:27:

রাগী কর্মফলপ্রেপ্সুর্লুব্ধো হিংসাত্মকোহশুচিঃ ।

হর্ষশোকান্বিতঃ কর্তা রাজসঃ পরিকীর্তিতঃ

॥২৭॥

*

রাগী, কর্মফল-প্রেপ্সুঃ, লুব্ধঃ, হিংসাত্মকঃ, অশুচিঃ।

হর্ষ-শোক-অন্বিতঃ, কর্তা, রাজসঃ, পরিকীর্তিতঃ ॥২৭॥


রাগী—কর্মাসক্ত, কর্মফল - কর্মফলে, প্ৰেপ্সুঃ - আকাঙ্ক্ষী, লুব্ধঃ - লোভী, হিংসাত্মকঃ—হিংসা পরায়ণ, অশুচিঃ— অশুচি। হর্ষশোকাম্বিতঃ— হর্ষ ও শোকযুক্ত, কর্তা–কর্তা, রাজসঃ– রাজসিক, পরিকীর্তিতঃ—কথিত হয়।


অনুবাদ:- কর্মাসক্ত, কর্মফলে আকাঙ্ক্ষী, লোভী, হিংসাপ্রিয়, অশুচি, হর্ষ ও শোকযুক্ত যে

কর্তা, সে রাজসিক কর্তা বলে কথিত হয়।


শ্লোক:28:

অযুক্তঃ প্রাকৃতঃ স্তব্ধঃ শঠো নৈষ্কৃতিকোহলসঃ ।

বিষাদী দীর্ঘসূত্রী চ কর্তা তামস উচ্যতে ॥২৮॥

*

অযুক্তঃ - অনুচিত কার্যপ্রিয়, প্রাকৃতঃ - জড় চেষ্টাযুক্ত, স্তব্ধঃ - অনম্র, শঠঃ - বঞ্চক, নৈষ্কৃতিকঃ - অন‍্যের অবমাননাকারী, অলসঃ - অলস।

বিষাদী - বিষাদযুক্ত, দীর্ঘসূত্রী - দীর্ঘসূত্রী, চ - ও, কর্তা - কর্তা, তামসঃ - তামসিক, উচ্যতে  - বলাহয় ॥২৮॥


অনুবাদ:- অনুচিত কার্যপ্রিয়, জড় চেষ্টাযুক্ত,

অনম্র, শঠ, অন্যের অবমাননাকারী, অলস,

বিষাদযুক্ত ও দীর্ঘসূত্রী যে কর্তা, তাকে তামসিক কর্তা বলা হয়।


শ্লোক:29:

বুদ্ধের্ভেদং ধৃতেশ্চৈব গুণতস্ত্রিবিধং শৃণু ।

প্রোচ্যমানমশেষেণ পৃথক্ত্বেন ধনঞ্জয় ॥২৯॥

*

বুদ্ধেঃ - বুদ্ধির, ভেদম্ - ভেদ, ধৃতেঃ - ধৃতির, চ - ও, এব - অবশ্যই, গুণতঃ - জড়া প্রকৃতির গুণ দ্বারা, ত্রিবিধম্ - তিন প্রকার, শৃণু - শ্রবণ কর।

প্র-উচ্যমানম্ - যেভাবে আমি বলছি, অশেষেণ - বিস্তারিত ভাবে, পৃথক্-ত্বেন - পৃথকভাবে, ধনঞ্জয় - হে ধনঞ্জয় ॥২৯॥


অনুবাদ:- হে ধনঞ্জয় ! জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণ

অনুসারে বুদ্ধির ও ধৃতির যে ত্রিবিধ ভেদ আছে, তা আমি বিস্তারিতভাবে ও পৃথকভাবে

বলছি, তুমি শ্রবণ কর।


শ্লোক:30:

প্রবৃত্তিং চ নিবৃত্তিং চ কার্যাকার্যে ভয়াভয়ে ।

বন্ধং মোক্ষং চ যা বেত্তি বুদ্ধিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী ॥৩০॥

*

প্রবৃত্তিম্ - প্রবৃত্তি, চ - ও, নিবৃত্তিম্ - নিবৃত্তি, চ - ও, কার্য- - কার্য, অকার্যে - অকার্য, ভয়- ভয়, অভয়ে - অভয়।

বন্ধম্ - বন্ধন, মোক্ষম্ - মুক্তি, চ - ও, যা - যে, বেত্তি - জানতে পারা যায়, বুদ্ধিঃ - বুদ্ধি, সা - সেই, পার্থ - হে পৃথাপুত্র, সাত্ত্বিকী - সাত্ত্বিক ॥৩০॥


অনুবাদ:- হে পার্থ ! যে বুদ্ধির দ্বারা প্রবৃত্তি ও

নিবৃত্তি, কার্য ও অকার্য, ভয় ও অভয়, বন্ধন ও

মুক্তি- এই সকলের পার্থক্য জানতে পারা যায়,

সেই বুদ্ধি সাত্ত্বিকী।


শ্লোক:31:

যয়া ধর্মমধর্মং চ কার্যং চাকার্যমেব চ ।

অযথাবৎ প্রজানাতি বুদ্ধিঃ সা পার্থ রাজসী ॥৩১॥

*

যয়া - যার দ্বারা, ধর্মম্ - ধর্ম, অধর্মম্ - অধর্ম, চ - ও , কার্যম্ - কার্য, চ - ও, অকার্যম্ - অকার্য, এব - অবশ্যই,

চ - ও।

অযথাবৎ - অসম‍্যকরূপে, প্রজানাতি - জানতে পারা যায়, বুদ্ধিঃ - বুদ্ধি, সা - সেই, পার্থ - হে পৃথাপুত্র, রাজসী - রাজসিক ॥৩১॥


অনুবাদ:- যে বুদ্ধির দ্বারা ধর্ম ও অধর্ম, কার্য ও অকার্য আদির পার্থক্য অসম্যক্ রূপে জানতে

পারা যায়, সেই বুদ্ধি রাজসিকী।


শ্লোক:32:

অধর্মং ধর্মমিতি যা মন্যতে তমসাবৃতা ।

সর্বার্থান্ বিপরীতাংশ্চ বুদ্ধিঃ সা পার্থ তামসী ॥৩২॥

*

অধর্মম্, ধর্মম্, ইতি, যা, মন্যতে, তমসা, আবৃতা। সর্ব-অর্থান্, বিপরীতান্, চ, বুদ্ধিঃ, সা, পার্থ, তামসী ॥৩২॥


অনুবাদ:- হে পার্থ ! যে বুদ্ধি অধর্মকে ধর্ম এবং

সমস্ত বস্তুকে বিপরীত বলে মনে করে,তমসাবৃত সেই বুদ্ধিই তামসিকী।


শ্লোক:33:

ধৃত্যা যয়া ধারয়তে মনঃপ্রাণেন্দ্রিয়ক্রিয়াঃ ।

যোগেনব্যভিচারিণ্যা ধৃতিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী ॥৩৩॥

*

ধৃত্যা, যয়া, ধারয়তে, মনঃ-প্রাণ-ইন্দ্রিয়-ক্রিয়াঃ।

যোগেন, অব্যভিচারিণ্যা, ধৃতিঃ, সা, পার্থ,

সাত্ত্বিকী ॥৩৩॥


অনুবাদ:- হে পার্থ ! যে অব্যভিচারিণী ধৃতি যোগ অভ্যাস দ্বারা মন, প্রাণ ও ইন্দ্রিয়ের

