চতুর্থ অধ্যায় - জ্ঞান যোগ
চতুর্থ অধ্যায়
জ্ঞান যোগ
ওঁ তৎ সৎ
শ্রীমদ্ভগবদ গীতা
ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়ঃ
চতুর্থ অধ্যায় - জ্ঞান যোগ
শ্লোক: 1:
শ্রীভগবানুবাচ
ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবানহমব্যয়ম্ ।
বিবস্বান্মনবে প্রাহ মনুরিক্ষ্বাকবেহব্রবীৎ ।।১।।
শব্দার্থঃ শ্রীভগবান্ উবাচ — পরমেশ্বর ভগবান বললেন; ইমম্ — এই, বিবস্বতে – সূর্যদেবকে, যোগম্ — ভগবানের সঙ্গে জীবের সম্পর্ক সম্বন্ধীয় বিজ্ঞান; প্রোক্তবান্— বলেছিলাম, অহম্ – আমি; অব্যয়ম্ অব্যয়, বিবস্বান্—বিবস্বান (সূর্যদেবের নাম), মনবে — মানবজাতির জনক বৈবস্বত মনুকে; প্ৰাহ্ - বলেছিলেন, মনুঃ—মনু, ইক্ষ্বাকবে— মহারাজ ইক্ষ্বাকুকে; অব্রবীৎ—বলেছিলেন।
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন- আমি পূর্বে সূর্যদেব বিবশ্বানকে এই অব্যয় নিষ্কাম কর্মসাধ্য জ্ঞানযোগ বলেছিলাম। সূর্য তা মানবজাতির জনক মনুকে বলেছিলেন এবং মনু তা ইক্ষ্বাকুকে বলেছিলেন।
শ্লোক: 2:
এবং পরম্পরাপ্রাপ্তমিমং রাজর্ষয়ো বিদুঃ ।
স কালেনেহ মহতা যোগো নষ্টঃ পরন্তপ ।।২।।
শব্দার্থঃ এবম্ — এভাবে, পরম্পরা - পরম্পরাক্রমে, প্রাপ্তম্ - প্রাপ্ত, ইমম্ — এই বিজ্ঞান, রাজর্ষয়ঃ — রাজর্ষিরা; বিদুঃ—বিদিত হয়েছিলেন; সঃ - সেই জ্ঞান; কালেন - কালের প্রভাবে; ইহ—এই জগতে, মহতা—সুদীর্ঘ; যোগঃ- পরমেশ্বর ভগবানের সঙ্গে জীবের সম্বন্ধ জ্ঞান সমন্বিত বিজ্ঞান; নষ্টঃ—বিনষ্ট; পরস্তুপ – হে শত্রু দমনকারী অর্জুন।
অনুবাদঃ এভাবেই পরম্পরা মাধ্যমে প্র্রাপ্ত এই পরম বিজ্ঞান রাজর্ষিরা লাভ করেছিলেন৷ কিন্তু কালের প্রভাবে পরম্পরা ছিন্ন হয়েছিল এবং তাই সেই যোগ নষ্টপ্রায় হয়েছে।
শ্লোক: 3:
স এবায়ং ময়া তেহদ্য যোগঃ প্রোক্তঃ পুরাতনঃ ।
ভক্তোহসি মে সখা চেতি রহস্যং হ্যেতদুত্তমম্ ।।৩।।
শব্দার্থঃ সঃ—সেই; এব—অবশ্যই; অয়ম্—এই, ময়া—আমার দ্বারা; তে - তোমাকে, অদ্য - আজ, যোগঃ - যোগ-বিজ্ঞান; প্রোক্তঃ - বলা হল; পুরাতনঃ - অতি প্রাচীন, ভক্তঃ – ভক্ত, অসি—তুমি হও; মে – আমার; সখা — সখা; চ – ও; ইতি—অতএব, রহস্যম্ - রহস্য; হি – অবশ্যই,এতৎ — এই; উত্তমম্ - উত্তম।
অনুবাদঃ সেই সনাতন যোগ আজ আমি তোমাকে বললাম, কারণ তুমি আমার ভক্ত ও সখা এবং তাই তুমি এই বিজ্ঞানের অতি গুঢ় রহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে।
শ্লোক: 4:
অর্জুন উবাচ
অপরং ভবতো জন্ম পরং জন্ম বিবস্বতঃ ।
কথমেতদ্ বিজানীয়াং ত্বমাদৌ প্রোক্তবানিতি ।।৪।।
শব্দার্থঃ অর্জুনঃ উবাচ—অর্জুন বললেন; অপরম্ — পরবর্তী; ভবতঃ—তোমার; জন্ম - জন্ম, পরম্ - পূর্বে; জন্ম-জন্ম, বিবস্বতঃ– সূর্যদেবের; কথম্ - কিভাবে, এতৎ—এই বিজানীয়াম্—আমি বুঝব, ত্বম্—তুমি, আদৌ - পুরাকালে, প্রোক্তবান্—বলেছিলে; ইতি - এভাবে।
অনুবাদঃ অর্জুন বললেন- সূর্যদেব বিবশ্বানের জন্ম হয়েছিল তোমার অনেক পূর্বে। তুমি যে পুরাকালে তাঁকে এই জ্ঞান উপদেশ করেছিলে, তা আমি কেমন করে বুঝব ?
