Header Ads


ত্রয়োদশ অধ্যায় - ক্ষেত্র-ক্ষেত্রজ্ঞ-বিভাগ যোগ

ত্রয়োদশ অধ্যায়

ওঁ তৎ সৎ

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়ঃ

শ্রীমদ্ভগবদ গীতা

ত্রয়োদশ অধ্যায় - ক্ষেত্র-ক্ষেত্রজ্ঞ-বিভাগ যোগ।


শ্লোক:1:

অর্জুন উবাচঃ

প্রকৃতিং পুরুষং চৈব ক্ষেত্রং ক্ষেত্রজ্ঞমেব চ ।

এতদ্ বেদিতু্মিচ্ছামি জ্ঞানং জ্ঞেয়ং চ কেশব ॥১॥


শব্দার্থঃ অর্জুন উবাচঃ — অর্জুন বললেন, প্রকৃতিম্ — প্রকৃতি, পুরুষম—পুরুষ; চ—ও, এব—অবশ্যই; ক্ষেত্রম্ – ক্ষেত্র; ক্ষেত্রজ্ঞম্ – ক্ষেত্রজ্ঞ, এব অবশ‍্যই; চ–ও; এতৎ— এই সমস্ত; বেদিতুম্—জানতে; ইচ্ছামি— ইচ্ছা করি; জ্ঞানম্ – জ্ঞান, জ্ঞেয়ম্ — জ্ঞেয়; চ — ও, কেশব— হে কৃষ্ণ।


অনুবাদ:- অর্জুন বলিলেন- হে কেশব! আমি প্রকৃতি, পুরুষ, ক্ষেত্র, ক্ষেত্রজ্ঞ, জ্ঞান ও জ্ঞেয়- এই সমস্ত তত্ত্ব জানতে ইচ্ছা করি।


শ্লোক:2:

শ্রীভগবানুবাচঃ

ইদং শরীরং কৌন্তেয় ক্ষেত্রমিত্যভিধীয়তে ।

এতদ্ যো বেত্তি তং প্রাহুঃ ক্ষেত্রজ্ঞ ইতি তদ্বিদঃ ॥২॥


শব্দার্থঃ শ্রীভগবান্ উবাচ – পরমেশ্বর ভগবান বললেন; ইদম্—এই; শরীরম্ - শরীর; কৌন্তেয়—হে কুন্তীপুত্ৰ; ক্ষেত্রম – ক্ষেত্র, ইতি—এভাবে; অভিধীয়তে— অভিহিত হয়। এতৎ — এই, যঃ—যিনি, বেত্তি— জানেন; তম্ — তাকে, প্রাহুঃ — বলা হয়, ক্ষেত্রজ্ঞ – ক্ষেত্রজ্ঞ, ইতি — এভাবে, তদ্বিদঃ — যিনি জানেন।


অনুবাদ:- পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে কৌন্তেয়! এই শরীর ক্ষেত্র নামে অভিহিত এবং যিনি এই শরীরকে জানেন, তাঁকে ক্ষেত্রজ্ঞ বলা হয়।


শ্লোক:3:

ক্ষেত্রজ্ঞং চাপি মাং বিদ্ধি সর্বক্ষেত্রেষু ভারত ।

ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞয়োর্জ্ঞানং যত্তজ্জ্ঞানং মতং মম ॥৩॥


শব্দার্থঃ ক্ষেত্রজ্ঞম্—ক্ষেত্রজ্ঞ; চ–ও: অপি—অবশ্যই; মাম—আমাকে, বিদ্ধি—জানবে, সর্ব–সমস্ত ক্ষেত্রেষু – ক্ষেত্রে; ভারত– হে ভারত; ক্ষেত্র—ক্ষেত্র (শরীর); ক্ষেত্রজ্ঞয়োঃ—ক্ষেত্রজ্ঞ জ্ঞানম্ - জ্ঞান; যৎ— যে: তৎ— সেই, জ্ঞানম্ –জ্ঞান; মতম্ – অভিমত, মম - আমার।


অনুবাদ:- হে ভারত! আমাকেই সমস্ত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রজ্ঞ বলে জানবে এবং ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞ সম্বন্ধে যে জ্ঞান, সেই জ্ঞানই আমার অভিমত।


শ্লোক:4:

তৎ ক্ষেত্রং যচ্চ যাদৃক্ চ যদ্বিকারি যতশ্চ যৎ ।

স চ যো যৎপ্রভাবশ্চ তৎ সমাসেন মে শৃণু ॥৪॥


শব্দার্থঃ তৎ - সেই; ক্ষেত্রম্-ক্ষেত্র, যত্‍– যা; চ–ও; যাদৃক্ – যে রকম: চ–ও, যত্‍ যেরূপ; বিকারি–বিকার, যতঃ— যার থেকে, চ–ও যৎ- যা, সঃ — তিনি; চ– ও, যঃ—যিনি, যৎ — যেরূপ; প্রভাবঃ – প্রভাব; চ–ও; তৎ— সেই; সমাসেন— সংক্ষেপে; যে—আমার থেকে, শৃণু - শ্রবণ কর।