ক্রিয়াসকলকে ধারণ করে, সেই ধৃতিই সাত্ত্বিকী।


শ্লোক:34:

যয়া তু ধর্মকামার্থান্ ধৃত্যা ধারয়তেহর্জুন ।

প্রসঙ্গেন ফলাকাঙ্ক্ষী ধৃতিঃ সা পার্থ রাজসী ॥৩৪॥

*

যয়া, তু, ধর্ম-কাম-অর্থান্, ধৃত্যা, ধারয়তে,

অর্জুন।

প্রসঙ্গেন, ফল-আকাঙ্ক্ষী, ধৃতিঃ, সা, পার্থ, রাজসী ॥৩৪॥


অনুবাদ:-হে অর্জুন! হে পার্থ ! যে ধৃতি

ফলাকাঙ্ক্ষার সহিত ধর্ম, অর্থ ও কামকে

ধারণ করে, সেই ধৃতি রাজসী।


শ্লোক:35:

যয়া স্বপ্নং ভয়ং শোকং বিষাদং মদমেব চ ।

ন বিমুঞ্চতি দুর্মেধা ধৃতিঃ সা পার্থ তামসী ॥৩৫॥

*

যয়া, স্বপ্নম্, ভয়ম্, শোকম্, বিষাদম্, মদম্, এব, চ, ন, বিমুঞ্চতি, দুঃ-মেধাঃ, ধৃতিঃ, সা, পার্থ,

তামসী ॥৩৫॥




অনুবাদ:- হে পার্থ ! যে ধৃতি স্বপ্ন, ভয়, শোক,

বিষাদ, মদ আদিকে ত্যাগ করে না, সেই

বুদ্ধিহীনা ধৃতিই তামসী।



শ্লোক:36:

সুখং ত্বিদানীং ত্রিবিধং শৃণু মে ভরতর্ষভ ।

অভ্যাসাদ্ রমতে যত্র দুঃখান্তং চ নিগচ্ছতি ॥৩৬॥

*

সুখম্ - সুখ, তু - কিন্তু, ইদানীম্ - এখন, ত্রিবিধম্ - তিন প্রকার, শৃণু - শ্রবণ কর, মে - আমার কাছে, ভরতর্ষভ - হে ভরতশ্রেষ্ঠ,

অভ্যাসাৎ - অভ‍্যাসের দ্বারা, রমতে - রমন করে, যত্র - যেখানে, দুঃখ- দুঃখের, অন্তম্ - অন্ত, চ - ও, নিগচ্ছতি - লাভ করে॥৩৬॥


অনুবাদ:- হে ভরতর্ষভ! এখন তুমি আমার কাছে ত্রিবিধ সুখের বিষয় শ্রবণ কর৷ বদ্ধ

জীব পুনঃ পুনঃ অভ্যাসের দ্বারা সেই সুখে রমণ করে এবং যার দ্বারা সমস্ত দুঃখের অন্তলাভ করে থাকে।



শ্লোক:37:

যত্তদগ্রে বিষমিব পরিণামেহমৃতোপমম্ ।

তৎসুখং সাত্ত্বিকং প্রোক্তমাত্মবুদ্ধিপ্রসাদজম্ ॥৩৭॥

*

যৎ - যে, তৎ - তা, অগ্রে - প্রথমে, বিষম্ - বিষের, ইব - মত, পরিণামে - অবশেষে, অমৃত-উপমম্ - অমৃত তুল‍্য, তৎ - সেই, সুখম্ - সুখ, সাত্ত্বিকম্ - সাত্ত্বিক , প্রো-উক্তম্ - কথিত হয়,

আত্ম - আত্ম সম্বন্ধীয়, বুদ্ধি- বুদ্ধির প্রসাদজম্ - নির্মলতা থেকে জাত॥৩৭॥


অনুবাদ:- যে সুখ প্রথমে বিষের মতো কিন্তু পরিণামে অমৃততুল্য এবং আত্মনিষ্ঠ বুদ্ধির নির্মলতা থেকে জাত, সেই সুখ সাত্ত্বিক বলে কথিত হয়।



শ্লোক:38:

বিষয়েন্দ্রিয়সংযোগাদ্ যত্তদগ্রেহমৃতোপমম্ ।

পরিণামে বিষমিব তৎসুখং রাজসং স্মৃতম্ ॥৩৮॥

*

বিষয়- ইন্দ্রিয়ের বিষয়, ইন্দ্রিয়- ইন্দ্রিয়ের, সংযোগাৎ - সংযোগের ফলে, যৎ - যা, তৎ - সেই, অগ্রে - প্রথমে, অমৃত- অমৃত

উপমম্ - তুল‍্য, পরিণামে - অবশেষে, বিষম্ - বিষের, ইব - মত, তৎ - সেই, সুখম্ - সুখ, রাজসম্ - রাজসিক, স্মৃতম্- কথিত হয় ॥৩৮॥


অনুবাদ:- বিষয় ও ইন্দ্রিয়ের সংযোগের ফলে যে সুখ প্রথমে অমৃতের মতো এবং পরিণামে বিষের মতো অনুভূত হয়, সেই সুখকে রাজসিক বলে কথিত হয়।



শ্লোক:39:

যদগ্রে চানুবন্ধে চ সুখং মোহনমাত্মনঃ ।

নিদ্রালস্যপ্রমাদোত্থং তত্তামসমুদাহৃতম্ ॥৩৯॥

*

যৎ - যে, অগ্রে - প্রথমে, চ - ও, অনুবন্ধে - শেষে, চ - ও, সুখম্ - সুখ, মোহনম্ - মোহজনক, আত্মনঃ - আত্মার, নিদ্রা- নিদ্রা, আলস্য- - আলস‍্য, প্রমাদোত্থম্ - প্রমাদ উৎপন্ন হয়, তৎ - তা,

তামসম্ - তামসিক, উদাহৃতম্ - কথিত হয় ॥৩৯॥


অনুবাদ:- যে সুখ প্রথমে ও শেষে আত্মার মোহজনক এবং যা নিদ্রা, আলস্য ও প্রমাদ থেকে উৎপন্ন হয়, তা তামসিক সুখ বলে কথিত হয়।



শ্লোক:40:

ন তদস্তি পৃথিব্যাং বা দিবি দেবেষু বা পুনঃ ।

সত্ত্বং প্রকৃতিজৈর্মুক্তং যদেভিঃ স্যাৎ এভির্গুণৈঃ ॥৪০॥


ন - নেই, তৎ - সেই, অস্তি - আছে, পৃথিব্যাম্ - পৃথিবীতে, বা - অথবা, দিবি - স্বর্গে, দেবেষু - দেবতাদের মধ্যে, বা - অথবা, পুনঃ - পুণরায়।

সত্ত্বম্ - অস্তিত্ব, প্রকৃতিজৈঃ - প্রকৃতিজাত, মুক্তম্ - মুক্ত, যৎ - যে, এভিঃ - এই, স্যাৎ - হয়, এভিঃ - তিন, গুণৈঃ - গুণ থেকে ॥৪০॥


অনুবাদ:- এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে অথবা স্বর্গে দেবতাদের মধ্যে এমন কোন

প্রাণীর অস্তিত্ব নেই, যে প্রকৃতিজাত এই ত্রিগুণ থেকে মুক্ত।



শ্লোক:41:

ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রাণাং চ পরন্তপ ।

কর্মাণি প্রবিভক্তানি স্বভাবপ্রভবৈর্গুণৈঃ ॥৪১॥

*

ব্রাহ্মণ- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়- ক্ষত্রিয়,বিশাম্ - বৈশ‍্য, শূদ্রাণাম্ - শুদ্র, চ - ও, পরন্তপ - পরন্তপ।

কর্মাণি - কর্মসমূহ, প্রবিভক্তানি - বিভাগ হয়েছে, স্বভাব- - স্বভাব, প্রভবৈঃ - জাত, গুণৈঃ - গুণসমূহের দ্বারা ॥৪১॥


অনুবাদ:- হে পরন্তপ ! স্বভাবজাত গুণ অনুসারে

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের কর্মসমূহ বিভক্ত হয়েছে।



শ্লোক:42:

শমো দমস্তপঃ শৌচং ক্ষান্তিরার্জবমেব চ ।

জ্ঞানং বিজ্ঞানমাস্তিক্যং ব্রহ্মকর্ম স্বভাবজম্ ॥৪২॥


শমঃঅন্তরিন্দ্রিয়ের সংযম, দমঃ- বহিরিন্দ্রিয়ের সংযম, তপঃ - তপস্যা, শৌচম্ - শৌচ, ক্ষান্তিঃ - সহিষ্ণুতা, আর্জবম্ - সরলতা, এব - অবশ্যই, চ - ও। 

জ্ঞানম্ - শাস্ত্রীয় জ্ঞান, বিজ্ঞানম্ - তত্ত্ব উপলব্ধি, আস্তিক্যম্ - ধর্ম পরায়নতা, ব্রহ্ম - ব্রাহ্মণের কর্ম - কর্ম, স্বভাবজম্ - স্বভাবজাত॥৪২॥


অনুবাদ:- শম, দম, তপ, শৌচ, ক্ষান্তি, সরলতা, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আস্তিক্য- এগুলি ব্রাহ্মণদের স্বভাবজাত কর্ম।



শ্লোক:43:

শৌর্যং তেজো ধৃতির্দাক্ষ্যং যুদ্ধে চাপ্যপলায়নম্ ।

দানমীশ্বরভাবশ্চ ক্ষাত্রং কর্ম স্বভাবজম্ ॥৪৩॥


শৌর্যম্ - পরাক্রম, তেজঃ - তেজ, ধৃতিঃ - ধৈর্য্য, দাক্ষ্যম্ - কর্মে কুশলতা, যুদ্ধে - যুদ্ধে, চ - ও, অপি - ও, অপলায়নম্ - পলায়ন না করা।

দানম্ - দান, ঈশ্বর- প্রভুত্ব, ভাবঃ - ভাব, চ - এবং, ক্ষাত্রম্ - ক্ষত্রিয়ের, কর্ম - কর্ম, স্বভাবজম্ - স্বভাবজাত ॥৪৩॥


অনুবাদ:- শৌর্য, তেজ, ধৃতি, দক্ষতা, যুদ্ধে

অপলায়্ন, দান ও শাসন ক্ষমতা- এগুলি

ক্ষত্রিয়ের স্বভাবজাত কর্ম।



শ্লোক:44:

কৃষিগোরক্ষ্যবাণিজ্যং বৈশ্যকর্ম স্বভাবজম্ ।

পরিচর্যাত্মকং কর্ম শূদ্রস্যাপি স্বভাবজম্ ॥৪৪॥


কৃষি- কৃষি,গো-রক্ষ্য - গোরক্ষা, বাণিজ্যম্ - বাণিজ্য, বৈশ্যকর্ম - বৈশ‍্যের কর্ম, স্বভাবজম্ - স্বভাবজাত।

পরিচর্যা - পরিচর্যা, আত্মকম্ - আত্মক, কর্ম - কর্ম, শূদ্রস্য - শুদ্রের, অপি - ও, স্বভাবজম্ - স্বভাবজাত ॥৪৪॥


অনুবাদ:- কৃষি, গোরক্ষা ও বাণিজ্য এই কয়েকটি বৈশ্যের স্বভাবজাত কর্ম এবং

পরিচর্যাত্মক কর্ম শূদ্রের স্বভাবজাত ।



শ্লোক:45:

স্বে স্বে কর্মণ্যভিরতঃ সংসিদ্ধিং লভতে নরঃ ।

স্বকর্মনিরতঃ সিদ্ধিং যথা বিন্দতি তচ্ছৃণু ॥৪৫॥


স্বে - নিজ, স্বে - নিজ, কর্মণী - কর্মে, অভিরতঃ - নিরত, সংসিদ্ধিম্ - সিদ্ধি, লভতে - লাভ করে, নরঃ - মানুষ। 

স্বকর্মনিরতঃ - স্বীয়কর্মে যুক্ত, সিদ্ধিম্ - সিদ্ধি, যথা - যেভাবে, বিন্দতি - লাভ করে, তৎ - তা, শৃণু - শ্রবণ কর ॥৪৫॥


অনুবাদ:- নিজ নিজ কর্মে নিরত মানুষ সিদ্ধি লাভ করে থাকে৷স্বীয় কর্মে যুক্ত মানুষ যেভাবে সিদ্ধি লাভ করে, তা শ্রবণ কর।



শ্লোক:46:

যতঃ প্রবৃত্তির্ভূতানাং যেন সর্বমিদং ততম্ ।

স্বকর্মণা তমভ্যর্চ্য সিদ্ধিং বিন্দতি মানবঃ ॥৪৬॥

*

যতঃ - যার থেকে, প্রবৃত্তিঃ - প্রবৃত্তি, ভূতানাম্ - সমস্ত জীবের, যেন - যাঁর দ্বারা, সর্বম্ - সমস্ত, ইদম্ - এই,

ততম্ - ব‍্যাপ্ত, স্ব-কর্মণা - তার নিজের কর্মের দ্বারা, তম - তাকে, অভ্যর্চ্য - অর্চন করে, সিদ্ধিম্ - সিদ্ধি, বিন্দতি - লাভ করে, মানবঃ -মানুষ ॥৪৬॥


অনুবাদ:- যাঁর থেকে সমস্ত জীবের পূর্ব বাসনা রূপ প্রবৃত্তি হয়, যিনি এই সমগ্র বিশ্বে ব্যাপ্ত আছেন, তাঁকে মানুষ তার নিজের কর্মের দ্বারা অর্চন করে সিদ্ধি লাভ করে।



শ্লোক:47:

শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ ।

স্বভাবনিয়তং কর্ম কুর্বন্নাপ্নোতি কিল্বিষম্ ॥৪৭॥


শ্রেয়ান্ - শ্রেয়, স্বঃ-ধর্মঃ - স্বধর্ম , বিগুণঃ - অসম‍্যক রূপেঅনুষ্ঠিত, পরধর্মাৎ - পরধর্ম অপেক্ষা, সু-অনুষ্ঠিতাৎ - উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত, স্বভাব-নিয়তম্ - স্বভাব বিহিত, কর্ম - কর্ম, কুর্বন্ - করে, ন - না, আপ্নোতি - প্রাপ্ত হয়, কিল্বিষম্ - পাপ ॥৪৭॥


অনুবাদ:- উত্তম রূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা অসম্যক রূপে অনুষ্ঠিত স্বধর্মই শ্রেয়। মানুষ স্বভাব-বিহিত কর্ম করে কোন পাপ প্রাপ্ত হয় না।