শ্লোক: 5:
ভগবান উবাচ
বহূনি মে ব্যতীতানি জন্মানি তব চার্জুন ।
তান্যহং বেদ সর্বাণি ন ত্বং বেত্থ পরন্তপ ।।৫।।
শব্দার্থঃ শ্রীভগবান্ উবাচ - পরমেশ্বর ভগবান বললেন; বহুনি—বহু, মে- আমার; ব্যতীতানি—অতীত হয়েছে, জন্মানি—জন্ম; তব — তোমার; চ–এবং, অর্জুন - হে অর্জুন; তানি—সেই সমস্ত; অহম্ - আমি; বেদ-জানি: সর্বাণি—সমস্ত: ন - না; ত্বম্–তুমি, বেথ—জান, পরন্তপ – হে শত্রু দমনকারী।
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে পরন্তপ অর্জুন ! আমার ও তোমার বহু জন্ম অতীত হয়েছে ৷ আমি সেই সমস্ত জন্মের কথা স্মরণ করতে পারি, কিন্তু তুমি পার না।
শ্লোক: 6:
অজোহপি সন্নব্যয়াত্মা ভূতানামীশ্বরোহপি সন্ ।
প্রকৃতিং স্বামধিষ্ঠায় সম্ভবাম্যাত্মমায়য়া ।।৬।।
শব্দার্থঃ অজঃ—জন্মরহিত; অপি—যদিও, সন্— হয়েও, অব্যয়— অক্ষয়, আত্মা— দেহ, ভূতানাম্—জীবসমূহের, ঈশ্বরঃ - পরমেশ্বর; অপি - যদিও; সন্—হয়ে, প্রকৃতিম্ - চিন্ময় রূপে; স্বাম–আমার; অধিষ্ঠায় - অধিষ্ঠিত হয়ে; সম্ভবামি—আবির্ভূত হই; আত্মমায়য়া - আমার অন্তরঙ্গা শক্তির দ্বারা।
অনুবাদঃ যদিও আমি জন্মরহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্বভূতের ঈশ্বর, তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি আমার আদি চিন্ময় রূপে যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।
শ্লোক: 7:
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত ।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ ।।৭।।
শব্দার্থঃ যদা যদা—যখন ও যেখানে, হি–অবশ্যই; ধর্মস্য - ধর্মের, গ্লানিঃ - হানি; ভবতি - হয়, ভারত – হে ভরতবংশীয়, অভ্যুত্থানম - উত্থান; অধর্মস্য - অধর্মের, তদা - তখন, আত্মানম্—নিজেকে, সৃজামি—প্রকাশ করি, অহম্ - আমি।
অনুবাদঃ হে ভারত ! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যূত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই।
শ্লোক: 8:
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।৮।।
শব্দার্থঃ পরিত্রাণায়—পরিত্রাণ করার জন্য, সাধুনাম্ - ভক্তদের; বিনাশায় - বিনাশ করার জন্য: চ – এবং, দুষ্কৃতাম্—দুষ্কৃতকারীদের; ধর্ম - ধর্ম সংস্থাপনার্থায় - সংস্থাপনের জন্য, সম্ভবামি— অবতীর্ণ হই; যুগে যুগে - যুগে যুগে।
অনুবাদঃ সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।
শ্লোক: 9:
জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ ।
ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোহর্জুন ।।৯।।
শব্দার্থঃ জন্ম-জন্ম; কর্ম-কর্ম: চ–এবং, মে–আমার; দিব্যম্-দিব্য, এবম্ - এভাবে; যঃ - যিনি, বেত্তি জানেন; তত্ত্বতঃ যথার্থভাবে, ত্যক্ত্বা - ত্যাগ করে; দেহম্ - বর্তমান দেহ, পুনঃ - পুনরায়; জন্ম-জন্ম, ন - না, এতি - প্রাপ্ত হন, মাম্ - আমাকে; এতি—প্রাপ্ত হন; সঃ– তিনি; অর্জুন – হে অর্জুন।
অনুবাদঃ হে অর্জুন ! যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম ও কর্ম যথাযথভাবে জানেন, তাঁকে আর দেহত্যাগ করার পর পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয় না, তিনি আমার নিত্য ধাম লাভ করেন।
শ্লোক: 10:
বীতরাগভয়ক্রোধা মন্ময়া মামুপাশ্রিতাঃ ।
বহবো জ্ঞানতপসা পূতা মদ্ভাবমাগতাঃ ।।১০।।
শব্দার্থঃ বীত — মুক্ত; রাগ — আসক্তি, ভয় - ভয়; ক্রোধাঃ - ক্রোধ, মন্ময়া — আমাতে নিবিষ্ট চিত্ত, মাম্ — আমার, উপাশ্রিতাঃ – একান্তভাবে আশ্রিত হয়ে; বহবঃ — বহু জ্ঞান জ্ঞান; তপসা - তপস্যার দ্বারা; পূতাঃ — পবিত্র হয়ে; মদ্ভাবম্ - আমার প্রতি অপ্রাকৃত প্রেম; আগতাঃ — লাভ করেছে।
অনুবাদঃ আসক্তি, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত হয়ে, সম্পূর্ণরূপে আমাতে মগ্ন হয়ে, একান্তভাবে আমার আশ্রিত হয়ে, পূর্বে বহু বহু ব্যক্তি আমার জ্ঞান লাভ করে পবিত্র হয়েছে- এবং এভাবেই সকলেই আমার অপ্র্রাকৃত প্রীতি লাভ করেছে।
