Header Ads


ষোড়শ অধ্যায় - দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগ যোগ


                 "ওঁ তৎ সৎ"

   "ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়ঃ।"

           -:শ্রীমদ্ভগবদ গীতা:-

             *ষোড়শ অধ্যায়*

  "।দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগ যোগ।"

  (শ্লোক, শব্দ, বঙ্গানুবাদ ও সারাংশ)


শ্লোক:1:

শ্রীভগবানুবাচঃ

অভয়ং সত্ত্বসংশুদ্ধিঃ র্জ্ঞানযোগব্যবস্থিতিঃ ।

দানং দমশ্চ যজ্ঞশ্চ স্বাধ্যায়স্তপ আর্জবম্ ॥১॥. 



শব্দার্থঃ 

অভয়ম্ - ভয়শূন‍্যতা, সত্ত্বসংশুদ্ধিঃ - সত্ত্বার পবিত্রতা, জ্ঞান - জ্ঞান, যোগ- যোগে, ব্যবস্থিতিঃ - অবস্থিতি।

দানম্ - দান, দমঃ - মনঃসংযোগ, চ - এবং, যজ্ঞঃ যজ্ঞ, চ - এবং, স্বাধ্যায়ঃ - বৈদিক শাস্ত্র অধ‍্যয়ন, তপঃ - তপশ্চর্যা, আর্জবম্ - সরলতা॥১॥


শ্লোক:2:

অহিংসা সত্যমক্রোধঃ ত‍্যাগঃ শান্তিরপৈশুনম্ ।

দয়া ভূতেষ্বলোলুপ্তং মার্দবং হ্রীরচাপলম্ ॥২॥



শব্দার্থঃ 

অহিংসা - অহিংসা, সত্যম্ - সত‍্যবাদিতা, অক্রোধঃ - ক্রোধশূন‌তা, ত্যাগঃ - বৈরাগ্য, শান্তিঃ - প্রশান্তি, অপৈশুনম্ - অন‍্যের দোষ না দেখা।

দয়া - দয়া , ভূতেষু - সমস্ত জীবের প্রতি, অলোলুপ্তম্ - লোভহীনতা, মার্দবম্ - মৃদুতা,

হ্রীঃ - লজ্জা, অচাপলম্ - অচপলতা ॥২॥


শ্লোক:3:

তেজঃ ক্ষমা ধৃতিঃ শৌচম্ অদ্রোহো নাতিমানিতা ।

ভবন্তি সম্পদং দৈবীম্ অভিজাতস্য ভারত ॥৩॥



শব্দার্থঃ 

তেজঃ - তেজ, ক্ষমা - ক্ষমা, ধৃতিঃ - ধৈর্য্য, শৌচম্ - শুচিতা, অদ্রোহঃ - মাৎসর্যহীণতা, ন- না, অতি-মানিতা - অভিমান শুন‍্যতা।

ভবন্তি - হয়, সম্পদম্ - সম্পদ, দৈবীম্ - দিব‍্য, অভিজাতস্য - জাত ব‍্যক্তির, ভারত - হে ভারত ॥৩।।



অনুবাদ:- পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে ভারত! ভয়শূন্যতা, সত্তার পবিত্রতা, পারমার্থিক জ্ঞানের অনুশীলন, দান, আত্মসংযম, যজ্ঞ অনুষ্ঠান, বৈদিক শাস্ত্র অধ্যয়ন, তপশ্চর্যা, সরলতা, অহিংসা, সত্যবাদিতা, ক্রোধশূন্যতা, বৈরাগ্য, শান্তি, অন্যের দোষ দর্শন না করা, সমস্ত জীবে দয়া, লোভহীনতা, মৃদুতা, লজ্জা,

অচপলতা, তেজ, ক্ষমা, ধৈর্য, শৌচ, মাৎসর্য শূন্যতা, অভিমান শূন্যতা- এই সমস্ত গুণগুলি দিব্যভাব সমন্বিত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।