অনুবাদ:- সেই ক্ষেত্র কি, তার কি প্রকার, তার বিকার কি, তা কার থেকে উৎপন্ন হয়েছে, সেই ক্ষেত্রজ্ঞের স্বরূপ কি এবং তার প্রভাব কি, সেই সব সংক্ষেপে আমার কাছে শ্রবণ কর।


শ্লোক:5:

ঋষিভির্বহুধা গীতং ছন্দোভির্বিবিধৈঃ পৃথক্ ।

ব্রহ্মসূত্রপদৈশ্চৈব হেতুমদ্ভির্বিনিশ্চিতৈঃ ॥৫॥


শব্দার্থঃ ঋষিভিঃ—ঋষিগণ কর্তৃক; বহুধা—বহু প্রকারে; গীতম্ — বর্ণিত হয়েছে; ছন্দোভিঃ —বৈদিক ছন্দের দ্বারা, বিৰিধৈঃ—বিবিধ; পৃথক - পৃথকভাবে। ব্রহ্মসূত্র–বেদান্তের, পদৈঃ—সূত্রের দ্বারা; চ–ও; এব– অবশ্যই, হেতুমদ্ভিঃ—যুক্তিযুক্ত, বিনিশ্চিতৈঃ — নিশ্চিতভাবে।


অনুবাদ:- এই ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞের জ্ঞান ঋষিগণ কর্তৃক বিবিধ বেদবাক্যের দ্বারা পৃথক পৃথকভাবে বর্ণিত হয়েছে। বেদান্তসূত্রে তা বিশেষভাবে যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত সহকারে বর্ণিত হয়েছে।


শ্লোক:6:

মহাভূতান্যহঙ্কারো বুদ্ধিরব্যক্তমেব চ ।

ইন্দিয়াণি দশৈকং চ পঞ্চ চেন্দ্রিয়গোচরাঃ ॥৬॥


শব্দার্থঃ মহাভূতানি - মহাভূতসমূহঃ, অহঙ্কারঃ—অহঙ্কার; বৃদ্ধিঃ - বুদ্ধি, অব্যক্ত - অব্যক্ত, এব— অবশ্যই, চ –ও। ইন্দ্রিয়াণি—ইন্দ্রিয়সমূহ: দশৈকম্ — একাদশ: চ – ও; পঞ্চ— পাঁচ; চ – ও; ইন্দ্রিয়গোচরাঃ — ইন্দ্রিয়ের বিষয়।


শ্লোক:7:

ইচ্ছা দ্বেষঃ সুখং দুঃখং সংঘাতশ্চেতনা ধৃতিঃ। এতৎ ক্ষেত্রং সমাসেন সবিকারমুদাহৃতম্॥৭॥


শব্দার্থঃ ইচ্ছা–ইচ্ছা; দ্বেষঃ — দ্বেষ, সুখম্ - সুখ, দুঃখম্ – দুঃখ, সংঘাতঃ — সমষ্টি, চেতনা–চেতনা, ধৃতি: –ধৈর্য, এতত্ — এই সমস্ত; ক্ষেত্রম্ – ক্ষেত্র; সমাসেন — সংক্ষেপে, সবিকারম্—বিকারযুক্ত; উদাহৃতম্ – বর্ণিত হল।


অনুবাদ:- পঞ্চ-মহাভূত, অহঙ্কার, বুদ্ধি, অব্যক্ত, দশ ইন্দিয় ও মন, ইন্দিয়ের পাঁচটি বিষয়, ইচ্ছা, দ্বেষ, সুখ, দুঃখ, সংঘাত অর্থাৎ পঞ্চমহাভূতের পরিণামরূপ দেহ, চেতনা ও ধৃতি- এই সমস্ত বিকারযুক্ত ক্ষেত্র সংক্ষেপে বর্ণিত হল।


শ্লোক:8:

অমানিত্বমদম্ভিত্বমহিংসা ক্ষান্তিরার্জবম্ ।

আচার্যোপাসনং শৌচং স্থৈর্যমাত্মবিনিগ্রহঃ ॥৮॥


শব্দার্থঃ অমানিত্বম্ - মানশূন‍্যতা, অদম্ভিত্বম্ - দম্ভহীণতা, অহিংসা - অহিংসা, ক্ষান্তিঃ - সহিষ্ণুতা, আর্জবম্ - সরলতা, আচার্য-উপাসনম্ - সদগুরুর সেবা, শৌচম্ - শৌচ, স্থৈর্যম্ - স্থৈর্য, আত্মবিনিগ্রহঃ - আত্মসংযম॥৮॥