শ্লোক:48:

সহজং কর্ম কৌন্তেয় সদোষমপি ন ত্যজেৎ ।

সর্বারম্ভা হি দোষেণ ধুমেনাগ্নিরিবাবৃতাঃ ॥৪৮॥


সহজম্ - সহজাত, কর্ম - কর্ম, কৌন্তেয় - হে কুন্তীপুত্র, সদোষম্ - দোষযুক্ত, অপি - ও, ন - না, ত্যজেৎ - ত‍্যাগ করা উচিত।  সর্ব-আরম্ভাঃ - সমস্ত কর্ম, হি - যেহেতু, দোষেণ - দোষের দ্বারা, ধুমেন - ধূমের দ্বারা, অগ্নিঃ - অগ্নি, ইব - যেমন, আবৃতাঃ - আবৃত ॥৪৮॥


অনুবাদ:- হে কৌন্তেয়! সহজাত কর্ম দোষযুক্ত হলেও ত্যাগ করা উচিত নয়। যেহেতু অগ্নি যেমন ধূমের দ্বারা আবৃত থাকে, তেমনই সমস্ত কর্মই দোষের দ্বারা আবৃত থাকে।



শ্লোক:49:

অসক্তবুদ্ধিঃ সর্বত্র জিতাত্মা বিগতস্পৃহঃ ।

নৈষ্কর্ম্যসিদ্ধিং পরমাং সন্ন্যাসেনাধিগচ্ছতি

॥৪৯॥


অসক্তবুদ্ধিঃ - আসক্তিশূণ্য বুদ্ধি, সর্বত্র - সর্বত্র, জিত-আত্মা - সংযতচিত্ত, বিগত-স্পৃহঃ - স্পৃহাশূন্য ব‍্যক্তি।

নৈষ্কর্ম্য-সিদ্ধিম্ - নৈষ্কর্মরূপ সিদ্ধি, পরমাম্ - পরম্, সন্ন্যাসেন - স্বরূপত কর্ম ত‍্যাগ দ্বারা, অধিগচ্ছতি - লাভ করেন ॥৪৯॥




অনুবাদ:- জড় বিষয়ে আসক্তিশূন্য বুদ্ধি,

সংযতচিত্ত ও ভোগস্পৃহাশূন্য ব্যক্তি স্বরূপত কর্ম ত্যাগপূর্বক নৈষ্কর্মরূপ পরম সিদ্ধি লাভ করেন।



শ্লোক:50:

সিদ্ধিং প্রাপ্তো যথা ব্রহ্ম তথাপ্নোতি নিবোধ মে ।

সমাসেনৈব কৌন্তেয় নিষ্ঠা জ্ঞানস্য যা পরা

॥৫০॥



সিদ্ধিম—সিদ্ধ, প্রাপ্ত - লাভ করে, যথা – যেভাবে, ব্ৰহ্ম-ব্রহ্মকে, তথা - তা, আপ্নোতি - লাভ করেন, নিবোধ— শ্রবণ কর, মে - আমার কাছে, সমাসেন— সংক্ষেপে; এব—অবশ্যই, কৌন্তেয়—হে কুন্তীপুত্র, নিষ্ঠা - স্তর জ্ঞানস্য-জ্ঞানের যা - যা, পরা—অপ্রাকৃত।।৫০।।


অনুবাদ:- হে কৌন্তেয়! নৈষ্কর্ম সিদ্ধি লাভ করে জীব যেভাবে জ্ঞানের পরানিষ্ঠারূপ ব্রহ্মকে লাভ করেন, তা আমার কাছে সংক্ষেপে শ্রবণ কর।



শ্লোক:51:

বুদ্ধ্যা বিশুদ্ধয়া যুক্তো ধৃত্যাত্মানং নিয়ম্য চ ।

শব্দাদীন্ বিষয়াংস্ত্যক্ত্বা রাগদ্বেষৌ ব্যুদস্য চ ॥৫১॥

*

বুদ্ধ্যা, বিশুদ্ধয়া, যুক্তঃ, ধৃত্যা, আত্মানম্, নিয়ম্য, চ, শব্দাদীন্, বিষয়ান্, ত্যক্ত্বা, রাগদ্বেষৌ, ব্যুদস্য, চ ॥৫১॥

শ্লোক:52:

বিবিক্তসেবী লঘ্বাশী যতবাক্কায়মানসঃ ।

ধ্যানযোগপরো নিত্যং বৈরাগ্যং সমুপাশ্রিতঃ ॥৫২॥

*

বিবিক্ত-সেবী, লঘু-আশী, যত-বাক্-কায়-

মানসঃ, ধ্যানযোগ-পরঃ, নিত্যম্, বৈরাগ্যম্, সং-উপাশ্রিতঃ ॥৫২॥

শ্লোক:53:

অহঙ্কারং বলং দর্পং কামং ক্রোধং পরিগ্রহম্ ।

বিমুচ্য নির্মমঃ শান্তো ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে॥৫৩॥

*

অহঙ্কারম্, বলম্, দর্পম্, কামম্, ক্রোধম্, পরিগ্রহম্, বিমুচ্য, নির্মমঃ, শান্তঃ, ব্রহ্মভূয়ায়, কল্পতে ॥৫৩॥


বুদ্ধ্যা-বুদ্ধির দ্বারা, বিশুদ্ধ- বিশুদ্ধ, যুক্ত— যুক্ত হয়ে, ধৃত্যা—ধৃতির দ্বারা, আত্মানম্—মনকে, নিয়ম্য— নিয়ন্ত্রিত করে, চ–ও।

শব্দাদীন—শব্দ আদি; বিষয়াম্—–ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহ, ত্যক্ত্বা—পরিত্যাগ করে, রাগ - আসক্তি; দ্বেষৌ— দ্বেষ, ব্যূদস্য— বর্জন করে, চ–ও।।৫১।।


বিবিক্তসেৰী–নির্জন স্থানে বাস করে; লঘুাশী - অল্প আহার করে, যতবাক্ বাক্ সংযত করে, কায়—দেহ; মানস - মন; ধ্যানযোগপরঃ — ধ্যানযোগে যুক্ত হয়ে, নিত্যম্- সর্বদা, বৈরাগ্যম্-বৈরাগ্য; সমূপাশ্রিতঃ—আশ্রয় গ্রহণ করে।।৫২।।


অহঙ্কারম্ অহঙ্কার, বলম্ - বল, দর্পম্ — দর্প: কামম্ কাম, ক্রোধম্ – ক্রোধ, পরিগ্রহম্― জড় বিষয় গ্রহণ, বিমুচ্য—মুক্ত হয়ে, নির্মমঃ — মমতাশূন্য, শান্তঃ - শান্ত, ব্রহ্মভূয়ায় ব্রহ্ম-অনুভবে, কল্পতে - সমর্থ হন।।৫৩।।


অনুবাদ:- বিশুদ্ধ বুদ্ধিযুক্ত হয়ে মনকে ধৃতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত করে, শব্দ আদি ইন্দ্রিয় বিষয় সমূহ পরিত্যাগ করে, রাগ ও দ্বেষ বর্জন করে, নির্জন স্থানে বাস করে, অল্প আহার করে, দেহ, মন ও বাক্ সংযত করে, সর্বদা ধ্যানযোগে যুক্ত হয়ে বৈরাগ্য আশ্রয় করে, অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম, ক্রোধ, পরিগ্রহ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে, মমত্ব বোধশূন্য শান্ত পুরুষ ব্রহ্ম-অনুভবে সমর্থ হন।