শ্লোক:4:

দম্ভো দর্পোহভিমানশ্চ ক্রোধঃ পারুষ্যমেব চ ।

অজ্ঞানং চাভিজাতস্য পার্থ সম্পাদমাসুরীম্ ॥৪॥



শব্দার্থঃ 

দম্ভ—দম্ভ, দর্পঃ—দৰ্প, অভিমান—গর্ব; চ–এবং, ক্রোধঃ —ক্রোধ, পারুষ‍্যম্—রূঢ়তা; এব—অবশ্যই; চ–এবং অজ্ঞানম্ - অজ্ঞান; চ–এবং, অভিজাতস্য—যার জন্ম হয়েছে তার; পার্থ-হে পৃথাপুত্র, সম্পদম - সম্পদ, আসুরীম—আসুরী।


অনুবাদ:- হে পার্থ ! দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ, রূঢ়তা ও অবিবেক- এই সমস্ত সম্পদ আসুরিক ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের লাভ হয়।


শ্লোক:5:

দৈবী সম্পদ্ বিমোক্ষায় নিবন্ধায়াসুরী মতা ।

মা শুচঃ সম্পদং দৈবীম্ অভিজাতোহসি পাণ্ডব ॥৫॥



শব্দার্থঃ 

দৈবী—দিব‍্য; সম্পদ্ - সম্পদ, বিমোক্ষায় - মুক্তির নিমিত্ত; নিবন্ধায়—বন্ধনের কারণ; আসুরী—আসুরিক সম্পদ; মতা—বিবেচিত হয়।

মা - করো না; শুচঃ - শোক; সম্পদম্– সম্পদ; দৈবীম্‌—দৈবী; অভিজাত — জাত; অসি— হয়েছ, পাণ্ডব—হে পাণ্ডুপুত্র।


অনুবাদ:- দৈবী সম্পদ মুক্তির অনুকূল, আর আসুরিক সম্পদ বন্ধনের কারণ বলে বিবেচিত হয়। হে পাণ্ডুপুত্র ! তুমি শোক করো না, কেন না তুমি দৈবী সম্পদ সহ জন্মগ্রহণ করেছ।


শ্লোক:6:

দ্বৌ ভূতসর্গৌ লোকেহস্মিন্ দৈব আসুর এব চ ৷

দৈবো বিস্তরশঃ প্রোক্ত আসুরং পার্থ মে শৃণু ॥৬॥



শব্দার্থঃ 

দ্বৌ—দুই প্রকার, ভূতসর্গৌ—সৃষ্ট জীব; লোকে—সংসারে; অস্মিন্—এই, দৈবঃ —দৈব; আসুরঃ—আসুরিক; এর—অবশ্যই চ–ও।

দৈবঃ– দৈব; বিস্তরশঃ - বিস্তারিতভাবে; প্রোক্তঃ - বলা হয়েছে; আসুরম্ - আসুরিক, পার্থ - হে পৃথাপুত্র, মে – আমার থেকে; শৃণু – শ্রবণ কর।


অনুবাদ:- হে পার্থ ! এই সংসারে দৈব ও আসুরিক- এই দুই প্রকার জীব সৃষ্টি হয়েছে৷ দৈব সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। এখন আমার থেকে অসুর প্রকৃতি সম্বন্ধে শ্রবণ কর।


শ্লোক:7:

প্রবৃত্তিং চ নিবৃত্তিং চ জনা ন বিদুরাসুরাঃ ৷

ন শৌচং নাপি চাচারো ন সত্যং তেষু বিদ্যতে ॥৭॥




শব্দার্থঃ

প্রবৃত্তিম — ধর্মে প্রবৃত্তি; চ—ও; নিবৃত্তিম্ অধর্ম থেকে নিবৃত্তি, চ–এবং, জনাঃ —ব্যক্তিরা; ন - না, বিদুঃ– জানে; আসুরাঃ - অসুর স্বভাব-বিশিষ্ট, ন - নেই; শৌচম্ – শৌচ; ন – নেই, অপি – ও, চ–এবং, আচারঃ - সদাচার; ন - নেই; সত্যম্—সত্যতা, তেষু – তাদের মধ্যে, বিদ্যতে বিদ্যমান।