শ্লোক:9:

ইন্দ্রিয়ার্থেষু বৈরাগ্যমনহংঙ্কার এব চ ।

জন্মমৃত্যুজরাব্যাধিদুঃখদোষানুদর্শনম্ ॥৯॥


শব্দার্থঃ ইন্দ্রিয়-অর্থেষু - ইন্দ্রিয় বিষয়ে, বৈরাগ্যম্ - বৈরাগ্য, অনহংঙ্কারঃ - অহংকার শূন‍্য, এব - অবশ্যই, চ - ও। জন্ম- জন্ম,মৃত্যু- মৃত্যু, জরা- বার্ধক্য, ব্যাধি- ব‍্যাধি, দুঃখ- দুঃখ, দোষ- দোষ, অনুদর্শনম্ - দর্শন ॥৯॥


শ্লোক:10:

অসক্তিরনভিষ্বঙ্গঃ পুত্রদারগৃহাদিষু ।

নিত্যং চ সমচিত্তত্বমিষ্টানিষ্টোপপত্তিষু ॥১০॥


শব্দার্থঃ অসক্তিঃ - আসক্তি রহিত, অনভিষ্বঙ্গঃ - অভিনিবেশ রহিত, পুত্র- পুত্র, দার- পত্নী, গৃহ-আদিষু - গৃহ আদিতে। নিত্যম্ - সর্বদা, চ - ও, সম-চিত্তত্বম্ - সমভাবাপন্ন, ইষ্ট- বাঞ্চিত, অনিষ্ট- অবাঞ্ছিত, উপপত্তিষু - লাভ করে॥১০॥


শ্লোক:11:

ময়ি চানন্যযোগেন ভক্তিরব্যভিচারিণী ।

বিবিক্তদেশসেবিত্বমরতির্জনসংসদি ॥১১॥


শব্দার্থঃ ময়ি - আমাতে, চ - ও, অনন্যযোগেন - অনন্য নিষ্ঠা সহকারে, ভক্তিঃ - ভক্তি, অব্যভিচারিণী - অপ্রতিহতা। বিবিক্ত- নির্জন, দেশ- স্থান, সেবিত্বম্ - প্রিয়তা, অরতিঃ - অরুচি, জনসংসদি - জনাকীর্ণ স্থানে ॥১১॥


শ্লোক:12:

অধ্যাত্মজ্ঞাননিত্যত্বং তত্ত্বজ্ঞানার্থদর্শনম্ ।

এতজ্ জ্ঞানমিতি প্রোক্তমজ্ঞানং যদতোহন্যথা ॥১২॥


শব্দার্থঃ অধ্যাত্ম- অধ্যাত্ম, জ্ঞান- জ্ঞানে, নিত্যত্বম্ - নিত‍্যতা, তত্ত্বজ্ঞান- তত্ত্ব জ্ঞানের অর্থ- প্রয়োজন, দর্শনম্ - অনুসন্ধান। এতৎ - এই সমস্ত, জ্ঞানম্ - জ্ঞান, ইতি - এভাবে, প্রোক্তম্ - কথিত হয়, অজ্ঞানম্ - অজ্ঞান, যৎ - যা , অতঃ - এর থেকে, অন্যথা - বিপরীত ॥১২॥


অনুবাদ:- অমানিত্ব, দম্ভশূন্যতা, অহিংসা, সহিষ্ণুতা, সরলতা, সদ্ গুরুর সেবা, শৌচ, স্থৈর্য, আত্মসংযম্, ইন্দ্রিয়-বিষয়ে বৈরাগ্য, অহঙ্কারশূন্যতা, জন্ম-মৃত্যু-জরা-ব্যাধি-দুঃখ আদির দোষ দর্শন, স্ত্রী-পুত্রাদির সুখ-দুঃখে ঔদাসীন্য, সর্বদা সমচিত্তত্ব, আমার প্রতি অনন্যা ও অব্যভিচারিণী ভক্তি, নির্জন স্থান প্রিয়তা, জনাকীর্ণ স্থানে অরুচি, অধ্যাত্ম জ্ঞানে নিত্যত্ববুদ্ধি এবং তত্ত্বজ্ঞানের প্রয়োজন অনুসন্ধান- এই সমস্ত জ্ঞান বলে কথিত হয় এবং এর বিপরীত যা কিছু তা সবই অজ্ঞান।


শ্লোক:13:

জ্ঞেয়ং যত্তৎপ্রবক্ষ্যামি য্জ্ জ্ঞাত্বামৃতমশ্নুতে ।

অনাদি মৎপরং ব্রহ্ম ন সত্তন্নাসদুচ্যতে ॥১৩॥


শব্দার্থঃ জ্ঞেয়ম্ – জ্ঞাতব‍্য বিষয়; যৎ—যা: তৎ—তা; প্রবক্ষ‍্যামি — আমি এখন বলব, যৎ - যা; জ্ঞাত্বা — জেনে; অমৃতম্ – অমৃত, অশ্নুতে – লাভ হয়; অনাদি-আদিহীন, মৎপরম্-আমার আশ্রিত, ব্রহ্ম - ব্রহ্ম; ন - নয়, সৎ-কারণ; তৎ-তা: ন -না, অসৎ—কার্য, উচ্যতে–বলা হয়।


অনুবাদ:- আমি এখন জ্ঞাতব্য বিষয় সম্বন্ধে বলব, যা জেনে অমৃতত্ত্ব লাভ হয়। সেই জ্ঞেয় বস্তু অনাদি এবং আমার আশ্রিত। তাকে বলা হয় ব্রহ্ম এবং তা কার্য ও কারণের অতীত।


শ্লোক:14:

সর্বতঃ পাণিপাদং তৎ সর্বতোহক্ষিশিরোমুখম্ ।

সর্বতঃ শ্রুতিমৎল্লোকে সর্বমাবৃত্য তিষ্ঠতি ॥১৪॥


শব্দার্থঃ সর্বতঃ—সর্বগ্র; পাশি— হস্ত: পাদম্ – পদ: তৎ—তা, সর্বতঃ সর্বত্র, অি শিরঃ—মঞ্চ, মুখ-মুখ; গর্বতঃ সর্বত্র শ্রুতিমৎ কর্ণবিশিষ্ট লোকে-ভাগতে সর্বম্—সব কিছু; আবৃত্য—পরিব্যাপ্ত করে; তিষ্ঠতি—স্থিত আছেন।


অনুবাদ:- তাঁর হস্ত, পদ, চক্ষু, মস্তক ও মুখ সর্বত্রই এবং তিনি সর্বত্রই কর্ণযুক্ত৷ জগতে সবকিছুকেই পরিব্যাপ্ত করে তিনি বিরাজমান।


শ্লোক:15:

সর্বেন্দ্রিয়গুণাভাসং সর্বেন্দ্রিয়বিবর্জিতম্ ।

অসক্তং সর্বভৃচৈব নির্গুণং গুণভোক্তৃ চ ॥১৫॥


শব্দার্থঃ সর্ব-সমস্ত, ইন্দ্রিয়-ইন্দ্রিয়ের গুণ- গুণের আভাসম্ - প্রকাশক, সর্ব- সমস্ত, ইন্দ্রিয়- ইন্দ্রিয়, বিবর্জিতম্ - রহিত। অসক্তম্ - আসক্তি রহিত, সর্বভৃৎ - সকলের পালক, চ -ও, এব - অবশ্যই, নিঃ-গুণম্ - জড় গুণ রহিত, গুণভোক্তৃ - সমস্ত গুণের ঈশ্বর, চ - ও॥১৫॥


অনুবাদ:- সেই পরমাত্মা সমস্ত ইন্দ্রিয়ের প্রকাশক, তবুও তিনি সমস্ত ইন্দ্রিয় বিবর্জিত। যদিও তিনি সকলের পালক তবুও তিনি সম্পূর্ণ অনাসক্ত। তিনি প্রকৃতির গুণের অতীত, তবুও তিনি সমস্ত গুণের ঈশ্বর।


শ্লোকঃ ১৬

বহিরন্তশ্চ ভূতানামচরং চরমেব চ ।

সুক্ষ্মত্বাত্তদবিজ্ঞেয়ং দূরস্থং চান্তিকে চ তৎ ॥১৬॥


শব্দার্থঃ বহিঃ - বাইরে, অন্তঃ - অন্তরে, চ - ও, ভূতানাম্ - সমস্ত জীবের, অচরম্ - স্থাবর, চরম্ - জঙ্গম্, এব - ও, চ - এবং। সুক্ষ্মত্বাৎ - সুক্ষ্মতা হেতু, তৎ - তা, অবিজ্ঞেয়ম্ - অবিজ্ঞেয়, দূরস্থম্ - দূরে অবস্থিত, চ - ও, অন্তিকে - নিকটে, চ - ও, তৎ - তা ॥১৬॥


অনুবাদ:- সেই পরমতত্ত্ব সমস্ত ভূতের অন্তরে ও বাহিরে বর্তমান। তাঁর থেকেই সমস্ত চরাচর; অত্যন্ত সূক্ষ্মতা হেতু তিনি অবিজ্ঞেয়। যদিও তিনি বহু দূরে অবস্থিত, তবুও তিনি সকলের অত্যন্ত নিকটে।


শ্লোক:17:

অবিভক্তং চ ভূতেষু বিভক্তমিব চ স্থিতম্ ।

ভূতভর্তৃ চ তজ্ জ্ঞেয়ং গ্রসিষ্ণু প্রভবিষ্ণু চ ॥১৭॥


শব্দার্থঃ অবিভক্তম্ - অবিভক্ত, চ - ও, ভূতেষু - সর্বভূতে , বিভক্তম্ - বিভক্ত, ইব - মত, চ - ও, স্থিতম্ - অবস্থিত। ভূতভর্তৃ - সর্বভূতের - পালক, চ - ও, তৎ - তা, জ্ঞেয়ম্ - জানবে, গ্রসিষ্ণু - গ্রাসকারী, প্রভবিষ্ণু - প্রভূত্তকারী, চ - ও॥১৭॥


অনুবাদ:- পরমাত্মাকে যদিও সমস্ত ভূতে বিভক্তরূপে বোধ হয়, কিন্তু তিনি অবিভক্ত। যদিও তিনি সর্বভূতের পালক, তবুও তাঁকে সংহার-কর্তা ও সৃষ্টিকর্তা বলে জানবে।


শ্লোক:18: জ্যোতিষামপি তজ্জ্যোতিস্তমসঃ পরমুচ্যতে ।

জ্ঞানং জ্ঞেয়ং জ্ঞানগম্যং হৃদি সর্বস্য বিষ্ঠিতম্ ॥১৮॥


শব্দার্থঃ জ্যোতিষাম্ - সমস্ত জ্যোতিষ্কের, অপি - ও, তৎ - তা, জ্যোতিঃ - জ্যোতি, তমসঃ - অন্ধকারের, পরম্ - অতীত, উচ্যতে - বলা হয়। জ্ঞানম্ - জ্ঞান, জ্ঞেয়ম্ - জ্ঞেয়, জ্ঞানগম্যম্ - জ্ঞানগম্য, হৃদি - হৃদয়ে, সর্বস্য - সকলের, বিষ্ঠিতম্ -অবস্থিত॥১৮॥


শ্লোক:19:

ইতি ক্ষেত্রং তথা জ্ঞানং জ্ঞেয়ং চোক্তং সমাসতঃ ।

মদ্ভক্ত এতদ্বিজ্ঞায় মদ্ভাবায়োপপদ্যতে ॥১৯॥


শব্দার্থঃ ইতি - এভাবেই, ক্ষেত্রম্ - ক্ষেত্র (দেহ), তথা - ও, জ্ঞানম্ - জ্ঞান, জ্ঞেয়ম্ - জ্ঞেয়, চ - ও, উক্তম্ - বলা হয়, সমাসতঃ - সংক্ষেপে‍, মৎ-ভক্তঃ - আমার ভক্ত, এতৎ - এই সমস্ত, বিজ্ঞায় - বিদিত হয়ে, মৎ-ভাবায় - আমার ভাব, উপপদ্যতে - লাভ করেন ॥১৯॥


অনুবাদ:- এভাবেই ক্ষেত্র, জ্ঞান ও জ্ঞেয়-এই তিনটি তত্ত্ব সংক্ষেপে বলা হল।.আমার ভক্তই কেবল এই সমস্ত বিদিত হয়ে আমার ভাব লাভ করেন।


শ্লোক:20:

প্রকৃতিং পুরুষং চৈব বিদ্ধ্যনাদী উভাবপি ।

বিকারাংশ্চ গুণাংশ্চৈব বিদ্ধি প্রকৃতিসম্ভবান্ ॥২০॥


শব্দার্থঃ প্রকৃতিম্ - জড়া প্রকৃতি, পুরুষম্ - পুরুষ, চ - ও, এব - অবশ্যই, বিদ্ধি - জানবে, অনাদী - আদিহীন, উভৌ - উভয়, অপি - ও। বিকারান্ - বিকার, চ - ও, গুণান্ - প্রকৃতির তিনটি গুণ, চ - ও, এব - অবশ্যই, বিদ্ধি - জানবে, প্রকৃতি - জড়া প্রকৃতি, সম্ভবান্ - উদ্ভুত ॥২০॥


অনুবাদ:- প্রকৃতি ও পুরুষ উভয়ই অনাদি বলে জানবে। তাদের বিকার ও গুণসমূহ প্রকৃতি থেকেই উৎপন্ন বলে জানবে।


শ্লোক:21:

কার্যকারণকর্তৃত্বে হেতুঃ প্রকৃতিরুচ্যতে ।

পুরুষঃ সুখদুঃখানাং ভোক্তৃত্বে হেতুরুচ্যতে ॥২১॥


শব্দার্থঃ কার্য- কার্য, কারণ- কারণ, কর্তৃত্বে - কর্তৃত্ব বিষয়ে, হেতুঃ - হেতু, প্রকৃতিঃ - জড়া প্রকৃতিকে, উচ্যতে - বলা হয়, পুরুষঃ - জীবকে , সুখ - সুখ, দুঃখানাম্ - দুঃখের ভোগ বিষয়ে, ভোক্তৃত্বে - ভোগ বিষয়ে, হেতুঃ - হেতু, উচ্যতে - বলা হয়॥২১॥


