Header Ads


ভক্তি জীবনে অপরাধ সমূহ (নাম অপরাধ,ধাম অপরাধ ও সেবা অপরাধ)

ভক্তি জীবনে অপরাধ সমূহ (নাম অপরাধ,ধাম অপরাধ ও সেবা অপরাধ)


আমাদের ভক্তি জীবনে উন্নতি করতে হলে দশবিধ নাম অপরাধ,ধাম অপরাধ ও সেবা অপরাধ সমূহ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। নিম্নে নাম অপরাধ , ধাম অপরাধ সেবা অপরাধ সমূহ দেওয়া হলো।


দশবিধ নাম অপরাধ


১। যে সমস্ত ভক্ত ভগবানের দিব্য নাম প্রচার করার জন্য নিজেদের সর্বতোভাবে উৎসর্গ করেছেন তাঁদের নিন্দা করা।

২। ‘শিব, ব্রহ্মা আদি দেবতাদের নাম ভগবানের নামের সমান অথবা তা থেকে স্বতন্ত্র বলে মনে করা।

৩। গুরুদেবকে অবজ্ঞা করা।

৪। বৈদিক শাস্ত্র অথবা বৈদিক শাস্ত্রের অনুগামী শাস্ত্রের নিন্দা করা।

৫। ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ কীর্তন করার মাহাত্ম্যকে কাল্পনিক বলে মনে করা।

৬। ভগবানের নামে অর্থবাদ আরোপ করা।

৭। নাম বলে পাপ আচরণ করা।

৮। ‘হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র’ উচ্চারণ করাকে বৈদিক কর্মকান্ডে বর্ণিত পূণ্যকর্ম বলে মনে করা।

৯। শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তিকে ভগবানের দিব্য নামের মহিমা সম্বন্ধে উপদেশ করা।

১০। ভগবানের নামের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস না থাকা এবং তাঁর অগাধ মহিমা শ্রবণ করার পরও বিষয়াসক্তি বজায় রাখা।

দশবিধ ধাম অপরাধ


১। শিষ্যের নিকট শ্রীধামের মাহাত্ম্য প্রকাশকারী গুরুদেবকে অপমান বা অসম্মান প্রদর্শন করা।

২। শ্রীধামকে অস্থায়ী বলে মনে করা।

৩। শ্রীধামবাসী অথবা শ্রীধাম যাত্রীগণের কারও প্রতি উৎপীড়ন বা অনিষ্ট করা অথবা তাঁদেরকে সাধারণ জড়লোক বলে মনে করা।

৪। শ্রীধাম বাসকালে জড়কর্ম করা।

৫। বিগ্রহ অর্চন ও শ্রীনাম কীর্তনকালে অর্থসংগ্রহ করা ও তৎদ্বারা ব্যবসা করা।

৬। শ্রীধামকে বাংলার মতো কোন জড়দেশ বা রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত বলে মনে করা, শ্রীধামকে কোন দেবতার সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত স্থানের সমান বলে মনে করা অথবা শ্রীধামের সীমা নিরূপণের চেষ্টা করা।

৭। শ্রীধাম বাসকালে পাপ কর্ম করা।

৮। বৃন্দাবন ও নবদ্বীপের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা।

৯। শ্রীধামের মাহাত্ম্য প্রকাশকারী শাস্ত্রের নিন্দা করা।

১০। শ্রীধামের মাহাত্ম্যকে কল্পিত মনে করে অবিশ্বাস করা।

সেবা অপরাধ-ভগবৎ সেবার বিধি-নিষেধ


বৈদিক শাস্ত্রে-৩২টি সেবা অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে-

১। গাড়িতে করে বা পালকিতে করে অথবা জুতো পায়ে দিয়ে ভগবানের মন্দিরে প্রবেশ করা উচিত নয়।

২। পরমেশ্বর ভগবানের প্রসন্নতার জন্য জন্মাষ্টমী, রথযাত্রা ইত্যাদি মহোৎসব পালনে অবহেলা করা উচিত নয়।

৩। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে দন্ডবৎ প্রণতি নিবেদন করতে অবহেলা করা উচিত নয়।

৪। খাওয়ার পর হাত-পা না ধুয়ে ভগবানের মন্দিরে প্রবেশ করা উচতি নয়।

৫। দূষিত অবস্থায় মন্দিরে প্রবেশ করা উচিত নয়।

৬। এক হাতে দন্ডবৎ প্রণাম করা উচিত নয়।

৭। শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে পরিক্রমা করা উচিত নয়। মন্দির পরিক্রমা করার বিধি হচ্ছে, ভগবানের শ্রীমূর্তিকে দক্ষিণ দিকে রেখে প্রদক্ষিণ করা। প্রতিদিন অন্তত তিনবার মন্দির পরিক্রমা করা উচিত।

৮। শ্রীবিগ্রহের সামনে পা ছড়িয়ে বসা উচিত নয়।

৯। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে হাত দিয়ে হাঁটু, কনুই অথবা পায়ের গোড়ালি ধরে বসা উচিত নয়।

১০। ভগবানের সামনে প্রসাদ খাওয়া উচিত নয়।

১১। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে শোয়া উচিত নয়।

১২। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে মিথ্যা কথা বলা উচিত নয়।

১৩। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে জোরে জোরে কথা বলা উচিত নয়।

১৪। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে অপরের সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়।

১৫। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে ক্রন্দন বা চিৎকার করা উচিত নয়।

১৬। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে ঝগড়া করা উচিত নয়।

১৭। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে কাউকে তিরস্কার করা উচিত নয়।