অনুবাদ:- অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা ধর্ম বিষয়ে প্রবৃত্ত এবং অধর্ম বিষয় থেকে নিবৃত্ত হতে জানে না। তাদের মধ্যে শৌচ, সদাচার ও সত্যতা বিদ্যমান নেই।


শ্লোক:8:

অসত্যমপ্রতিষ্ঠং তে জগদাহুরনীশ্বরম্ ৷

অপরস্পরসম্ভূতং কিমন্যৎ কামহৈতুকম্ ॥৮॥



শব্দার্থঃ 

অসত্যম্ - মিথ‍্যা, অপ্রতিষ্ঠম্ - অবলম্বনশূন‍্য, তে - তারা, জগৎ - জগৎ, আহু - বলে, অনীশ্বরম্ - ঈশ্বরশূন‍্য।

অপরঃ-পর - পরস্পরের কাম থেকে, সম্ভূতম্ - উৎপন্ন, কিম্  অন্যৎ - অন‍্যকোন কারণ নেই, কামহৈতুকম্ - কেবল কামের জন্য॥৮॥


অনুবাদ:- আসুরিক স্বভাববিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলে যে, এই জগৎ মিথ্যা, অবলম্বনহীন ও ঈশ্বরশূন্য৷ কামবশত এই জগৎ উৎপন্ন হয়েছে এবং কাম ছাড়া আর অন্য কোন কারণ নেই।


শ্লোকঃ9

এতাং দৃষ্টিমবষ্টভ্য নষ্টাত্মানোহল্পবুদ্ধয়ঃ।

প্রভবন্ত‍্যুগ্রকর্মাণঃ ক্ষয়ায় জগতোহহিতাঃ।।৯।।



শব্দার্থঃ 

এতাম্ - এই প্রকার, দৃষ্টিম্ - সিদ্ধান্ত, অবষ্টভ্য - অবলম্বন করে, নষ্ট-আত্মানঃ - আত্মতত্ত্ব জ্ঞানহীন, অল্পবুদ্ধয়ঃ - অল্প-বুদ্ধিসম্পন্ন।

প্রভবন্তি - প্রভাব বিস্তারকরে, উগ্রকর্মাণঃ - উগ্রকর্মা, ক্ষয়ায় - ধ্বংসের জন্য, জগতঃ - জগতের, অহিতাঃ - অনিষ্টকারী অসুরেরা॥৯॥


অনুবাদ:- এই প্রকার সিন্ধান্ত অবলম্বন করে আত্মতত্ত্ব- জ্ঞানহীন, অল্প-বুদ্ধিসম্পন্ন, উগ্রকর্মা ও অনিষ্টকারী অসুরেরা জগৎ ধ্বংসকারী কার্যে প্রভাব বিস্তার করে।


শ্লোক:10:

কামমাশ্রিত্য দুঃষ্পূরং দম্ভমানমদান্বিতাঃ ৷

মোহাদ্ গৃহীত্বাসদ্ গ্রাহান্ প্রবর্তন্তে অশুচিব্রতাঃ ॥১০॥



শব্দার্থঃ 

কামম্ - কামকে, আশ্রিত্য - আশ্রয় করে, দুঃষ্পূরম্ - দুষ্পূরণীয়, দম্ভ- দম্ভ, মান- মান, মদ-অন্বিতাঃ - মদমত্ত হয়ে।