শ্লোক:54:

ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি ।

সমঃ সর্বেষু ভূতেষু মদ্ভক্তিং লভতে পরাম্ ॥৫৪॥


শব্দার্থঃ

ব্রহ্মভূতঃ—ব্রহ্মাভাব প্রাপ্ত, প্রসন্নাত্মা- প্রসন্নচিও, ন - না, শোচতি—শোক করেন; ন—না: কাঙ্ক্ষতি—আকাঙ্ক্ষা করেন, সমঃ — সমদর্শী; সর্বেষু—সমস্ত ,ভূতেষু— প্রাণীর প্রতি, মদ্ভক্তিম্ - আমার ভক্তি, লভতে - লাভ করেন; পরাম্ - পরা।


অনুবাদ:- ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত প্রসন্নচিত্ত ব্যক্তি কোন কিছুর জন্য শোক করেন না বা আকাঙ্ক্ষা করেন না৷ তিনি সমস্ত প্রাণীর প্রতি সমদর্শী হয়ে আমার পরা ভক্তি লাভ করেন।



শ্লোক:55:

ভক্ত্যা মামভিজানাতি যাবান্ যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ।

ততো মাং তত্ত্বতো জ্ঞাত্বা বিশতে তদনন্তরম্

॥৫৫॥



শব্দার্থ:

ভক্ত্যা—শুদ্ধ ভক্তির দ্বারা, মাম্ - আমাকে, অভিজানাতি - জানতে পারেন; যাবান—যে রকম; যঃ চ অস্মি—স্বরূপত আমি হই, তত্ত্বতঃ— যথার্থরূপে, অতঃ - তারপর, মাম্—আমাকে, তত্ত্বতঃ - যথার্থরূপে, জ্ঞাত্বা- জেনে; বিশতে - প্রবেশ করতে পারেন: তদনন্তরম্—তার পরে।


অনুবাদ:- ভক্তির দ্বারা কেবল স্বরূপত আমি যে রকম হই, সেরূপে আমাকে কেউ তত্ত্বত জানতে পারেন৷ এই প্রকার ভক্তির দ্বারা আমাকে তত্ত্বত জেনে, তার পরে তিনি আমার ধামে প্রবেশ করতে পারেন।



শ্লোক:56:

সর্বকর্মাণ্যপি সদা কুর্বাণো মদ্ ব্যপাশ্রয়ঃ ।

মৎপ্রসাদাদবাপ্নোতি শাশ্বতং পদমব্যয়ম্ ॥৫৬॥

*

সর্ব-কর্মাণি, অপি, সদা, কুর্বাণঃ, মদ্-ব্যপাশ্রয়ঃ।

মৎ-প্রসাদাৎ, অবাপ্নোতি, শাশ্বতম্, পদম্,

অব্যয়ম্ ॥৫৬॥


সর্ব—সমস্ত; কর্মাণি—কর্ম, অপি - ও, সদা - সর্বদা, কুর্বাণঃ– অনুষ্ঠান করে; মৎ— আমার, ব্যপাশ্রয়ঃ - আশ্রয়ে, মৎ— আমার, প্রসাদাৎ-প্রসাদে, অবাপ্নোতি - লাভ করেন, শাশ্বতম্ —নিত্য, পদম্ – ধাম, অব্যয়ম্ – অব্যয়।


অনুবাদ:- আমার শুদ্ধ ভক্ত সর্বদা সমস্ত কর্ম

করেও আমার প্রসাদে নিত্য অব্যয় ধাম লাভ করেন।



শ্লোক:57:

চেতসা সর্বকর্মাণি ময়ি সংনস্য মৎপরঃ ।

বুদ্ধিযোগমুপাশ্রিত্য মচ্চিত্তঃ সততং ভব ॥৫৭॥

*

চেতসা, সর্বকর্মাণি, ময়ি, সংনস্য, মৎপরঃ,

বুদ্ধিযোগম্, উপাশ্রিত্য, মৎ-চিত্তঃ, সততম্, ভব ॥৫৭॥


চেতসা—বুদ্ধির দ্বারা, সর্বকর্মাণি- সমস্ত কর্ম, ময়ি - আমাতে, সংন্যস্য - অর্পণ করে, মৎপর:—মৎপরায়ণ হয়ে, বুদ্ধিযোগম্ – ভগবদ্ভক্তি, উপাশ্রিত্য - আশ্রয় গ্রহণ পূর্বক, মৎ-চিত্ত—মদ্‌গতচিত্ত, সততম্—সর্বদাই, ভব—হও।


অনুবাদ:- তুমি বুদ্ধির দ্বারা সমস্ত কর্ম আমাতে অর্পণ করে, মৎপরায়্ণ হয়ে, বুদ্ধিযোগের আশ্রয় গ্রহণপূর্বক সর্বদাই মদ্ গতচিত্ত হও।



শ্লোক:58:

মচ্চিত্তঃ সর্বদুর্গাণি মৎপ্রসাদাত্তরিষ্যসি ।

অথ চেত্বমহঙ্কারান্ন শ্রোষ্যসি বিনঙ্ক্ষ্যসি ॥৫৮॥


মৎ-চিত্তঃ, সর্বদুর্গাণি, মৎ-প্রসাদাৎ, তরিষ্যসি।

অথ, চেৎ, ত্বম্, অঙ্কারাৎ, ন, শ্রোষ্যসি,বিনঙ্ক্ষ্যসি ॥৫৮॥


মৎ-চিত্ত—মদ্‌গতচিত্ত হয়ে, সর্ব—সমস্ত, দুর্গাণি—প্রতিবন্ধক, মৎ— আমার; প্রসাদাৎ —প্রসাদে, তরিষ‍্যসি—উত্তীর্ণ হবে; অথ— কিন্তু, চেৎ – যদি, ত্বম্ — তুমি; অহঙ্কারাৎ—অহঙ্কার বশত;ন–না,শ্রোষ্যসি—শোন বিনঙ্ক্ষ‍্যসি—বিনষ্ট হবে।   


অনুবাদ:- এভাবেই মদ্ গতচিত্ত হলে তুমি আমার প্রসাদে সমস্ত প্রতিবন্ধক থেকে উত্তীর্ণ হবে। কিন্তু তুমি যদি অহঙ্কার-বশত আমার কথা না শোন, তা হলে বিনষ্ট হবে।



শ্লোক:59:

যদহঙ্কারমাশ্রিত্য ন যোৎস্য ইতি মন্যসে ।

মিথ্যৈষ ব্যবসায়স্তে প্রকৃতিস্ত্বাং নিযোক্ষ্যতি

॥৫৯॥



যৎ—যদি; অহঙ্কারম্ —অহঙ্কারকে, আশ্রিত্য– আশ্রয় করে, ন যোস্যে - যুদ্ধ করব না, ইতি—এরূপ, মন্যসে—মনে কর, মিথ্যা এষঃ - মিথ্যা হবে; ব্যবসায়ঃ - সংকল্প:     

তে—তোমার, প্রকৃতিঃ - প্রকৃতি, ত্বাম্— তোমাকে, নিযোক্ষ্যতি— নিযুক্ত করবে।।৫৯।।


অনুবাদ:- যদি অহঙ্কারকে আশ্রয় করে 'যুদ্ধ করব না' এরূপ মনে কর, তা হলে তোমার

সংকল্প মিথ্যাই হবে৷ কারণ, তোমার প্রকৃতি তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করবে।



