কামদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য - Kamoda Ekadashi
কামদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
পূর্বে মহর্ষি বশিষ্ঠ মহারাজ দিলীপের কৌতুহল নিবারণের জন্য এই ব্রতকথা কীর্তন করেছিলেন। ঋষি বশিষ্ঠ বললেন – হে মহারাজ! চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম ‘কামদা'। এই তিথি পাপনাশক ও পুণ্যদায়িনী। পূর্বকালে মনোরম নাগপুরে স্বর্ণনির্মিত গৃহে বিষধর নাগেরা বাস করত। তাদের রাজা ছিলেন পুণ্ডরীক। গন্ধর্ব, কিন্নর ও অপ্সরাদের দ্বারা তিনি সেবিত হতেন। সেই পুরীমধ্যে অপ্সরা শ্রেষ্ঠ ললিতা ও ললিত নামে গন্ধর্ব স্বামী-স্ত্রী রূপে ঐশ্বর্য্যপূর্ণ এক গৃহে পরমসুখে দিনযাপন করত।
একদিন পুণ্ডরীকের রাজসভায় ললিত একা গান করছিল। এমন সময় ললিতার কথা তার মনে পড়ল। ফলে সঙ্গীতের স্বর-লয়-তাল- মানের বিপর্যয় ঘটল। কর্কটক নামে এক নাগ ললিতের মনোভাব বুঝতে পারল। গানের ছন্দভঙ্গের ব্যাপারটি সে পুণ্ডরীক রাজার কাছে জানাল। তা শুনে সর্পরাজ ক্রোধভরে কামাতুর ললিতকে — রে দুর্যতি! তুমি রাক্ষস হও' বলে অভিশাপ দান করল।
সঙ্গে সঙ্গে সেই ললিত ভয়ঙ্কর রাক্ষসমূর্তি ধারণ করল। তার হাত দশ যোজন বিস্তৃত, মুখ পর্বত গুহাতুল্য, চোখ দুটি প্রজ্বলিত আগুনের মতো, ঊর্ধ্বে আট যোজন বিস্তৃত প্রকাণ্ড এক শরীর সে লাভ করল। ললিতের এরকম ভয়ঙ্কর রাক্ষস শরীর দেখে ললিতা মহাদুঃখে চিন্তায় ব্যাকুল হলেন। স্বেচ্ছাচারী রাক্ষস ললিত দুর্গম বনে ভ্রমণ করতে লাগল। ললিতা কিন্তু তার সঙ্গ ত্যাগ করল না। ললিত নির্দয়ভাবে মানুষ ভক্ষণ করত। এই পাপের ফলে তার মনে বিন্দুমাত্র শান্তি ছিল না। পতির সেই দুরাবস্থা দেখে ব্যথিত চিত্তে রোদন করতে করতে ললিতা গভীর বনে প্রবেশ করল। একদিন ললিতা বিন্ধ্যপর্বতে উপস্থিত হল। সেখানে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির আশ্রম দর্শন করে মুনির কাছে হাজির হল। তার চরণে প্রণাম করে সেখানে দাঁড়িয়ে রইল।
মুনিবর জিজ্ঞাসা করলেন – হে সুন্দরী! তুমি কে, কার কন্যা, কি কারণেই বা এই গভীর বনে এসেছ? তা সত্য করে বল। তদুত্তরে ললিতা বলল – হে প্রভু! আমি বীরধন্যা গন্ধর্বের কন্যা। আমার নাম ললিতা। আমার পতির পিশাচত্ব দূর হয় এমন কোন উপায় জানবার জন্য এখানে এসেছি। তখন ঋষি বললেন – চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের কামদা নামে যে একাদশী আছে, তুমি সেই ব্রত যথাবিধি পালন কর। এই ব্রতের পুণ্যফল তোমার স্বামীকে অর্পণ করলে তৎক্ষণাৎ তার সমস্ত পাপ বিনষ্ট হবে।
বশিষ্ঠ ঋষি বললেন – হে মহারাজ দিলীপ ! মুনির কথা শুনে ললিতা আনন্দ সহকারে কামদা একাদশী পালন করল। তারপর ব্রাহ্মণ ও বাসুদেবের সামনে পতির উদ্ধারের জন্য — “আমি যে কামদা একাদশীর ব্রত পালন করেছি, তার সমস্ত ফল আমার পতির উদ্দেশ্যে অর্পণ করলাম। এই পুণ্যের প্রভাবে তাঁর পিশাচত্ব দূর হোক।' এই কথা উচ্চারণ মাত্রই ললিত শাপ মুক্ত হয়ে দিব্য দেহ প্রাপ্ত হল। পুনরায় গন্ধর্ব দেহ লাভ করে ললিতার সাথে সে মিলিত হল। তারা বিমানে করে গন্ধর্বলোকে গমন করল।