শ্লোক: 11:
যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।
মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।।১১।।
শব্দার্থঃ যে — যারা; যথা — যেভাবে: মাম্ — আমাকে; প্রপদ্যন্তে - আত্মসমর্পণ করে, তান — তাদের; তথা—সেভাবে, এব—অবশ্যই, ভজামি— পুরস্কৃত করি, অহম্—আমি; মম - আমার, বর্ত্ম—পথ, অনুবর্তন্তে - অনুসরণ করে; মনুষ্যাঃ — সমস্ত মানুষ; পার্থ - হে পৃথাপুত্র, সর্বশঃ — সর্বতোভাবে।
অনুবাদঃ যারা যেভাবে আমার প্রতি আত্মসমর্পণ করে, আমি তাদেরকে সেভাবেই পুরস্কৃত করি। হে পার্থ ! সকলেই সর্বতোভাবে আমার পথ অনুসরণ করে।
শ্লোক: 12:
কাঙ্ক্ষন্তঃ কর্মণাং সিদ্ধিং যজন্ত ইহ দেবতাঃ ।
ক্ষিপ্রং হি মানুষে লোকে সিদ্ধির্ভবতি কর্মজা ।।১২।।
শব্দার্থঃ কাঙ্ক্ষন্তঃ — কামনা করে; কর্মণাম্ - সকাম কর্মসমূহের; সিদ্ধিম্ — সিদ্ধি; যজন্তে — যজ্ঞের দ্বারা উপাসনা করে; ইহ—এই দেবতাঃ–দেবতাদের, ক্ষিপ্রম—অতি শীঘ্র; হি–অবশ্যই; মানুষে—মানব সমাজে; লোকে - জড় জগতে, সিদ্ধিঃ—ফল লাভ, ভবতি— হয়; কর্মজা — সকাম কর্ম থেকে।
অনুবাদঃ এই জগতে মানুষেরা সকাম কর্মের সিদ্ধি কামনা করে এবং তাই তারা বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করে। সকাম কর্মের ফল অবশ্যই অতি শীঘ্রই লাভ হয়।
শ্লোক: 13:
চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ ।
তস্য কর্তারমপি মাং বিদ্ধ্যকর্তারমব্যয়ম্ ।।১৩।।
শব্দার্থঃ চাতুবর্ণ্যম্ — মানব-সমাজের চারিটি বিভাগ; ময়া—আমার দ্বারা, সৃষ্টম্ — সৃষ্ট হয়েছে, গুণ—গুণ, কর্ম–কর্ম; বিভাগশঃ — বিভাগ অনুসারে, তস্য — তার, কর্তারম্–স্রষ্টা, অপি – যদিও; মাম্— আমাকে; বিদ্ধি — জানবে; অকর্তারম্ - অকর্তারূপে; অব্যয়ম্ - পরিবর্তন রহিত।
অনুবাদঃ প্রকৃতির তিনটি গুণ ও কর্ম অনুসারে আমি মানব-সমাজে চারটি বর্ণবিভাগ সৃষ্টি করেছি । আমি এই প্রথার স্রষ্টা হলেও আমাকে অকর্তা এবং অব্যয় বলে জানবে।
শ্লোক: 14:
ন মাং কর্মাণি লিম্পন্তি ন মে কর্মফলে স্পৃহা ।
ইতি মাং যোহভিজানাতি কর্মভির্ন স বধ্যতে ।।১৪।।
শব্দার্থঃ ন—না, মাম্ - আমাকে, কর্মাণি–সর্বপ্রকার কর্ম, লিম্পত্তি—প্রভাবিত করতে পারে, ন–না; মে–আমার, কর্মফলে কর্মফলে; স্পৃহা-আকাঙ্ক্ষা; ইতি—এভাবে; মাম্—আমাকে; যঃ—যিনি: অভিজানাতি–জানেন; কর্মভিঃ—এই প্রকার কর্মের দ্বারা; ন–না; সঃ — তিনি; বধ্যতে— আবদ্ধ হন।
অনুবাদঃ কোন কর্মই আমাকে প্রভাবিত করতে পারে না এবং আমিও কোন কর্মফলের আকাঙ্ক্ষা করি না। আমার এই তত্ত্ব যিনি জানেন, তিনিও কখনও সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ হন না।
আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন: सम्पूर्ण श्रीमद भागवत गीता – Complete Shrimad Bhagwat Geeta in Hindi, শ্রীতুলসী আরতি , বাংলা অর্থসহ শিবতান্ডব স্তোত্রম , মহিষাসুরমর্দিনী স্ত্রোত্র
শ্লোক: 15:
এবং জ্ঞাত্বা কৃতং কর্ম পূর্বৈরপি মুমুক্ষুভিঃ ।
কুরু কর্মৈব তস্মাত্বং পূর্বৈঃ পূর্বতরং কৃতম্ ।।১৫।।
শব্দার্থঃ এবম্ —এভাবে; জ্ঞাত্মা— জেনে; কৃতম্ — অনুষ্ঠান করেছেন; কর্ম-কর্ম; পূর্বেঃ - প্রাচীন; অপি—যদিও; মুমুক্ষুভিঃ —মুক্তিকামীগণ কর্তৃক; কুরু—কর; কর্ম—শাস্ত্রোক্ত কর্ম; এব—অবশ্যই; তস্মাৎ - অতএব, ত্বম্—তুমি: পূর্বেঃ—প্রাচীন মহাজনগণ কর্তৃক; পূর্বতরম্—প্রাচীনকালে; কৃতম্—অনুষ্ঠিত।
অনুবাদঃ প্রাচীনকালে সমস্ত মুক্ত পুরুষেরা আমার অপ্রাকৃত তত্ত্ব অবগত হয়ে কর্ম করেছেন। অতএব তুমিও সেই প্রাচীন মহাজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তোমার কর্তব্য সম্পাদন কর।
শ্লোক: 16:
কিং কর্ম কিমকর্মেতি কবয়োহপ্যত্র মোহিতাঃ ।
তত্তে কর্ম প্রবক্ষ্যামি যজ্ জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসেহশুভাৎ ।।১৬।।