শ্লোক:60:

স্বভাবজেন কৌন্তেয় নিবদ্ধঃ স্বেন কর্মণা ।

কর্তুং নেচ্ছসি যন্মোহাৎ করিষ্যস্যবশোহপি তৎ ॥৬০॥


স্বভাবজেন, কৌন্তেয়, নিবদ্ধঃ, স্বেন, কর্মণা,

কর্তুম্, ন, ইচ্ছসি, যৎ, মোহাৎ, করিষ্যসি, অবশঃ, অপি, তৎ ॥৬০॥


স্বভাবজেন—স্বভাবজাত, কৌন্তেয়–হে কুম্ভীপুত্র; নিবদ্ধঃ– বশবর্তী হয়ে, স্বেন— তোমার নিজে, কর্মণা—কর্মের দ্বারা, কর্তুম্ করতে, ন–না, ইচ্ছসি—ইচ্ছা করছ, যৎ—যা, মোহাৎ—মোহবশত, করিষ্যসি–করবে; অবশঃ — অবশভাবে অপি— যদিও, তৎ - তা।


অনুবাদ:- হে কৌন্তেয় ! মোহবশত তুমি এখন যুদ্ধ করতে ইচ্ছা করছ না, কিন্ত্ত তোমার নিজের স্বভাবজাত কর্মের দ্বারা বশবর্তী হয়ে অবশভাবে তুমি তা করতে প্রবৃত্ত হবে।



শ্লোক:61:

ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি ।

ভ্রাময়ন্ সর্বভূতানি যন্ত্রারূঢ়ানি মায়য়া ॥৬১॥


শব্দার্থঃ

ঈশ্বরঃ—পরমেশ্বর ভগবান; সর্বভূতানাম্ — সমস্ত জীবের; হৃদ্দেশে – হৃদয়ে; অর্জুন—হে অর্জুন, তিষ্ঠতি — অবস্থান করছেন, ভ্রাময়ন— ভ্রমণ করান; সর্বভূতানি - সমস্ত জীবকে; যন্ত্র - যন্ত্রে, আরূঢ়ানি—আরোহণ করিয়ে; মায়য়া — মায়ার দ্বারা।


অনুবাদ:- হে অর্জুন! পরমেশ্বর ভগবান সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থান করছেন এবং সমস্ত জীবকে দেহরূপ যন্ত্রে আহরণ করিয়ে মায়ার দ্বারা ভ্রমণ করান।



শ্লোক:62:

তমেব শরণং গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত ।

তৎপ্রসাদাৎ পরাং শান্তিং স্থানং প্রাপ্স্যসি শাশ্বতম্ ॥৬২॥


তম্— তার, এব - অবশ্যই, শরণম্ - শরণ; গচ্ছ—গ্রহণ কর; সর্বভাবেন— সর্বতোভাবে, ভারত-হে ভারত। 

তৎপ্রসাদাৎ— তার প্রসাদে, পরাম্ - পরা; শান্তিম্ —শান্তি, স্থানম্ – ধাম, প্রাপ্স‍্যসি- প্রাপ্ত হবে; শাশ্বতম্ – নিত্য।


অনুবাদ:- হে ভারত! সর্বতোভাবে তাঁর শরণাগত হও। তাঁর প্রসাদে তুমি পরা শান্তি এবং নিত্য ধাম প্রাপ্ত হবে।



শ্লোক:63:

ইতি তে জ্ঞানমাখ্যাতং গুহ্যাদ্ গুহ্যতরং ময়া ।

বিমৃশ্যৈতদশেষেণ যথেচ্ছসি তথা কুরু ॥৬৩॥


ইতি, তে, জ্ঞানম্, আখ্যাতম্, গুহ্যাৎ, গুহ্যতরম্, ময়া। 

বিমৃশ্য, এতৎ, অশেষেণ, যথা, ইচ্ছসি, তথা, কুরু ॥৬৩॥


ইতি—এভাবেই, তে– তোমাকে, জ্ঞানম্ - জ্ঞান, আখ্যাতম্ - বর্ণিত হল, গুহ‍্যাৎ - গুহ‍্য থেকে, গুহ‍্যতরম্ – গুহ‍্যতর, ময়া - আমার দ্বারা, বিমৃশ্য— বিবেচনা করে; এতৎ—এটি; অশেষেণ— সম্পূর্ণরূপে, যথা— যা, ইচ্ছসি—ইচ্ছা কর, তথা—তা; কুরু - কর।


অনুবাদ:- এভাবেই আমি তোমাকে গুহ্য থেকে গুহ্যতর জ্ঞান বর্ণনা করলাম। তুমি তা সম্পূর্ণ রূপে বিচার করে যা ইচ্ছা হয় তাই কর।



শ্লোক:64:

সর্বগুহ্যতমং ভূয়ঃ শৃণু মে পরমং বচঃ ।

ইষ্টোহসি মে দৃঢ়মিতি ততো বক্ষ্যামি তে হিতম্ ॥৬৪॥



সর্বগুহ্যতমম্ — সবচেয়ে গোপনীয়, ভূয়ঃ— পুনরায়, শৃণু–শ্রবণ কর; মে - আমার থেকে, পরমম্― পরম, বচঃ– উপদেশ।

ইষ্টঃ— প্রিয়, অসি—হও; মে— আমার; দৃঢ়ম্—অতিশয়; ইতি—এভাবে; ততঃ—সেই হেতু, বক্ষ্যামি - বলছি, তে— তোমার; হিতম্ –হিতের জন্য।।৬৪।।


অনুবাদ:- তুমি আমার কাছ থেকে সবচেয়ে

গোপনীয় পরম উপদেশ শ্রবণ কর। যেহেতু তুমি আমার অতিশয় প্রিয়, সেই হেতু তোমার হিতের জন্যই আমি বলছি৷



শ্লোক:65:

মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদ্ যাজী মাং নমস্কুরু ।

মামেবৈষ্যসি সত্যং তে প্রতিজানে প্রিয়োহসি মে ॥৬৫॥

*

মৎ-মনা, ভব, মৎ-ভক্তঃ, মৎ-যাজী, মাম্, নমঃ-কুরু, মাম্, এব, এষ্যসি, সত্যম্, তে,

প্রতিজানে, প্রিয়ঃ, অসি, মে ॥৬৫॥


মন্মনাঃ—মদ্‌গতচিত্ত; ভব–হও; মৎ ভক্তঃ– আমার ভক্ত, মৎ যাজী—আমার পুজক; মাম্—আমাকে, নমস্কুর- নমস্কার কর, মাম্— আমাকে, এব—অবশ্যই; এষ‍্যসি - প্রাপ্ত হবে; সত্যম্—সত্যই, তে– তোমার কাছে, প্রতিজানে - প্রতিজ্ঞা করছি, প্রিয়ঃ – প্রিয় অসি—তুমি হও, মে - আমার।


অনুবাদ:- তুমি আমাতে চিত্ত অর্পণ কর, আমার ভক্ত হও, আমার পূজা কর এবং আমাকে নমস্কার কর। তা হলে তুমি আমাকে অবশ্যই প্রাপ্ত হবে৷ এই জন্য আমি তোমার কাছে সত্যই প্রতিজ্ঞা করছি, যেহেতু তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়।



শ্লোক:66:

সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ ।

অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ॥৬৬॥


সর্বধর্মান—সর্ব প্রকার ধর্ম, পরিত্যজ্য— পরিত্যাগ করে, মাম্, আমাকে, একম্ – কেবল; শরণম্ —শরণাগত; ব্রজ–হও, অহম্ – আমি, ত্বাম্— তোমাকে, সর্ব - সমস্ত: পাপেভ্যঃ—পাপ থেকে; মোক্ষয়িষ্যামি— মুক্ত করব; মা - করো না, শুচঃ - শোক।।৬৬।।


অনুবাদ:- সর্ব প্রকার ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরণাগত হও। আমি তোমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করব। তুমি শোক করো না।


শ্লোক:67:

ইদং তে নাতপস্কায় নাভক্তায় কদাচন ।

ন চাশুশ্রূষবে বাচ্যং ন চ মাং যোহভ্যসূয়তি ॥৬৭॥



ইদম্—এই; তে—তোমা কর্তৃক, ন - নয়, অতপস্কায়— সংযমহীন ব্যক্তিকে; ন— নয়: অভক্তায়—অভক্তকে, কদাচন—কখনও নয়; চ–ও, অশুশ্রুষবে– পরিচর্যাহীনকে; বাচ্যম্ - বলা উচিত, ন - নয়, চ– মাম্ - আমার প্রতি, যঃ —যে, অভ্যসূয়তি—বিদ্বেষ ভাবাপন্ন।।৬৭।।


অনুবাদ:- যারা সংযমহীন, অভক্ত, পরিচর্যাহীন এবং আমার প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন, তাদেরকে কখনও এই গোপনীয় জ্ঞান বলা উচিত নয়।


শ্লোক:68:

যঃ ইদং পরমং গুহ্যং মদ্ভক্তেষ্বভিধাস্যতি ।

ভক্তিং ময়ি পরাং কৃত্বা মামেবৈষ্যত্যসংশয়ঃ

॥৬৮॥


যঃ, ইদম্, পরমম্, গুহ্যম্, মৎ-ভক্তেষু, অভিধাস্যতি।

ভক্তিম্, ময়ি, পরাম্, কৃত্বা, মাম্, এব, এষ্যতি, অসংশয়ঃ ॥৬৮॥


যঃ—যিনি; ইদম্—এই, পরমম্ – পরম,  গুহ‍্যম্— গোপনীয়, মৎ— আমার, ভক্তেষু—ভক্তদের মধ্যে; অভিধাস্যতি— উপদেশ করেন; ভক্তিম্―ভক্তি; ময়ি— আমার প্রতি, পরাম্ - পরা, কৃত্বা - করে, মাম্ - আমার কাছে, এব—অবশ্যই: এষ্যতি—আসবেন; অসংশয়ঃ - নিঃসংশয়ে।


অনুবাদ:- যিনি আমার ভক্তদের মধ্যে এই পরম গোপনীয় গীতাবাক্য উপদেশ করেন,

তিনি অবশ্যই পরা ভক্তি লাভ করে নিঃসংশয়ে আমার কাছে ফিরে আসবেন।



শ্লোক:69:

ন চ তস্মান্মনুষ্যেষু কশ্চিন্মে প্রিয়কৃত্তমঃ ।

ভবিতা ন চ মে তস্মাদন্যঃ প্রিয়তরো ভুবি ।।৬৯॥


ন, চ, তস্মাৎ, মনুষ্যেষু, কশ্চিৎ, মে, প্রিয়কৃৎ-তমঃ।

ভবিতা, ন, চ, মে, তস্মাৎ, অন্যঃ, প্রিয়তরঃ, ভুবি ।।৬৯॥


ন—নেই: চ—এবং; তস্মাৎ— তার থেকে, মনুষ্যেষু—মানুষদের মধ্যে, কশ্চিৎ— কেউ মে - আমার, প্রিয়কৃত্তমঃ- অধিক প্রিয়কারী, ভবিতা – হবে, ন - না, চ - এবং, মে—আমার, তস্মাৎ—তাঁর থেকে, অন্যঃ - অন‍্য, প্রিয়তরঃ - প্রিয়তর, ভূবি—এই পৃথিবীতে।


অনুবাদ:- এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে তাঁর থেকে অধিক প্রিয়কারী আমার কেউ নেই এবং তাঁর থেকে অন্য কেউ আমার প্রিয়্তর হবে না।



শ্লোক:70:

অধ্যেষ্যতে চ য ইমং ধর্ম্যং সংবাদমাবয়োঃ ।

জ্ঞানযজ্ঞেন তেনাহমিষ্টঃ স্যামিতি মে মতিঃ ॥৭০॥


অধ্যেষ্যতে, চ, য, ইমম্, ধর্ম্যম্, সংবাদম্, আবয়োঃ, জ্ঞানযজ্ঞেন, তেন, অহম্, ইষ্টঃ, স্যাম, ইতি, মে, মতিঃ ॥৭০॥


অধ্যেষ‍্যতে - অধ্যয়ন করবেন; চ–ও, যঃ — যিনি; 'ইমম্—এই, ধৰ্ম্যম্ – পবিত্র, সংবাদম্ - কথোপকথন; আবয়োঃ– আমাদের উভয়ের, জ্ঞান-জ্ঞান; যজ্ঞেন - যজ্ঞের দ্বারা, তেন—তার, অহম্ – আমি; ইষ্টঃ— পূজিত: স্যাম্― হব, ইতি—এই, মে—আমার; মতিঃ— অভিমত।


অনুবাদ:- আর যিনি আমাদের এই পবিত্র

কথোপকথন অধ্যয়ন করবেন, তাঁর সেই জ্ঞান যজ্ঞের দ্বারা আমি পূজিত হব। এই আমার অভিমত ৷



শ্লোক:71:

শ্রদ্ধাবাননসূয়শ্চ শৃণুয়াদপি যো নরঃ ।

সোহপি মুক্তঃ শুভাঁল্লোকান্ প্রাপ্নুয়াৎ পুণ্যকর্মণাম্ ॥৭১॥

*

শ্রদ্ধাবান্ - শ্রদ্ধাবান, অনসূয়ঃ চ - ও অসূয়া রহিত, শৃণুয়াৎ - শ্রবণ করেন, অপি - অবশ্যই, যঃ - যে, নরঃ - মানুষ।

সঃ অপি - তিনি ও, মুক্তঃ - মুক্ত হয়ে, শুভাঁন্ - শুভ, লোকান্ - লোকসমূহ, প্রাপ্নুয়াৎ - লাভ করেন, পুণ্যকর্মণাম্ - পুণ‍্যকর্মকারীদের ॥৭১॥


অনুবাদ:-শ্রদ্ধাবান ও অসূয়া-রহিত যে মানুষ গীতা শ্রবণ করেন, তিনিও পাপমুক্ত হয়ে পুণ্য কর্মকারীদের শুভ লোকসমূহ লাভ করেন।



শ্লোক:72:

কচ্চিদেতৎ শ্রুতং পার্থ ত্বয়ৈকাগ্রেণ চেতসা ।

কচ্চিদজ্ঞানসম্মোহঃ প্রণষ্টস্তে ধনঞ্জয় ॥৭২॥


কচ্চিৎ - হয়েছে কি, এতৎ - এই, শ্রুতম্ - শ্রুত, পার্থ - হে পৃথাপুত্র, ত্বয়া - তোমার দ্বারা, একাগ্রেণ - একাগ্র,

চেতসা - চিত্তে, কচ্চিৎ - হয়েছে কি, অজ্ঞান-সম্মোহঃ - অজ্ঞান জনিত মোহ, প্রণষ্টঃ - বিদুরিত, তে - তোমার,

ধনঞ্জয় - হে ধনঞ্জয় ॥৭২॥


অনুবাদ:-হে পার্থ ! হে ধনঞ্জয় ! তুমি একাগ্রচিত্তে এই গীতা জ্ঞান শ্রবণ করেছ কি? তোমার অজ্ঞান-জনিত মোহ বিদূরিত হয়েছে কি?