মোহাৎ - মোহবশত, গৃহীত্বা - গ্রহন করে, অসদ্ - অনিত‍্য, গ্রাহান - বিষয়ে,

প্রবর্তন্তে - প্রবৃত্ত হয়ে, অশুচি - অশুচি কাজে, ব্রতাঃ - ব্রতী হয়॥১০॥


অনুবাদ:- সেই আসুরিক ব্যক্তিগণ দুষ্পূরণীয় কামকে আশ্রয় করে দম্ভ, মান ও মদমত্ত হয়ে অশুচি কার্যে ব্রতী হয় এবং মোহবশত অসৎ বিষয়ে প্রবৃত্ত হয়।


শ্লোক:11:

চিন্তামপরিমেয়াং চ প্রলয়ান্তামুপাশ্রিতাঃ৷

কামোপভোগপরমা এতাবদিতি নিশ্চিতাঃ ॥১১॥



শব্দার্থঃ

চিন্তাম্—দুশ্চিন্তা, অপরিমেয়াম্— অপরিমেয়; চ–এবং, প্রলয়ান্তাম্ - মৃত্যুকাল পর্যন্ত; উপাশ্রিতাঃ—আশ্রয় করে, কামোপভোগ—ইন্দ্রিয়সুখ ভোগকে, পরমাঃ - জীবনের পরম উদ্দেশ‍্য; এতাবৎ ইতি—এভাবে, নিশ্চিতাঃ- নিশ্চয় করে।


অনুবাদ:-অপরিমেয় দুশ্চিন্তার আশ্রয় গ্রহণ করে মৃত্যুকাল পর্যন্ত ইন্দ্রিয়সুখ ভোগকেই তারা তাদের জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। 


শ্লোক:12:

আশাপাশশতৈর্বদ্ধাঃ কামক্রোধ পরায়ণাঃ ।

ঈহন্তে কামভোগার্থম্ অন্যায়েনার্থসঞ্চয়ান্ ॥১২॥



শব্দার্থঃ

আশাপাশ - আশারূপ রজ্জুর দ্বারা; শতৈঃ—শত শতঃ, বদ্ধাঃ – আবদ্ধ হয়ে, কাম - কাম, ক্রোধ - ক্রোধ, পরায়ণাঃ - পরায়ণ হয়ে; ঈহন্তে - চেষ্টা করে; কাম - কাম, ভোগ—উপভোগের; অর্থম্ - উদ্দেশ্যে; অন্যায়েন - অসৎ উপায়ে, অর্থ - ধন সম্পদ, সঞ্চয়ান্ -  সঞ্চয়ের।


অনুবাদঃ এভাবেই শত শত আশাপাপে আবদ্ধ হয়ে এবং কাম ও ক্রোধ-পরায়ণ হয়ে তারা কাম উপভোগের জন্য অসৎ উপায়ে অর্থ সঞ্চয়ের চেষ্টা করে।


শ্লোক:13:

ইদমদ্য ময়া লব্ধম্ ইমং প্রাপ্স্যে মনোরথম্ ।

ইদমস্তীদমপি মে ভবিষ্যতি পুনর্ধনম্ ॥১৩॥



শব্দার্থঃ

ইদম—এই, অদ্য—আজ, ময়া - আমার দ্বারা; লব্ধম্ - লাভ হয়েছে, ইমম্—এই, প্রান্স্যে - লাভ করব; মনোরথম্ - আমার মনোভীষ্ট অনুসারে; ইদম—এই, অস্তি - আছে; ইদম—এই; অপি–ও, মে–আমার, ভবিষ্যতি - হবে, পুনঃ - পুনরায়; ধনম্–সম্পদ। 


অনুবাদঃ অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা মনে করে- "আজ আমার দ্বারা এত লাভ হয়েছে এবং আমার পরিকল্পনা অনুসারে আরও লাভ হবে। এখন আমার এত ধন আছে এবং ভবিষ্যতে আরও ধন লাভ হবে৷


শ্লোক:14:

অসৌ ময়া হতঃ শত্রু র্হনিষ্যে চাপরানপি ।

ঈশ্বরোহম্ অহং ভোগী সিদ্ধোহহং বলবান্ সুখী ॥১৪॥



শব্দার্থঃ

অসৌ - ঐ, ময়া - আমার দ্বারা; হতঃ–নিহত হয়েছে, শত্রুঃ - শত্রু; হনিষ্যে—আমি হত্যা করব, চ–ও, অপরান - অন্যদের; অপি—অবশ্যই।

ঈশ্বরঃ–প্রভু; অহম্ — আমি, অহম্ –আমি, ভোগী—ভোক্তা; সিদ্ধঃ- সিদ্ধ, অহম, — আমি; বলবান্ - শক্তিশালী, সুখী-সুখী।


অনুবাদঃ ঐ শত্রু আমার দ্বারা নিহত হয়েছে এবং অন্যান্য শত্রুদেরও আমি

হত্যা করব। আমিই ঈশ্বর, আমিই ভোক্তা, আমিই সিদ্ধ, বলবান ও সুখী।



শ্লোক:15:

আঢ্যোহভিজনবানস্মি কোহন্যোহস্তি সদৃশো ময়া ।

যক্ষ্যে দাস্যামি মোদিষ্য ইত্যজ্ঞানবিমোহিতাঃ ॥১৫॥



শব্দার্থঃ 

আঢ্যঃ - ধনবান, অভিজনবান্ - অভিজাত আত্মীয়স্বজন পরিবৃত, অস্মি - হই, কঃ - কে, অন্যঃ - অন্য, অস্তি - আছে, সদৃশঃ - মত, ময়া - আমার।

যক্ষ্যে - যজ্ঞ করব, দাস্যামি - দান করব, মোদিষ্য - আনন্দ করব, ইতি - এভাবে,

অজ্ঞান - অজ্ঞান দ্বারা, বিমোহিতাঃ - বিমোহিত হয়॥১৫॥


অনুবাদঃ আমি সবচেয়ে ধনবান এবং অভিজাত আত্মীয়-স্বজন পরিবৃত। আমার মতো আর কেউ নেই। আমি যজ্ঞ অনুষ্ঠান করব, দান করব এবং আনন্দ করব।"


শ্লোক:16:

অনেকচিত্তবিভ্রান্তা মোহজালসমাবৃতাঃ ।

প্রসক্তাঃ কামভোগেষু পতন্তি নরকেহশুচৌ ॥১৬॥



শব্দার্থঃ 

অনেক - বহু প্রকার, চিত্তবিভ্রান্তাঃ - দুশ্চিন্তার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে, মোহ - মোহ, জাল - জালের দ্বারা, সমাবৃতাঃ - বিজড়িত হয়ে।

প্রসক্তাঃ - আসক্ত চিত্ত সেই ব‍্যক্তিরা, কামভোগেষু - কাম ভোগে,পতন্তি - পতিত হয়, নরকে - নরকে, অশুচৌ - অশুচি॥১৬॥


অনুবাদ:- এভাবেই অসুরস্বভাব ব্যক্তিরা

অজ্ঞানের দ্বারা বিমোহিত হয়। নানা প্রকার দুঃশ্চিন্তায় বিভ্রান্ত হয়ে এবং মোহজালে বিজড়িত হয়ে কামভোগে আসক্তচিত্ত সেই ব্যক্তিরা অশুচি নরকে পতিত হয়।



শ্লোক:17:

আত্মসম্ভাবিতাঃ স্তব্ধা ধনমানমদান্বিতাঃ ।

যজন্তে নামযজ্ঞৈস্তে দম্ভেনাবিধিপূর্বকম্ ॥১৭॥



শব্দার্থঃ

আত্মসম্ভাবিতাঃ – আত্মাভিমানী; স্তব্ধাঃ—অনম্র, ধনমান— ধন ও মানে, মদান্বিতাঃ – মদমত্ত, যজন্তে— যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে, নাম- নামমাত্র, যজ্ঞৈঃ - যজ্ঞের দ্বারা, তে—তারা; দম্ভেন—দম্ভ সহকারে; অবিধিপূর্বকম্— শাস্ত্রবিধি অনুসরণ না করে।