শব্দার্থঃ কিম্–কি., কর্ম-কর্ম, কিম্—কি. অকর্ম—অকর্ম; ইতি—এভাবে; কৰয়ঃ—বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ; অপি – ও, অত্র - এই বিষয়ে মোহিতাঃ – মোহিত হন; তৎ–তাই; তে–তোমাকে, কর্ম-কর্ম, প্ৰবক্ষ্যামি–আমি বিশ্লেষণ করব; যৎ - যা; জ্ঞাত্বা - জেনে, মোক্ষ্যসে— তুমি মুক্ত হবে, অশুভাৎ — অশুভ অবস্থা থেকে।
অনুবাদঃ কাকে কর্ম ও কাকে অকর্ম বলে, তা স্থির করতে বিবেকী ব্যক্তিরাও মোহিত হন। আমি সেই কর্ম বিষয়ে তোমাকে উপদেশ করব। তুমি তা অবগত হয়ে সমস্ত অশুভ অবস্থা থেকে মুক্ত হবে।
শ্লোক: 17:
কর্মণো হ্যপি বোদ্ধব্যং বোদ্ধব্যং চ বিকর্মণঃ ।
অকর্মণশ্চ বোদ্ধব্যং গহনা কর্মণো গতিঃ ।।১৭।।
শব্দার্থঃ কর্মণঃ—কর্মের; হি—অবশ্যই; অপি-ও, বোদ্ধব্যম্ — জানা উচিত, বোদ্ধব্যম্ - জ্ঞাতব্য; চ–ও; বিকর্মণঃ শাস্ত্রনিষিদ্ধ কর্ম, অকর্মণঃ - অকর্ম: চ–ও; বোদ্ধব্যম্ - জ্ঞাতব্য; গহনা—অত্যন্ত কঠিন; কর্মণঃ - কর্মের; গতিঃ—গতি।
অনুবাদঃ কর্মের নিগূঢ় তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করা অত্যন্ত কঠিন। তাই কর্ম, বিকর্ম ও অকর্ম সম্বন্ধে যথাযথভাবে জানা কর্তব্য।
শ্লোক: 18:
কর্মণ্যকর্ম যঃ পশ্যেদকর্মণি চ কর্ম যঃ ।
স বুদ্ধিমান্মনুষ্যেষু স যুক্তঃ কৃৎস্নকর্মকৃৎ ।।১৮।।
শব্দার্থঃ কর্মণি—কর্মে; অকর্ম—অকর্ম: যঃ—যিনি; পশ্যেৎ-দর্শন করেন; অকর্মণি - অকর্মে: চ–ও: কর্ম – কর্ম, যঃ– যিনি; সঃ — তিনি; বুদ্ধিমান্—বুদ্ধিমান; মনুষ্যেষু - মানব-সমাজে; সঃ – তিনি; যুক্তঃ — চিন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত, কৃৎস্নকর্মকৃৎ — সব রকম কর্মে লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও।
অনুবাদঃ যিনি কর্মে অকর্ম দর্শন করেন এবং অকর্মে কর্ম দর্শন করেন, তিনিই মানুষের মধ্যে বুদ্ধিমান। সব রকম কর্মে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি চিন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত।
শ্লোক: 19:
যস্য সর্বে সমারম্ভাঃ কামসংকল্পবর্জিতাঃ ।
জ্ঞানাগ্নিদগ্ধকর্মাণাং তমাহুঃ পণ্ডিতং বুধাঃ ।।১৯।।
শব্দার্থঃ যথা— যাঁর, সর্বে—সব রকম; সমারম্ভাঃ – কর্ম প্রচেষ্টা, কাম—ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের বাসনা; সংস্কল্প - সংকল্প; বর্জিতাঃ - রহিত, জ্ঞান - জ্ঞানের, অগ্নি—অগ্নি দ্বারা, দগ্ধ–কর্ম, কর্মণিম্ - কর্মসমূহ, তম্ - তাকে; আহুঃ —বলেন, পণ্ডিতম্— পণ্ডিত, বুধাঃ — জ্ঞানীগণ।
অনুবাদঃ যাঁর সমস্ত কর্ম প্রচেষ্টা কাম ও সংকল্প রহিত, তিনি পূর্ণ জ্ঞানে অধিষ্ঠিত। জ্ঞানীগণ বলেন যে, তাঁর সমস্ত কর্মের প্রতিক্রিয়া পরিশুদ্ধ জ্ঞানাগ্নি দ্বারা দগ্ধ হয়েছে।
শ্লোক: 20:
ত্যক্ত্বা কর্মফলাসঙ্গং নিত্যতৃপ্তো নিরাশ্রয়ঃ ।
কর্মণ্যভিপ্রবৃত্তোহপি নৈব কিঞ্চিৎ করোতি সঃ ।।২০।।
শব্দার্থঃ ত্যক্ত্বা - ত্যাগ করে, কর্মফল-আসঙ্গম্ - কর্মফলের আসক্তি, নিত্যতৃপ্তঃ - সর্বদা পরিতৃপ্ত, নিঃ-আশ্রয়ঃ - আশ্রয়শূন্য , কর্মণি - কর্মে, অভিপ্রবৃত্তঃ - পূর্ণরূপে প্রবৃত্ত, অপি - সত্ত্বেও, ন - না, এব - অবশ্যই, কিঞ্চিৎ - কিছুই, করোতি - করেন, সঃ - তিনি ।।২০।।
অনুবাদঃ যিনি কর্মফলের আসক্তি সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করে সর্বদা তৃপ্ত এবং কোন রকম আশ্রয়ের অপেক্ষা করেন না, তিনি সব রকম কর্মে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও কর্মফলের আশায় কোন কিছুই করেন না।
শ্লোক: 21:
নিরাশীর্যতচিত্তাত্মা ত্যক্তসর্বপরিগ্রহঃ ।
শারীরং কেবলং কর্ম কুর্বন্নাপ্নোতি কিল্বিষম্ ।।২১।।
শব্দার্থঃ নিঃ-আশীঃ - কামনা শূন্য, যত- সংযত, চিত্ত-আত্মা - মন ও বুদ্ধি, ত্যক্ত-পরিত্যাগ করে, সর্ব - সমস্ত, পরিগ্রহঃ - আধিপত্য করার প্রবৃত্তি। শারীরম্ - শরীর রক্ষার্থে, কেবলম্ - কেবল, কর্ম - কর্ম, কুর্বন্ - করেও , ন - না, আপ্নোতি - লাভ করেন, কিল্বিষম্ - পাপ।।২১।।