শ্লোক:73:

অর্জুন উবাচঃ

নষ্টো মোহঃ স্মৃতির্লব্ধা ত্বৎপ্রসাদান্ময়াচ্যুত ।

স্থিতোহস্মি গতসন্দেহঃ করিষ্যে বচনং তব ॥৭৩॥


নষ্টঃ - দুর হয়েছে, মোহঃ - মোহ, স্মৃতিঃ - স্মৃতি, লব্ধা - লাভ করেছি, ত্বৎপ্রসাদাৎ - তোমার কৃপায়, ময়া - আমার দ্বারা, অচ্যুত - হে অচ‍্যুত।

স্থিতঃ - যথাজ্ঞানে অবস্থিত, অস্মি - হয়েছি, গত- দূর হয়েছে, সন্দেহঃ - সমস্ত সংসয়, করিষ্যে - আমি পালন করব, বচনম্ - আদেশ, তব - তোমার ॥৭৩॥


অনুবাদ:- অর্জুন বললেন- হে অচ্যুত ! তোমার কৃপায় আমার মোহ দূর হয়েছে এবং আমি স্মৃতি লাভ করেছি৷ আমার সমস্ত সন্দেহ দূর হয়েছে এবং য্থাজ্ঞানে অবস্থিত হয়েছি৷ এখন আমি তোমার আদেশ পালন করব।



শ্লোক:74:

সঞ্জয় উবাচঃ

ইত্যহং বাসুদেবস্য পার্থস্য চ মহাত্মনঃ ।

সংবাদমিমমশ্রৌষমদ্ভুতং রোমহর্ষণম্ ॥৭৪॥


ইতি - এভাবেই, অহম্ - আমি, বাসুদেবস্য - শ্রীকৃষ্ণের, পার্থস্য - অর্জুনের, চ - ও, মহাত্মনঃ - দুই মহাত্মার।

সংবাদম্ - সংবাদ, ইমম্ - এই, অশ্রৌষম্ - শ্রবণ করেছিলাম , অদ্ভুতম্ - অদ্ভুত, রোমহর্ষণম্ - রোমাঞ্চকর ॥৭৪॥


অনুবাদ:- সঞ্জয় বললেন- এভাবেই আমি কৃষ্ণ ও অর্জুন দুই মহাত্মার এই অদ্ভুত রোমাঞ্চকর সংবাদ শ্রবণ করেছিলাম।



শ্লোক:75:

ব্যাসপ্রসাদাচ্ছ্রুতবানেতদ্ গুহ্যমহং পরম্ ।

যোগং যোগেশ্বরাৎ কৃষ্ণাৎসাক্ষাৎকথয়তঃ স্বয়ম্ ॥৭৫॥


ব্যাস-প্রসাদাৎ - ব‍্যাসদেবের কৃপায়, শ্রুতবান্ - শ্রবণ করেছি, এতৎ - এই, গুহ্যম্ - গোপনীয়, অহম্ - আমি, পরম্ - পরম।

যোগম্ - যোগ, যোগ-ঈশ্বরাৎ - যোগেশ্বর, কৃষ্ণাৎ - শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে, সাক্ষাৎ - সাক্ষাৎ, কথয়তঃ - বর্ণনাকারী, স্বয়ম্ - স্বয়ং ॥৭৫॥


অনুবাদ:- ব্যাসদেবের কৃপায়, আমি এই পরম গোপনীয় যোগ সাক্ষাৎ বর্ণনাকারী স্বয়ং যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে শ্রবণ করেছি।



শ্লোক:76:

রাজন্ সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য সংবাদমিমমদ্ভুতম্ ।

কেশবার্জুনয়োঃ পুণ্যং হৃষ্যামি চ মুহুর্মুহুঃ ॥৭৬॥


রাজন্ - , সংস্মৃত্য, সংস্মৃত্য, সংবাদম্, ইমম্,

অদ্ভুতম্ , কেশব-অর্জুনয়োঃ, পুণ্যম্, হৃষ্যামি, চ, মুহু-মুহুঃ ॥৭৬॥


অনুবাদ:- হে রাজন্ ! শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের এই পুণ্যজনক অদ্ভুত সংবাদ স্বরণ করতে করতে আমি বারংবার রোমাঞ্চিত হচ্ছি।



শ্লোক:77:

তচ্চ সংস্মৃত্য সংস্মৃত্য রূপমত্যদ্ভুতং হরেঃ ।

বিস্ময়ো মে মহান্ রাজন্ হৃষ্যামি চ পুনঃ পুনঃ ॥৭৭॥


তৎ - তা, চ - ও, সংস্মৃত্য - স্মরণ করে, সংস্মৃত্য - স্মরণ করে, রূপম্ - রূপ, অতি - অত্যন্ত, অদ্ভুতম্ - অদ্ভুত,  হরেঃ - শ্রীকৃষ্ণের।

বিস্ময়ঃ - বিস্ময়, মে - আমার, মহান্ - অতিশয়, রাজন্ - হে রাজন, হৃষ্যামি - হরষিত হচ্ছি, চ, পুনঃ পুনঃ - বারংবার ॥৭৭॥


অনুবাদ:- হে রাজন্! শ্রীকৃষ্ণের সেই অত্যন্ত অদ্ভুত রূপ স্মরণ করতে করতে আমি অতিশয় বিস্ময়াভিভূত হচ্ছি এবং বারংবার হরষিত হচ্ছি।



শ্লোক:78:

যত্র যোগেশ্বরঃ কৃষ্ণো যত্র পার্থো ধনুর্ধরঃ ।

তত্র শ্রীর্বিজয়ো ভূতির্ধ্রুবা নীতির্মতির্মম ॥৭৮॥


যত্র - যেখানে, যোগেশ্বরঃ - যোগেশ্বর, কৃষ্ণঃ - শ্রীকৃষ্ণ, যত্র - যেখানে, পার্থঃ - পৃথাপুত্র, ধনুর্ধরঃ - ধনুর্ধর, তত্র - সেখানে, শ্রীঃ - ঐশ্বর্য, বিজয়ঃ - বিজয়, ভূতিঃ - অসাধারন শক্তি, ধ্রুবা - নিশ্চিতরূপে, নীতি - নীতি, মতিঃ - অভিমত, মম - আমার ॥৭৮॥


অনুবাদ:- যেখানে যোগেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এবং

যেখানে ধনুর্ধর পার্থ, সেখানেই নিশ্চিতভাবে শ্রী, বিজয়, অসাধারণ শক্তি ও নীতি বর্তমান থাকে৷ সেটিই আমার অভিমত।



**

"ওঁ তৎসদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে 'মোক্ষযোগো' নামক অষ্টাদশোঽধ্যায়ঃ সমাপ্তম্।"




💐💐💐💐💐

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.