অনুবাদ:- সেই আত্মাভিমানী, অনম্র এবং ধন ও মানে মদান্বিত ব্যক্তিরা অবিধিপূর্বক দম্ভ সহকারে নামমাত্র যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে।


শ্লোক:18:

অহঙ্কারং বলং দর্পং কামং ক্রোধং চ সংশ্রিতাঃ ।

মামাত্মপরদেহেষু প্রদ্বিষন্তো অভ্যসূয়কাঃ ॥১৮॥



শব্দার্থঃ

অহঙ্কারম্—অহঙ্কার; বলম—বল; দর্পম্-দর্প, কামম্- কাম, ক্রোধম্-ক্রোধকে, চ– ও সংশ্রিতাঃ– আশ্রয় করে।

মাম্ - আমাকে, আত্ম — স্বীয়, পর - অন্যের, দেহেষু – দেহে অবস্থিত, প্রদ্বিষন্তঃ–বিদ্বেষ করে, অভ্যসূয়কাঃ– সাধুদের গুণেতে দোষারোপ করে।


অনুবাদ:- অহঙ্কার, বল, দর্প, কাম ও ক্রোধকে আশ্রয় করে অসুরেরা স্বীয় দেহে ও পরদেহে অবস্থিত পরমেশ্বর স্বরূপ আমাকে দ্বেষ করে এবং সাধুদের গুণেতে দোষারোপ করে।


শ্লোক:19:

তানহং দ্বিষতঃ ক্রূরান্ সংসারেষু নরাধমান্ ।

ক্ষিপাম্যজস্রম অশুভান্ আসুরীষ্বেব যোনিষু ॥১৯॥



শব্দার্থঃ 

তান্— তাদের; অহম্ – আমি; দ্বিষতঃ — বিদ্বেষী; ক্রূরান্— ক্রুর; সংসারেষু – ভবসমুদ্রে, নরাধমান্ - নরাধমদের।

ক্ষিপামি— নিক্ষেপ করি; অজস্রম্ – অনবরত, অশুভান্— অশুভ; আসুরীষু — আসুরী; এব—অবশ্যই; যোনিষু — যোনিতে।৷১৯৷৷


অনুবাদ:- সেই বিদ্বেষী, ক্রূর ও নরাধমদের আমি এই সংসারেই অশুভ আসুরী যোনিতে অবিরত নিক্ষেপ করি।


শ্লোক:20:

আসুরীং যোনিমাপন্না মুঢ়া জন্মনি জন্মনি ।

মামপ্রাপ্যৈব কৌন্তেয় ততো যান্ত্যধমাং গতিম্ ॥২০॥



শব্দার্থঃ 

আসুরীম্, যোনিম্, আপন্নাঃ, মুঢ়াঃ, জন্মনি, জন্মনি।

মাম্, অপ্রাপ্য, এব, কৌন্তেয়, ততঃ,

যান্তি, অধমাম্, গতিম্ ॥২০॥


আসুরীম্‌ — আসুরী; যোনিম্– যোনি, আপন্নাঃ - লাভ করে; মূঢ়াঃ– সেই মুঢ়গণ, জন্মনি জন্মনি— জন্মে জন্মে, মাম্ – আমাকে, অপ্রাপ্য—না পেয়ে, এব– অবশ্যই কৌন্তেয়— হে কুণ্ডীপুত্র, ততঃ– তার থেকে, যান্তি—প্রাপ্ত হয়, অধমাম্ - অধম, গতিম্— গতি।


অনুবাদ:- হে কৌন্তেয় ! জন্মে জন্মে অসুরযোনি প্রাপ্ত হয়ে, সেই মুঢ় ব্যক্তিরা আমাকে লাভ করতে অক্ষম হয়ে তার থেকেও অধম গতি প্রাপ্ত হয়।


