Header Ads


পাশাঙ্কুশা (পাপাঙ্কুশা) একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য - Pashankusha/Papankusha Ekadashi

পাশাঙ্কুশা (পাপাঙ্কুশা) একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য


আশ্বিন শুক্লাপঞ্জীয়া পাশাঙ্কুশা একাদশী মাহাত্মা ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে বর্ণিত আছে। যুধিষ্ঠির বললেন – হে মধুসূদন! আশ্বিন শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি ? তদুত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বললেন – হে রাজেন্দ্র! আশ্বিনের শুক্লপক্ষীয়া একাদশী 'পাশাঙ্কুশা' নামে প্রসিদ্ধা। কেউ কেউ একে পাপাঙ্কুশাও বলে থাকেন। এই একাদশীতে অভিষ্ট ফল লাভের জন্য মুক্তিদাতা পদ্মনাভের পূজা করবে। শ্রীহরির নাম-সংকীর্তন দ্বারা পৃথিবীর সর্ব তীর্থের ফল লাভ হয়।

বদ্ধ জীব মোহবশত বহু পাপকর্ম করেও ভগবান শ্রীহরির শরণাপন্ন হয়ে প্রণাম নিবেদনে নরকযাতনা থেকে রক্ষা পায়। এই একাদশীর মহিমা শোনার ফলে নিদারুণ যমদণ্ড থেকে মুক্তি লাভ হয়। শ্রীহরিবাসর ব্রতের মতো ত্রিভুবনে পবিত্রকারী আর কোন বস্তু নেই। হাজার হাজার অশ্বমেধ যজ্ঞ এবং শত শত রাজসূয় যজ্ঞ এই ব্রতের শতভাগের একাংশের সমান হয় না। এই ব্রত পালনে স্বর্গবাস হয়। মুক্তি, দীর্ঘায়ু, আরোগ্য, সুপত্নী, বন্ধু প্রভৃতি অনায়াসে লাভ করা যায়। হে রাজন! গয়া, কাশী এমনকি কুরুক্ষেত্রও শ্রীহরিবাসর অপেক্ষা পুণ্যস্থান নয়। হে ভূপাল! একাদশী উপবাস ব্রত করে রাত্রি জাগরণ করলে অনায়াসে বিষ্ণুলোকে গতি হয়। এই পাশাঙ্কুশা ব্রতের ফলে মানুষ সর্বপাপ যুক্ত হয়ে গোলোকে গমন করতে সমর্থ হয়।

এই পবিত্র দিনে যিনি স্বর্ণ, তিল, গাভী, অন্ন, বস্ত্র, জল, ছত্র, পাদুকা দান করেন, তাঁকে আর যমালয়ে যেতে হয় না। যারা এসকল পুণ্যকার্য করে না, তাদের জীবন কামারশালার হাপরের মতো বিফল। নিষ্ঠার সাথে এই ব্রত পালনে উচ্চকুলে নিরোগ ও দীর্ঘায়ু শরীর লাভ হয়। অত্যন্ত পাপাচারীও যদি এই পুণ্যব্রতের অনুষ্ঠান করে তবে সেও রৌরব নামক মহাযন্ত্রনা থেকে মুক্ত হয়ে বৈকুণ্ঠসুখ লাভ করে। কৃষ্ণভক্তি লাভত শ্রীএকাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিতা ফল লাভ হয়ে থাকে।


একাদশী পালনের নিয়মাবলী


ভোরে শয্যা ত্যাগ করে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, “হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।” একাদশীতে গায়ে তেল মাখা, সাবান মাখা, পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যাভাষণ, ক্রোধ, দিবানিদ্রা, সাংসারিক আলাপাদি বর্জনীয়। এই দিন গঙ্গা আদি তীর্থে স্নান করতে হয়। মন্দির মার্জন, শ্রীহরির পূজার্চনা, স্তবস্তুতি, গীতা-ভাগবত পাঠ আলোচনায় বেশি করে সময় অতিবাহিত করতে হয়।

এই তিথিতে গোবিন্দের লীলা স্মরণ এবং তাঁর দিব্য নাম শ্রবণ করাই হচ্ছে সর্বোত্তম। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের একাদশীতে পঁশিচ মালা বা যথেষ্ট সময় পেলে আরো বেশি জপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশীর দিন ক্ষৌরকর্মাদি নিষিদ্ধ। একাদশী ব্রত পালনে ধর্ম অর্থ, কাম, মোক্ষ আদি বহু অনিত্য ফলের উল্লেখ শাস্ত্রে থাকলেও শ্রীহরিভক্তি বা কৃষ্ণপ্রেম লাভই এই ব্রত পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ভক্তগণ শ্রীহরির সন্তোষ বিধানের জন্যই এই ব্রত পালন করেন। পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও বৈষ্ণবস্মৃতিরাজ শ্রীহরিভক্তিবিলাস আদি গ্রন্থে এ সকল কথা বর্ণিত আছে।

বছরে ছাব্বিশটি একাদশী আসে। সাধারণত বার মাসে চব্বিশটি একাদশী। এইগুলি হচ্ছে-


১. উৎপন্না একাদশী                      ২. মোক্ষদা একাদশী

৩. সফলা একাদশী                       ৪. পুত্রদা একাদশী

৫. ষটতিলা একাদশী                     ৬. জয়া একাদশী

৭. বিজয়া একাদশী                      ৮. আমলকী একাদশী

৯. পাপমোচনী একাদশী                ১০. কামদা একাদশী

১১. বরুথিনী একাদশী                 ১২. মোহিনী একাদশী

১৩. অপরা একাদশী                   ১৪. পাণ্ডবা নির্জলা একাদশী

১৫. যোগিনী একাদশী                 ১৬. শয়ন একাদশী

১৭. কামিকা একাদশী                 ১৮. পবিত্রারোপণী একাদশী

১৯. অন্নদা একাদশী                   ২০. পার্শ্ব (পরিবর্তিনী) একাদশী

২১. ইন্দিরা একাদশী                   ২২. পাশাঙ্কুশা (পাপাঙ্কুশা) একাদশী

২৩. রমা একাদশী                     ২৪. উত্থান (প্রবোধিনী) একাদশী


কিন্তু যে বৎসর পুরুষোত্তমাস, অধিমাস বা মলমাস থাকে, সেই বৎসর পদ্মিনী পরমা নামে আরও দুটি একাদশীর আবির্ভাব হয়। যারা যথাবিধি একাদশী উপবাসে অসমর্থ অথবা ব্রতদিনে সাধুসঙ্গে হরিকথা শ্রবণে অসমর্থ, তারা এই একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করলে অসীম সৌভাগ্যের অধিকারী হবেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.