১৮। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে ভিক্ষুককে ভিক্ষা দান করা উচিত নয়।

১৯। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে কাউকে কঠোর বচন বলা উচিত নয়।

২০। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে চর্ম ধারণ করা উচিত নয় অর্থাৎ চর্ম নির্মিত বস্ত্র পরিধান করে ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে যাওয়া উচিত নয়।

২১। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে অন্য কারও স্তুতি ব প্রশংসা করা উচিত নয়।

২২। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে খারাপ কথা বলা উচিত নয়।

২৩। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে বায়ু ত্যাগ করা উচিত নয়।

২৪। ক্ষমতা অনুসারে ভগবানের পূজা করা থেকে বিরত থাকা উচিত নয়।

২৫। শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন না করে কোন কিছু খাওয়া উচিত নয়।

২৬। খাবার প্রস্তুত হওয়ার পর তা ভগবানকে নিবেদন না করে কাউকে দেওয়া উচিত নয়।

২৭। খাবার প্রস্তুত হওয়ার পর তা ভগবানকে নিবেদন না করে কাউকে দেওয়া উচিত নয়।

২৮। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের দিকে পিছন ফিরে বসা উচিত নয়।

২৯। নিঃশব্দে গুরুদেবকে প্রণতি নিবেদন করা উচিত নয়, অর্থাৎ গুরুদেবকে দন্ডবৎ করার সময় উচ্চস্বরে ‘গুরু প্রণতি’ উচ্চারণ করা উচিত

৩০। গুরুদেবের সামনে নিজের প্রশংসা করা উচিত নয়।

৩১। গুরুদেবের সামনে নিজের প্রশংসা করা উচিত নয়।

৩২। ভগবানের শ্রীবিগ্রহের সামনে অন্যান্য দেবদেবীর নিন্দা করা উচিত নয়।


দশবিধ নামাপরাধ শ্লোক

               শ্রীল ভক্তি সুন্দর গোবিন্দ দেব গোস্বামী মহারাজ


হরিনাম মহামন্ত্র সর্ব্বমন্ত্রসার ।

যাঁদের করুণাবলে জগতে প্রচার ॥

সেই নামপরায়ণ সাধু, মহাজন ।

তাঁহাদের নিন্দা না করিহ কদাচন ॥১॥


ব্রজেন্দ্রনন্দন কৃষ্ণ সর্ব্বেশ্বরেশ্বর ।

মহেশ্বর আদি তাঁর সেবন-তৎপর ॥

নাম চিন্তামণি কৃষ্ণ-চৈতন্য-স্বরূপ ।

ভেদজ্ঞান না করিবে লীলা-গুণ-রূপ ॥২॥


“গুরু কৃষ্ণ রূপ হন শাস্ত্রের প্রমাণে ।

গুরুরূপে কৃষ্ণ কৃপা করে ভাগ্যবানে” ॥

সে রুগুতে মর্ত্ত্যবুদ্ধি অবজ্ঞাদি ত্যজি ।

ইষ্টলাভ কর, নিরন্তর নাম ভজি ॥৩॥


শ্রুতি, শ্রুতিমাতা-সহ সাত্বত পুরাণ ।

শ্রীনাম-চরণ-পদ্ম করে নীরাজন ॥

সেই শ্রুতিশাস্ত্র যেবা করয়ে নিন্দন

সে অপরাধীর সঙ্গ করিবে বর্জ্জন ॥৪॥


নামের মহিমা সর্ব্বশাস্ত্রেতে বাখানে ।

অতিস্তুতি, হেন কভু না ভাবিহ মনে ॥

অগস্ত্য, অনন্ত, ব্রহ্মা, শিবাদি সতত ।

য়ে নাম-মহিমা-গাথা সংকীর্ত্তন-রত ॥

সে নাম-মহিমা-সিন্ধু কে পাইবে পার ? ।

অতিস্তুতি বলে যেই—সেই দুরাচার ॥৫॥


কৃষ্ণ-নামাবলী নিত্য গোলোকের ধন ।

কল্পিত, প্রাকৃত, ভাবে—অপরাধীজন ॥৬॥


নামে সর্ব্বপাপ-ক্ষয় সর্ব্বশাস্ত্রে কয় ।

সারাদিন পাপ করি সেই ভরসায়—

এমত দুর্ব্বুদ্ধি যার সেই অপরাধী ।

মায়া-প্রবঞ্চিত, দুঃখ ভুঞ্জে নিরবধি ॥৭॥
অতুল্য শ্রীকৃষ্ণনাম পূর্ণরসনিধি ।

তাঁর সম না ভাবিহ শুভকর্ম্ম আদি ॥৮॥


নামে শ্রদ্ধাহীন-জন-বিধাতা-বঞ্চিত ।

তারে নাম দানে অপরাধ সুনিশ্চিত ॥৯॥


শুনিয়াও কৃষ্ণনাম-মাহাত্ম্য অপার ।

যে প্রীতি-রহিত, সেই নরাধম ছার ॥

অহংতা মমতা যার অন্তরে বাহিরে ।

শুদ্ধ কৃষ্ণনাম তার কভু নাহি স্ফুরে ॥১০॥


এই দশ-অপরাধ করিয়া বর্জ্জন ।

যে সুজন করে হরিনাম সংকীর্ত্তন ॥

অপূর্ব্ব শ্রীকৃষ্ণপ্রেম লভ্য তার হয় ।

নাম প্রভু তাঁর হৃদে নিত্য বিলসয় ॥১১॥


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.