অনুবাদঃ এই প্রকার জ্ঞানী ব্যক্তি তাঁর মন ও বুদ্ধিকে সর্বতোভাবে সংযত করে কার্য করেন। তিনি প্রভুত্ব করার প্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে কেবল জীবন ধারণের জন্য কর্ম করেন। এভাবেই কর্ম করার ফলে কোন রকম পাপ তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না।
শ্লোক: 22:
যদৃচ্ছালাভসন্তুষ্টো দ্বন্দ্বাতীতঃ বিমৎসরঃ ।
সম সিদ্ধাবসিদ্ধৌ চ কৃত্বাপি ন নিবধ্যতে ।।২২।।
শব্দার্থঃ যদৃচ্ছা - অনায়াসে, লাভ - লাভে, সন্তুষ্টো - সন্তুষ্ট, দ্বন্দ্ব -দ্বন্দ্ব, অতীতঃ - অতীত, বিমৎসরঃ - মাৎসর্যমুক্ত । সমঃ - স্থির, সিদ্ধৌ - সিদ্ধি লাভে, অসিদ্ধৌ - অসাফল্যে, চ - ও, কৃত্বা - করলেও, অপি - যদিও, ন - না, নিবধ্যতে - প্রভাবিত হন ।।২২।।
অনুবাদঃ যিনি অনায়াসে যা লাভ করেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন, যিনি সুখ-দুঃখ রাগ-দ্বেষ আদি দ্বন্দ্বের বশীভূত হন না এবং মাৎসর্যশূন্য, যিনি কার্যের সাফল্য ও অসাফল্যে অবিচলিত থাকেন, তিনি কর্ম সম্পাদন করলেও কর্মফলের দ্বারা কখনও আবদ্ধ হন না।
শ্লোক: 23:
গতসঙ্গস্য মুক্তস্য জ্ঞানাবস্থিতচেতসঃ ।
যজ্ঞায়াচরতঃ কর্ম সমগ্রং প্রবিলীয়তে ।।২৩।।
শব্দার্থঃ গতসঙ্গস্য - জড়া প্রকৃতির গুণের প্রতি অনাসক্ত ব্যক্তি, মুক্তস্য - মুক্ত, জ্ঞান-অবস্থিত- চিন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত, চেতসঃ - চিত্ত। যজ্ঞায় - যজ্ঞের (শ্রীকৃষ্ণের) উদ্দেশ্যে, আচরতঃ - আচরণ করে, কর্ম - কর্ম, সমগ্রম্ - সম্পূর্ণ রূপে, প্রবিলীয়তে - লয় প্রাপ্ত হয় ।।২৩।।
অনুবাদঃ জড়া প্রকৃতির গুণের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে, চিন্ময় জ্ঞাননিষ্ঠ ব্যক্তি যজ্ঞের উদ্দেশ্যে যে কর্ম সম্পাদন করেন, সেই সকল কর্ম সম্পূর্ণরূপে লয় প্রাপ্ত হয়।
শ্লোক: 24:
ব্রহ্মার্পণং ব্রহ্ম হবির্ব্রহ্মাগ্নৌ ব্রহ্মণা হুতম্ ।
ব্রহ্মৈব তেন গন্তব্যং ব্রহ্মকর্মসমাধিনা ।।২৪।।
শব্দার্থঃ ব্রহ্ম - চিন্ময় প্রকৃতি, অর্পণম্ - অর্পন, ব্রহ্ম - পরম, হবিঃ - ঘৃত, ব্রহ্ম - চিন্ময়, অগ্নৌ - অগ্নিতে, ব্রহ্মণা - আত্মার দ্বারা, হুতম্ - নিবেদিত হয়, ব্রহ্ম - চিৎ জগৎ, এব - অবশ্যই, তেন - তাঁর দ্বারা, গন্তব্যম্ - গন্তব্য, ব্রহ্ম চিন্ময়, কর্ম - কর্ম, সমাধিনা - সমাহিত হয়ে ।।২৪।।
অনুবাদঃ যিনি কৃষ্ণভাবনায় সম্পূর্ণ মগ্ন তিনি অবশ্যই চিৎজগতে উন্নীত হবেন, কারণ তাঁর সমস্ত কার্যকলাপ চিন্ময়। তাঁর কর্মের উদ্দেশ্য চিন্ময় এবং সেই উদ্দেশ্যে তিনি যা নিবেদন করেন, তাও চিন্ময়।
শ্লোক: 25:
দৈবমেবাপরে যজ্ঞং যোগিনঃ পর্যুপাসতে ।
ব্রহ্মাগ্নাবপরে যজ্ঞং যজ্ঞেনৈবোপজুহ্বতি ।।২৫।।
শব্দার্থঃ দৈবম্ - দেবতাদের পূজায়, এব - এভাবে, অপরে - অন্য অনেকে, যজ্ঞম্ - যজ্ঞ, যোগিনঃ - যোগীগণ , পর্যুপাসতে - যথাযথ ভাবে উপাসনা করেন। ব্রহ্মাগ্নৌ - চিন্ময় তত্ত্বরূপ অগ্নিতে, অপরে - অন্যেরা , যজ্ঞম্ - যজ্ঞ, যজ্ঞেন - যজ্ঞের দ্বারা, এব - এভাবে, উপজুহ্বতি - আহুতি প্রদান করেন ।।২৫।।
অনুবাদঃকোনও কোনও যোগী দেবতাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করার মাধ্যমে তাঁদের উপাসনা করেন, আর অন্য অনেকে ব্রহ্মরূপ অগ্নিতে সব কিছু নিবেদন করার মাধ্যমে যজ্ঞ করেন।
শ্লোক: 26:
শ্রোত্রাদীনীন্দ্রিয়াণ্যন্যে সংযমাগ্নিষু জুহ্বতি ।
শব্দাদীন্ বিষয়ানন্য ইন্দ্রিয়াগ্নিষু জুহ্বতি ।।২৬।।
শব্দার্থঃ শ্রোত্রাদীনি - শ্রবণাদি, ইন্দ্রিয়াণি - ইন্দ্রিয় সমূহ, অন্যে - অন্যেরা, সংযম- সংযমরূপ, অগ্নিষু - অগ্নিতে, জুহ্বতি - আহুতি দেন, শব্দাদীন্ - শব্দ আদি, বিষয়ান্ - ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় আদি, অন্যে - অন্যেরা, ইন্দ্রিয় - ইন্দ্রিয়রূপ, অগ্নিষু - অগ্নিতে , জুহ্বতি - আহুতি প্রদান করেন ।।২৬।।
অনুবাদঃ কেউ কেউ (শুদ্ধ ব্রহ্মচারীরা) মনঃসংযমরূপ অগ্নিতে শ্রবণ আদি ইন্দ্রিয়গুলিকে আহুতি দেন, আবার অন্য অনেকে ( নিয়মনিষ্ঠ গৃহস্থেরা) শব্দাদি ইন্দ্রিয়ের বিষয়গুলিকে ইন্দ্রিয়রূপ অগ্নিতে আহুতি দেন।