শ্লোক:21:

ত্রিবিধং নরকস্যেদং দ্বারং নাশনমাত্মনঃ ।

কামঃ ক্রোধস্তথা লোভঃ তস্মাদেতত্রয়ং ত্যজেৎ ॥২১॥



শব্দার্থঃ

ত্রিবিধ – তিনটি, নরকস‍্য - নরকের: ইদম্— এই, দ্বারম্ - দ্বার, নাশনম্ - নাশকারী: আত্মনঃ – আত্মার। 

কামঃ— কাম, ক্রোধঃ– ক্রোধ; তথা - ও, লোভঃ – লোভ, তস্মাৎ– অতএব, এবং— এই, ত্রয়ম্ — তিনটি; তাজেৎ— পরিত্যাগ করবে।


অনুবাদ:- কাম, ক্রোধ ও লোভ- এই তিনটি নরকের দ্বার, অতএব ঐ তিনটি পরিত্যাগ করবে।


শ্লোক:22:

এতৈর্বিমুক্তঃ কৌন্তেয় তমোদ্বারৈস্ত্রিভির্নরঃ ।

আচরত্যাত্মনঃ শ্রেয়ঃ ততো যাতি পরাং গতিম্ ॥২২॥



শব্দার্থঃ

এতেঃ— এই বিমুক্তঃ— মুক্ত হয়ে, কৌন্তেয়— হে কুন্তীপুত্র, তমোদ্বারৈঃ - তমোময় দ্বার থেকে, ত্রিভিঃ– তিন প্রকার; নরঃ— মানুষ; আচরিত–আচরণ করেন; আত্মনঃ– আত্মার শ্রেয়ঃ— মঙ্গল, ততঃ– অনন্তর; যাতি লাভ করেন, পরাম— পরম গতিম্ – গতি।


অনুবাদ:- হে কৌন্তেয় ! এই তিন প্রকার তমোদ্বার থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ আত্মার শ্রেয় আচরণ করেন এবং তার ফলে পরাগতি লাভ করে থাকেন।



শ্লোক:23:

যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ ।

ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্ ॥২৩॥



শব্দার্থঃ 

যঃ - যে, শাস্ত্রবিধিম্ - শাস্ত্রবিধি, উৎসৃজ্য - পরিত্যাগ করে, বর্ততে - বর্তমান থাকে , কামকারতঃ - কামাচারে।

ন - না, সঃ - সে, সিদ্ধিম্ - সিদ্ধি, অবাপ্নোতি - প্রাপ্ত হয়, ন - না, সুখম্ - সুখ, ন - না, পরাম্ - পরম, গতিম্ - গতি॥২৩॥


অনুবাদ:- যে শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে কামাচারে বর্তমান থাকে, সে সিদ্ধি, সুখ অথবা পরাগতি লাভ করতে পারে না।


শ্লোক:24:

তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ ।

জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহার্হসি ॥২৪॥



শব্দার্থঃ 

তস্মাৎ - অতএব, শাস্ত্রম্ - শাস্ত্র, প্রমাণম্ - প্রমাণ, তে - তোমার, কার্য- কর্তব্য, অকার্য- অকর্তব্য, ব্যবস্থিতৌ - নির্ধারণে।

জ্ঞাত্বা - জেনে, শাস্ত্র- শাস্ত্রের, বিধান-  বিধান, উক্তম্ - কথিত হয়েছে, কর্ম - কর্ম, কর্তুম্ - করতে, ইহ - এই, অর্হসি - যোগ্য হও॥২৪॥


অনুবাদ:- অতএব, কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয় বিধানে কথিত হয়েছে যে কর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে যোগ্য হও।


ওঁ তৎসদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে 'দৈবাসুরসম্পদবিভাগযোগো' নাম ষোড়শোঽধ্যায়ঃ ॥১৬॥

💐💐💐💐💐

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.