হে মহারাজ দিলীপ এই ব্রত যত্নসহকারে সকলেরই পালন করা কর্তব্য। এই ব্রত ব্রহ্মহত্যা পাপবিনাশক এবং পিশাচত্ব মোচনকারী। এই ব্রত কথা শ্রদ্ধাপূর্বক পাঠ ও শ্রবণে বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
একাদশী পালনের নিয়মাবলী
ভোরে শয্যা ত্যাগ করে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, “হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।” একাদশীতে গায়ে তেল মাখা, সাবান মাখা, পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যাভাষণ, ক্রোধ, দিবানিদ্রা, সাংসারিক আলাপাদি বর্জনীয়। এই দিন গঙ্গা আদি তীর্থে স্নান করতে হয়। মন্দির মার্জন, শ্রীহরির পূজার্চনা, স্তবস্তুতি, গীতা-ভাগবত পাঠ আলোচনায় বেশি করে সময় অতিবাহিত করতে হয়।
এই তিথিতে গোবিন্দের লীলা স্মরণ এবং তাঁর দিব্য নাম শ্রবণ করাই হচ্ছে সর্বোত্তম। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের একাদশীতে পঁশিচ মালা বা যথেষ্ট সময় পেলে আরো বেশি জপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশীর দিন ক্ষৌরকর্মাদি নিষিদ্ধ। একাদশী ব্রত পালনে ধর্ম অর্থ, কাম, মোক্ষ আদি বহু অনিত্য ফলের উল্লেখ শাস্ত্রে থাকলেও শ্রীহরিভক্তি বা কৃষ্ণপ্রেম লাভই এই ব্রত পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য। ভক্তগণ শ্রীহরির সন্তোষ বিধানের জন্যই এই ব্রত পালন করেন। পদ্মপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, বরাহপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও বৈষ্ণবস্মৃতিরাজ শ্রীহরিভক্তিবিলাস আদি গ্রন্থে এ সকল কথা বর্ণিত আছে।
বছরে ছাব্বিশটি একাদশী আসে। সাধারণত বার মাসে চব্বিশটি একাদশী। এইগুলি হচ্ছে-
১. উৎপন্না একাদশী ২. মোক্ষদা একাদশী
৩. সফলা একাদশী ৪. পুত্রদা একাদশী
৫. ষটতিলা একাদশী ৬. জয়া একাদশী
৭. বিজয়া একাদশী ৮. আমলকী একাদশী
৯. পাপমোচনী একাদশী ১০. কামদা একাদশী
১১. বরুথিনী একাদশী ১২. মোহিনী একাদশী
১৩. অপরা একাদশী ১৪. পাণ্ডবা নির্জলা একাদশী
১৫. যোগিনী একাদশী ১৬. শয়ন একাদশী
১৭. কামিকা একাদশী ১৮. পবিত্রারোপণী একাদশী
১৯. অন্নদা একাদশী ২০. পার্শ্ব (পরিবর্তিনী) একাদশী
২১. ইন্দিরা একাদশী ২২. পাশাঙ্কুশা (পাপাঙ্কুশা) একাদশী
২৩. রমা একাদশী ২৪. উত্থান একাদশী
কিন্তু যে বৎসর পুরুষোত্তমাস, অধিমাস বা মলমাস থাকে, সেই বৎসর পদ্মিনী ও পরমা নামে আরও দুটি একাদশীর আবির্ভাব হয়। যারা যথাবিধি একাদশী উপবাসে অসমর্থ অথবা ব্রতদিনে সাধুসঙ্গে হরিকথা শ্রবণে অসমর্থ, তারা এই একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করলে অসীম সৌভাগ্যের অধিকারী হবেন।
আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন: চরণামৃত-গ্রহণমন্ত্র , শ্রীতুলসী আরতি , শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর প্রণাম মন্ত্র , শ্রী মাতৃ প্রনাম মন্ত্র , শ্রীরাধা প্রণাম , শ্রী গোবিন্দ প্রণাম মন্ত্র, বাংলা অর্থসহ শিবতান্ডব স্তোত্রম , মহিষাসুরমর্দিনী স্ত্রোত্র শ্রী পিতৃদেব প্রনাম মন্ত্র,
Post a Comment