শ্লোক: 27:
সর্বাণীন্দ্রিয়কর্মাণি প্রাণকর্মাণি চাপরে ।
আত্মসংযমযোগাগ্নৌ জুহ্বতি জ্ঞানদীপিতে ।।২৭।।
শব্দার্থঃ সর্বাণি - সমস্ত, ইন্দ্রিয় - ইন্দ্রিয়,কর্মাণি - কর্মসমূহ, প্রাণকর্মাণি - প্রাণবায়ুর কার্যকলাপ, চ - ও, অপরে - অন্যেরা । আত্ম-সংযম- মনঃসংযমের, যোগ-যুক্ত হওয়ার পন্থা, অগ্নৌ - অগ্নিতে, জুহ্বতি - আহুতি দেন, জ্ঞানদীপিতে - আত্মজ্ঞানের দ্বারা প্রদীপ্ত ।।২৭।।
অনুবাদঃ মন ও ইন্দ্রিয়-সংযমের মাধ্যমে যাঁরা আত্মজ্ঞান লাভের প্রয়াসী, তাঁরা তাঁদের সমস্ত ইন্দ্রিয়ের কার্যকলাপ ও প্রাণবায়ু জ্ঞানের দ্বারা প্রদীপ্ত আত্মাসংযমরূপ অগ্নিতে আহুতি দেন।
শ্লোক: 28:
দ্রব্যযজ্ঞাস্তপোযজ্ঞা যোগযজ্ঞাস্তথাপরে ।
স্বাধ্যায়জ্ঞানযজ্ঞাশ্চ যতয়ঃ সংশিতব্রতাঃ ।।২৮।।
শব্দার্থঃ দ্রব্যযজ্ঞাঃ - দ্রব্য অর্পনরূপ যজ্ঞ, তপোযজ্ঞাঃ - তপস্যার মাধ্যমে যজ্ঞ, যোগযজ্ঞাঃ - অষ্টাঙ্গ যোগরূপী যজ্ঞ, তথা - তেমনই, অপরে - অন্যেরা। স্বাধ্যায়- বেদ অধ্যয়নরূপ যজ্ঞ, জ্ঞানযজ্ঞাঃ - দিব্যজ্ঞান লাভরূপ, চ - ও, যতয়ঃ - তত্ত্বজ্ঞান প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ, সংশিতব্রতাঃ - কঠোর ব্রতপরায়ণ ।।২৮।।
অনুবাদঃ কঠোর ব্রত গ্রহণ করে কেউ কেউ দ্রব্য দানরূপ যজ্ঞ করেন। কেউ কেউ তপস্যারূপ যজ্ঞ করেন, কেউ কেউ অষ্টাঙ্গ-যোগরূপ যজ্ঞ করেন এবং অন্য অনেকে পারমার্থিক জ্ঞান লাভের জন্য বেদ অধ্যয়নরূপ যজ্ঞ করেন।
শ্লোক: 29:
অপানে জুহ্বতি প্রাণং প্রাণেহপাণং তথাপরে ।
প্রাণপানগতী রুদ্ধ্বা প্রাণায়ামপরায়ণাঃ ।
অপরে নিয়তাহারাঃ প্রাণান্ প্রাণেষু জুহ্বতি ।।২৯।।
শব্দার্থঃ অপানে - অধোগামী বায়ুতে, জুহ্বতি - আহুতি দেন, প্রাণম্ - ঊর্ধ্বগামী বায়ুকে, প্রাণে - ঊর্ধ্বগামী বায়ুতে, অপাণম্ - অধোগামী বায়ুকে, তথা - তেমনই, অপরে - অন্য কেউ, প্রাণ- প্রাণ বায়ু,অপান - অপমান বায়ু, গতী - গতি, রুদ্ধ্বা - নিরোধ করে, প্রাণায়াম - শ্বাস-প্রশ্বাস সংযমের মাধ্যমে প্রাণায়াম,পরায়ণাঃ - পরায়ণ । অপরে - অন্য কেউ, নিয়ত - নিয়ন্ত্রিত করে, আহারাঃ - আহার, প্রাণান্ - প্রাণবায়ুকে, প্রাণেষু - প্রাণবায়ুতে, জুহ্বতি - আহুতি প্রদান করেন,।।২৯।।
অনুবাদঃ আর যাঁরা প্রাণায়াম চর্চায় আগ্রহী, তাঁরা অপান বায়ুকে প্রাণবায়ুতে এবং প্রাণবায়ুকে অপান বায়ুতে আহুতি দিয়ে অবশেষে প্রাাণ ও অপান বায়ুর গতি রোধ করে সমাধিস্থ হন। কেউ আবার আহার সংযম করে প্রাণবায়ুকে প্রাণবায়ুতেই আহুতি দেন।
আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন: অর্গলাস্তোত্রম্ , Rudrashtakam In Hindi , সূর্য দ্বাদশ নাম স্তোত্রম , বাংলা অর্থসহ শিবতান্ডব স্তোত্রম , Bhagavad Gita - The Song of God, Buddha Quotes on Happiness
শ্লোক: 30:সর্বেহপ্যেতে যজ্ঞবিদো যজ্ঞক্ষপিতকল্মষাঃ ।
যজ্ঞশিষ্টামৃতভুজো যান্তি ব্রহ্ম সনাতনম্ ।।৩০।।
শব্দার্থঃ সর্বে - সকলে, অপি - আপাত দৃষ্টিতে পৃথক হলেও, এতে - এঁরা সকলেই , যজ্ঞবিদঃ -যজ্ঞবিদ, যজ্ঞক্ষপিত- যজ্ঞ অনুষ্ঠানের ফলে নির্মল হয়ে, কল্মষাঃ - পাপ থেকে, যজ্ঞশিষ্ট - এই প্রকার যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফল, অমৃতভুজঃ - অমৃত ভোজনকারীরা, যান্তি - লাভ করেন, ব্রহ্ম - পরম্, সনাতনম্ - সনাতন প্রকৃতি ।।৩০।।
অনুবাদঃ এঁরা সকলেই যজ্ঞতত্ত্ববিৎ এবং যজ্ঞের প্রভাবে পাপ থেকে মুক্ত হয়ে তাঁরা যজ্ঞাবশিষ্ট অমৃত আস্বাদন করেন, এবং তার পর সনাতন প্রকৃতিতে ফিরে যান।
শ্লোক: 31:
নায়ং লোকোহ্স্ত্যযজ্ঞস্য কুতোহন্যঃ কুরুসত্তম ।।৩১।।
শব্দার্থঃ ন - না, অয়ম্ - এই, লোকঃ - জগৎ, অস্তি - আছে, অযজ্ঞস্য - যজ্ঞরহিত ব্যক্তির, কুতঃ - কোথায়, অন্যঃ - অন্য, কুরুসত্তম - হে কুরুশ্রেষ্ঠ ।।৩১।।
অনুবাদঃ হে কুরুশ্রেষ্ঠ ! যজ্ঞ অনুষ্ঠান না করে কেউই এই জগতে সুখে থাকতে পারে না, তা হলে পরলোকে সুখপ্রাপ্তি কি করে সম্ভব ?
শ্লোক: 32:
এবং বহুবিধা যজ্ঞা বিততা ব্রহ্মণো মুখে ।
কর্মজান্ বিদ্ধি তান্ সর্বানেবং জ্ঞাত্বা বিমোক্ষ্যসে ।।৩২।।
শব্দার্থঃ এবম্ - এভাবে, বহুবিধাঃ - বহুবিধ, যজ্ঞাঃ - যজ্ঞ, বিততাঃ - বিস্তৃত, ব্রহ্মণঃ - বেদের, মুখে - মুখে। কর্মজান্ - কর্মজাত, বিদ্ধি - জানবে, তান্ - তাদের, সর্বান্ - সকলকে, এবম্ - এভাবে, জ্ঞাত্বা - জেনে, বিমোক্ষ্যসে - মুক্তি লাভ করতে পারবে ।।৩২।।
অনুবাদঃ এই সমস্ত যজ্ঞই বৈদিক শাস্ত্রে অনুমোদিত হয়েছে এবং এই সমস্ত যজ্ঞ বিভিন্ন প্রকার কর্মজাত। সেগুলিকে যথাযথভাবে জানার মাধ্যমে তুমি মুক্তি লাভ করতে পারবে।
শ্লোক: 33:
শ্রেয়ান্ দ্রব্যময়াদ্ যজ্ঞাজ্ জ্ঞানযজ্ঞঃ পরন্তপ ।
সর্বং কর্মাখিলং পার্থ জ্ঞানে পরিসমাপ্যতে ।।৩৩।।
শব্দার্থঃ শ্রেয়ান্ - শ্রেয়, দ্রব্যময়াৎ - দ্রব্যময়, যজ্ঞাৎ - যজ্ঞ থেকে, জ্ঞানযজ্ঞঃ - জ্ঞানময় যজ্ঞ, পরন্তপ - হে শত্রু দমনকারী, সর্বম্ - সমস্ত, কর্ম - কর্ম, অখিলম্ - পূর্ণরূপে, পার্থ - হে পৃথাপুত্র, জ্ঞানে - জ্ঞানে, পরিসমাপ্যতে - সমাপ্ত হয়।।৩৩।।
অনুবাদঃ হে পরন্তপ ! দ্রব্যময় যজ্ঞ থেকে জ্ঞানময় যজ্ঞ শ্রেয়৷ হে পার্থ ! সমস্ত কর্মই পূর্ণরূপে চিন্ময় জ্ঞানে পরিসমাপ্তি লাভ করে।
শ্লোক: 34:
তদ্ বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া ।
উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ ।।৩৪।।
শব্দার্থঃ তৎ - বিভিন্ন যজ্ঞের সেই জ্ঞান, বিদ্ধি - জানবার চেষ্টা কর, প্রণিপাতেন - সদগুরুর শরণাগত হয়ে, পরিপ্রশ্নেন - ঐকান্তিক বিনম্র প্রশ্নের দ্বারা, সেবয়া - সেবার দ্বারা। উপদেক্ষ্যন্তি - উপদেশ দান করবেন, তে - তোমাকে, জ্ঞানম্ - জ্ঞান, জ্ঞানিনঃ - আত্ম-তত্ত্ববেত্তা, তত্ত্বদর্শিনঃ - তত্ত্ব দ্রষ্টাগণ ।।৩৪।।
অনুবাদঃ সদ্ গুরু শরণাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর। বিনম্র চিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃত্রিম সেবার দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট কর ৷ তা হলে সেই তত্ত্বদ্রষ্টা পুরুষেরা তোমাকে জ্ঞান উপদেশ দান করবেন।
শ্লোক: 35:
যজ্ জ্ঞাত্বা ন পুনর্মোহমেবং যাস্যসি পাণ্ডব ।
যেন ভূতান্যশেষাণি দ্রক্ষ্যস্যাত্মন্যথো ময়ি ।।৩৫।।
শব্দার্থঃ যৎ - যা, জ্ঞাত্বা - জেনে, ন - না, পুনঃ - পুণরায়, মোহম্ - মোহ, এবম্ - এই প্রকার, যাস্যসি - প্রাপ্ত হবে, পাণ্ডব - হে পান্ডুপুত্র। যেন - যার দ্বারা, ভূতানি - জীব সমূহ, অশেষাণি - সমস্ত , দ্রক্ষ্যসি - দর্শন করবে, আত্মনি - পরমাত্মায়, অথো - অর্থাৎ, ময়ি - আমাতে ।।৩৫।।
অনুবাদঃ হে পাণ্ডব ! এভাবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে তুমি আর মোহগ্রস্ত হবে না, কেন না এই জ্ঞানের দ্বারা তুমি দর্শন করবে যে, সমস্ত জীবই আমার বিভিন্ন অংশ অর্থাৎ তারা সকলেই আমার এবং তারা আমাতে অবস্থিত ।
শ্লোক: 36:
অপি চেদসি পাপেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ পাপকৃত্তমঃ ।
সর্বং জ্ঞানপ্লবেনৈব বৃজিনং সন্তরিষ্যসি ।।৩৬।।
শব্দার্থঃ অপি - এমন কি, চেৎ - যদি, অসি - তুমি হও, পাপেভ্যঃ - পাপীদের থেকে, সর্বেভ্যঃ - সমস্ত, পাপকৃত্তমঃ - পাপিষ্ঠ। সর্বম্ - এই প্রকার সমস্ত পাপ কর্ম, জ্ঞানপ্লবেন - দিব্য জ্ঞানরূপ তরণীর দ্বারা, এব - অবশ্যই, বৃজিনম্ - দুঃখ রূপ সমুদ্র, সন্তরিষ্যসি - অতিক্রম করবে ।।৩৬।।
অনুবাদঃ তুমি যদি সমস্ত পাপীদের থেকেও পাপিষ্ঠ বলে গণ্য হয়ে থাক, তা হলেও এই জ্ঞানরূপ তরণীতে আরোহণ করে তুমি দুঃখ-সমুদ্র পার হতে পারবে।
শ্লোক: 37:
যথৈধাংসি সমিদ্ধোহগ্নির্ভস্মসাৎ কুরুতেহর্জুন ।
জ্ঞানাগ্নি সর্বকর্মাণি ভস্মসাৎ কুরুতে তথা ।।৩৭।।
শব্দার্থঃ যথা - যেমন, এধাংসি - দাহ্য কাঠ, সমিদ্ধঃ - সম্যকরূপে প্রজ্জ্বলিত, অগ্নিঃ - অগ্নি, ভস্মসাৎ - ভষ্মীভূত, কুরুতে - করে, অর্জুন - হে অর্জুন। জ্ঞানাগ্নিঃ - জ্ঞানরূপ অগ্নি, সর্বকর্মাণি - সমস্ত জড় কর্মফলকে, ভস্মসাৎ - ভষ্মীভূত , কুরুতে - করে, তথা - তেমনই।।৩৭।।
অনুবাদঃ প্রবলরূপে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি যেমন কাষ্ঠকে ভস্মসাৎ করে, হে অর্জুন ! তেমনই জ্ঞানাগ্নিও সমস্ত কর্মকে দগ্ধ করে ফেলে।
শ্লোক: 38:
ন হি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে ।
তৎ স্বয়ং যোগসংসিদ্ধঃ কালেনাত্মনি বিন্দতি ।।৩৮।।
শব্দার্থঃ ন - কিছুই নেই, হি - অবশ্যই, জ্ঞানেন - জ্ঞানের, সদৃশম্ - তুল্য, পবিত্রম্ - পবিত্র, ইহ - এই জগতে, বিদ্যতে - বিদ্যমান। তৎ - তা, স্বয়ম্ - স্বয়ং, যোগ - যোগে, সংসিদ্ধঃ - সম্যকরূপে সিদ্ধ, কালেন - কালক্রমে, আত্মনি - আত্মায়, বিন্দতি - উপভোগ করেন ।।৩৮।।
অনুবাদঃ এই জগতে চিন্ময় জ্ঞানের মতো পবিত্র আর কিছুই নেই। এই জ্ঞান সমস্ত যোগের পরিপক্ক ফল৷ভগবদ্ভক্তি অনুশীলনের মাধ্যমে যিনি সেই জ্ঞান আয়ত্ত করেছেন, তিনি কালক্রমে আত্মায় পরা শান্তি লাভ করেন।
শ্লোক: 39:
শ্রদ্ধাবান্ লভতে জ্ঞানং তৎপরঃ সংযতেন্দ্রিয়ঃ।
জ্ঞানং লব্ধ্বা পরাং শান্তিমচিরেণাধিগচ্ছতি ।।৩৯।।
শব্দার্থঃ শ্রদ্ধাবান্ - শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি, লভতে - লাভ করেন, জ্ঞানম্ - জ্ঞান, তৎপরঃ - সেই অনুষ্ঠানে অনুরক্ত, সংযত - সংযত, ইন্দ্রিয়ঃ - ইন্দ্রিয় সমূহ। জ্ঞানম্ - জ্ঞান, লব্ধ্বা - লাভ করে, পরাম্ - অপ্রাকৃত, শান্তিম্ - শান্তি, অচিরেণ - অচিরেই, অধিগচ্ছতি - লাভ করেন ।।৩৯।।
অনুবাদঃ সংযতেন্দ্রিয় ও তৎপর হয়ে চিন্ময় তত্ত্বজ্ঞানে শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি এই জ্ঞান লাভ করেন, সেই দিব্য জ্ঞান লাভ করে তিনি অচিরেই পরা শান্তি প্রাপ্ত হন।
শ্লোক: 40:
অজ্ঞশ্চাশ্রদ্দধানশ্চ সংশয়াত্মা বিনশ্যতি ।
নায়ং লোকোহস্তি ন পরো ন সুখং সংশয়াত্মনঃ ।।৪০।।
শব্দার্থঃ অজ্ঞঃ - শাস্ত্র জ্ঞান রহিত মূঢ়, চ - এবং, অশ্রদ্দধানঃ - শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন, চ - ও, সংশয় - সংশয়, আত্মা - ব্যক্তি, বিনশ্যতি - বিনষ্ট হয়। ন - না, অয়ম্ - এই, লোকঃ - লোকে, অস্তি - আছে, ন - না, পরঃ - পরবর্তী জীবনে, ন - না, সুখম্ - সুখ, সংশয় - সংশয়, আত্মনঃ - বক্তির।।৪০।।
অনুবাদঃ অজ্ঞ ও শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তি কখনই ভগবদ্ভক্তি লাভ করতে পারে না। সন্দিগ্ধ চিত্ত ব্যক্তি ইহলোকে সুখভোগ করতে পারে না এবং পরলোকেও সুখভোগ করতে পারে না।
শ্লোক: 41:
যোগসংন্যস্তকর্মাণং জ্ঞানসংছিন্নসংশয়ম্ ।
আত্মবন্তং ন কর্মাণি নিবধ্নন্তি ধনঞ্জয় ।।৪১।।
শব্দার্থঃ যোগ - কর্মযোগে ভগবদ্ভক্তি দ্বারা, সংন্যস্ত - ত্যাগ করেন, কর্মাণম্ - কর্মফল, জ্ঞান - জ্ঞানের দ্বারা, সংছিন্ন - ছেদন করেন, সংশয়ম্ - সংশয়, আত্মবন্তম্ - আত্মবান, ন - না, কর্মাণি - কর্মসমূহ, নিবধ্নন্তি - আবদ্ধ করতে পারে, ধনঞ্জয় - হে ধনঞ্জয়।।৪১।।
অনুবাদঃ অতএব, হে ধনঞ্জয় ! যিনি নিষ্কাম কর্মযোগের দ্বারা কর্মত্যাগ করেন, জ্ঞানের দ্বারা সংশয় নাশ করেন এবং আত্মার চিন্ময় স্বরূপ অবগত হন, তাঁকে কোন কর্মই আবদ্ধ করতে পারে না।
শ্লোক: 42:
তস্মাদজ্ঞানসম্ভূতং হৃৎস্থং জ্ঞানাসিনাত্মনঃ ।
ছিত্ত্বৈনং সংশয়ং যোগমাতিষ্ঠোত্তিষ্ঠ ভারত ।।৪২।।
শব্দার্থঃ তস্মাৎ - অতএব, অজ্ঞানসম্ভূতম্ - অজ্ঞান থেকে উদ্ভূত, হৃৎস্থম্ - হৃদয়স্থিত, জ্ঞান-জ্ঞানের, অসিনা - খড়্গের দ্বারা, আত্মনঃ - আত্মার। ছিত্ত্বা - ছিন্ন করে, এনম্ - এই, সংশয়ম্ - সংশয়, যোগম্ - যোগে, আতিষ্ঠ - অধিষ্ঠিত হও, উত্তিষ্ঠ - যুদ্ধ করার জন্য উঠে দাঁড়াও, ভারত - হে ভরতশ্রেষ্ঠ ।।৪২।।
অনুবাদঃঅতএব, হে ভারত ! তোমার হৃদয়ে যে অজ্ঞানপ্রসূত সংশয়ের উদয় হয়েছে, তা জ্ঞানরূপ খড়গের দ্বারা ছিন্ন কর। যোগাশ্রয় করে যুদ্ধ করার জন্য উঠে দাঁড়াও।
ওঁ তৎসদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে 'জ্ঞানযোগো' নাম চতুর্থোঽধ্যায়ঃ ॥৪॥
Post a Comment