অনুবাদ:- সমস্ত জড়ীয় কার্য ও কারণের কর্তৃত্ত্ব বিষয়ে প্রকৃতিকে হেতু বলা হয়, তেমনই জড়ীয় সুখ ও দুঃখের ভোগ বিষয়ে জীবকে হেতু বলা হয় ।


শ্লোক:22:

পুরুষঃ প্রকৃতিস্থো হি ভুঙ্ ক্তে প্রকৃতিজান্ গুণান্।

কারণং গুণসঙ্গোহস্য সদসদ্ যোনিজন্মসু ॥২২॥


শব্দার্থঃ পুরুষঃ—জীব: প্রকৃতিস্থঃ—জড়া প্রকৃতিতে অবস্থিত হয়ে; হি—অবশ্যই, ভূঙ্ ক্তে— ভোগ করে। প্রকৃতিজান্—প্রকৃতিজাত, গুণান্— গুণসমূহ; কারণম্ – কারণ, গুণসঙ্গঃ—প্রকৃতির গুণের সঙ্গ প্রভাবে; অস্য-এই জীবের; সদসদ্— ভাল ও মন্দ; যোনি – যোনিতে, জন্মসু - জন্ম হয়।


অনুবাদ:- জড়া প্রকৃ্তিতে অবস্তিত হয়ে জীব প্রকৃতিজাত গুণসমূহ ভোগ করে। প্রকৃতির গুণের সঙ্গবসতই তার সৎ ও অসৎ যোনিসমূহে জন্ম হয়।

শ্লোক:23:

উপদ্রষ্টানুমন্তা চ ভর্তা ভোক্তা মহেশ্বরঃ ।

পরমাত্মেতি চাপ্যুক্তো দেহেহস্মিন্ পুরুষঃ পরঃ ॥২৩॥


শব্দার্থঃ উপদ্রষ্টা - সাক্ষী, অনুমন্তা - অনুমোদনকারী, চ - ও, ভর্তা - পালক, ভোক্তা - ভোগ কর্তা , মহা-ঈশ্বরঃ - পরমেশ্বর, পরম-আত্মা - পরমাত্মা, ইতি - এভাবে, চ - এবং, অপি - ও, উক্তো - বলা হয়, দেহে - শরীরে, অস্মিন্ - এই, পুরুষঃ - পুরুষ, পরঃ- পরম ॥২৩॥


অনুবাদ:- এই শরীরে আর একজন পরম পুরুষ রয়েছেন, যিনি হচ্ছেন উপদ্রষ্টা, অনুমন্তা, ভর্তা, ভোক্তা, মহেশ্বর এবং তাঁকে পরমাত্মাও বলা হয়।


শ্লোক:24:

য এবং বেত্তি পুরুষং প্রকৃতিং চ গুণৈঃ সহ ।

সর্বথা বর্তমানোপি ন স ভূয়োহভিজায়তে ।২৪॥


শব্দার্থঃ যঃ - যিনি, এবম্ - এভাবেই, বেত্তি - জানেন, পুরুষম্ - পুরুষকে, প্রকৃতিম্ - জড়াপ্রকৃতি কে, চ - এবং, গুণৈঃ - গুণ, সহ - সহ। সর্বথা - সর্বতোভাবে, বর্তমানঃ - বিদ্যমান হয়ে, অপি - ও, ন - না, সঃ - তিনি, ভূয়ঃ - পুণরায় , অভিজায়তে - জন্ম গ্রহণ করে।।২৪॥


অনুবাদ:- যিনি এভাবেই পুরুষকে এবং গুণাদি সহ জড়া প্রকৃতিকে অবগত হন, তিনি জড় জগতে বর্তমান হয়েও পুনঃ পুনঃ জন্মগ্রহণ করেন না।


শ্লোক:25:

ধ্যানেনাত্মনি পশ্যন্তি কেচিদাত্মানমাত্মনা ।

অন্যে সাংখ্যেন যোগেন কর্মযোগেন চাপরে ॥২৫॥


শব্দার্থঃ ধ্যানেন - ধ্যানের দ্বারা, আত্মনি - অন্তরে, পশ্যন্তি - দর্শন করেন, কেচিৎ - কেউ কেউ, আত্মানম্ - পরমাত্মাকে, আত্মনা - মনের দ্বারা। অন্যে - অন্যেরা, সাংখ্যেন যোগেন - সাংখ্যযোগের দ্বারা, কর্মযোগেন - কর্মযোগের দ্বারা, চ - ও, অপরে - অন্যেরা॥২৫॥


শ্লোক:26:

অন্যে ত্বেবমজানন্তঃ শ্রুত্বান্যেভ্য উপাসতে।

তেহপি চাতিতরন্ত্যেব মৃত্যুং শ্রুতিপরায়ণাঃ ॥২৬॥


শব্দার্থঃ অন্যে - অন্যেরা, তু - কিন্তু, এবম্ - এভাবেই, অজানন্তঃ - না জেনে, শ্রুত্বা - শ্রবণ করে, অন্যেভ্যঃ - অন্যদের কাছ থেকে, উপাসতে - উপাসনা করেন। তে - তাঁরা, অপি - ও, চ - এবং, অতিতরন্তি - অতিক্রম করেন, এব - অবশ্যই, মৃত্যুম্ - মৃত্যুময় সংসার, শ্রুতিপরায়ণাঃ - শ্রবণপরায়ণ হয়ে॥২৬॥


অনুবাদ:- অন্য কেউ কেউ এভাবেই না জেনে অন্যদের কাছ থেকে শ্রবণ করে উপাসনা করেন৷ তাঁরাও শ্রবণ-পরায়ণ হয়ে মৃত্যুময় সংসার অতিক্রম করেন।


শ্লোক:27:

যাবৎ সংজায়তে কিঞ্চিৎ সত্ত্বং স্থাবরজঙ্গমম্।

ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞসংযোগাৎ তদ্বিদ্ধি ভরতর্ষভ ॥২৭॥


শব্দার্থঃ যাবৎ - যা কিছু, সংজায়তে - উৎপন্ন হয়, কিঞ্চিৎ - কোনকিছু, সত্ত্বম্ - অস্তিত্ব, স্থাবর- - স্থাবর, জঙ্গমম্ - জঙ্গম। ক্ষেত্র- দেহ, ক্ষেত্রজ্ঞ- ক্ষেত্রজ্ঞের, সংযোগাৎ - সংযোগ থেকে, তৎ - তা, বিদ্ধি - জানবে, ভরত-ঋষভ - হে ভারতশ্রেষ্ঠ॥২৭॥


অনুবাদ:- হে ভারতশ্রেষ্ঠ ! স্থাবর ও জঙ্গম যা কিছু অস্তিত্ত্ব আছে, তা সবই ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞের সংযোগ থেকে উৎপন্ন হয়েছে বলে জানবে।


শ্লোক:28:

সমং সর্বেষু ভূতেষু তিষ্ঠন্তং পরমেশ্বরম্ ।

বিনশ্যৎস্ববিনশ্যন্তং যঃ পশ্যতি স পশ্যতি ॥২৮॥


শব্দার্থঃ সমম্ - সমভাবে, সর্বেষু - সমস্ত, ভূতেষু - জীবে, তিষ্ঠন্তম্ - অবস্থিত, পরম-ঈশ্বরম্ - পরমাত্মাকে। বিনশ্যৎসু - বিনাশশীলদের মধ্যে, অবিনশ্যন্তম্ - অবিনাশী, যঃ - যিনি, পশ্যতি - দর্শন করেন, সঃ - তিনি, পশ্যতি - যথার্থ দর্শন করেন ॥২৮॥


অনুবাদ:- যিনি সর্বভূতে সমানভাবে অবস্থিত বিনাশশীল দেহের মধ্যেও অবিনাশী পরমাত্মাকে দর্শন করেন, তিনিই য্থার্থ দর্শন করেন।


শ্লোক:29:

সমং পশ্যন্ হি সর্বত্র সমবস্থিতমীশ্বরম্।

ন হিনস্ত্যাত্মনাত্মানং ততো যাতি পরাং গতিম্ ॥২৯॥


শব্দার্থঃ সমম্ - সমভাবে, পশ্যন্ - দর্শন করে, হি - অবশ্যই, সর্বত্র - সর্বত্র, সমবস্থিতম্ - সমভাবে অবস্থিত, ঈশ্বরম্ - পরমাত্মাকে। ন - করেন না, হিনস্তি - অধঃপতন, আত্মনা - মনের দ্বারা, আত্মানম্ - আত্মাকে, ততঃ - সেই হেতু, যাতি - লাভ করেন, পরাম্ - পরম, গতিম্ - গতি ॥২৯॥


অনুবাদ:- যিনি সর্বত্র সমভাবে অবস্থিত পরমাত্মাকে দর্শন করেন, তিনি কখনও মনের দ্বারা নিজেকে অধঃপতিত করেন না। এভাবেই তিনি পরম গতি লাভ করেন।


শ্লোক:30:

প্রকৃত্যৈব চ কর্মাণি ক্রিয়মাণানি সর্বশঃ ।

যঃ পশ্যতি তথাত্মানমকর্তারং স পশ্যতি ||30||


শব্দার্থঃ প্রকৃত্যা - জড়া প্রকৃতির দ্বারা, এব - অবশ্যই, চ - ও, কর্মাণি - কর্মসমূহ, ক্রিয়মাণানি - ক্রিয়মাণ, সর্বশঃ - সর্বতোভাবে। যঃ - যিনি, পশ্যতি - দর্শন করেন, তথা - এবং, আত্মানম্ - আত্মাকে, অকর্তারম্ - অকর্তা, সঃ - তিনি, পশ্যতি - যথার্থভাবে দর্শন করেন॥৩০॥


অনুবাদ:- যিনি দর্শন করেন যে, দেহের দ্বারা কৃত সমস্ত কর্মই প্রকৃতির দ্বারা সম্পাদিত হয় এবং আত্মা হচ্ছে অকর্তা, তিনিই যথাযথভাবে দর্শন করেন।


শ্লোক:31:

যদা ভূতপৃথগ্ ভাবমেকস্থমনুপশ্যতি।

তত এব চ বিস্তারং ব্রহ্ম সম্পদ্যতে তদা ॥৩১॥


শব্দার্থঃ যদা - যখন, ভূত- জীবগণের, পৃথগ্-ভাবম্ - পৃথক অস্তিত্ব, একস্থম্ - একই প্রকৃতিতে অবস্থিত, অনু-পশ্যতি - দর্শন করেন। ততঃ এব - তার থেকে, চ - ও, বিস্তারম্ - বিস্তার, ব্রহ্ম - ব্রহ্মভাব, সম্পদ্যতে - লাভ করেন, তদা -তখন॥৩১॥


অনুবাদ:- য্খন বিবেকী পুরুষ জীবগণের পৃথক পৃথক অস্তিত্বকে একই প্রকৃতিতে অবস্থিত এবং একই প্রকৃতি থেকেই তাদের বিস্তার দর্শন করেন, তখন তিনি ব্রহ্মভাব প্রাপ্ত হন।


শ্লোক:32:

অনাদিত্বান্নির্গুণত্বাৎ পরমাত্মায়মব্যয়ঃ।

শরীরস্থোহপি কৌন্তেয় ন করোতি ন লিপ্যতে ||32||


শব্দার্থঃ অনাদিত্বাৎ - অনাদিত্ব হেতু, নির্গুণত্বাৎ - নির্গুণত্ব হেতু, পরম- জড়া প্রকৃতির অতীত, আত্মা - আত্মা, অয়ম্ - এই, অব্যয়ঃ - অব্যয়, শরীরস্থঃ - শরীরে থেকে, অপি - ও, কৌন্তেয় - হে কুন্তীপুত্র, ন করোতি - কিছুই করে না, ন লিপ্যতে - লিপ্ত হয় না ॥৩২॥


অনুবাদ:- ব্রহ্মভাব অবস্থায় জীব তখন দর্শন করেন যে, অব্যয় এই আত্মা অনাদি, নির্গুণ ও জড়া প্রকৃতির অতীত। হে কৌন্তেয়! জড় দেহে অবস্থান করলেও আত্মা কোন কিছু করে না এবং কোন কিছুতেই লিপ্ত হয় না।


শ্লোক:33:

যথা সর্বগতং সৌক্ষ্ম্যাদাকাশং নোপলিপ্যতে ।

সর্বত্রাবস্থিতো দেহে তথাত্মা নোপলিপ্যতে ॥৩৩॥


শব্দার্থঃ যথা - যেমন, সর্বগতম্ - সর্ব ব্যাপ্ত, সৌক্ষ্ম্যাৎ - সুক্ষ্মতা হেতু, আকাশম্ - আকাশ, ন - না, উপলিপ্যতে - লিপ্ত হয়। সর্বত্র - সর্বত্র, অবস্থিতঃ - অবস্থিত, দেহে - শরীরে, তথা - তেমন, আত্মা - আত্মা, ন - না, উপলিপ্যতে - লিপ্ত হয়॥৩৩॥


অনুবাদ:- আকাশ যেমন সর্বগত হয়েও সূক্ষ্মতা হেতু অন্য বস্তুতে লিপ্ত হয় না, তেমনই ব্রহ্ম দর্শন-সম্পন্ন জীবাত্মা দেহে অবস্থিত হয়েও দেহধর্মে লিপ্ত হন না।


শ্লোক:34:

যথা প্রকাশয়ত্যেকঃ কৃৎস্নং লোকমিমং রবিঃ ।

ক্ষেত্রং ক্ষেত্রী তথা কৃৎস্নং প্রকাশয়তি ভারত ॥৩৪॥


শব্দার্থঃ যথা - যেমন, প্রকাশয়তি - প্রকাশ করে, একঃ - এক, কৃৎস্নম্ - সমগ্র, লোকম্ - জগৎকে, ইমম্ - এই, রবিঃ - সূর্য। ক্ষেত্রম্ - এই দেহকে, ক্ষেত্রী - আত্মা, তথা - সেই রকম, কৃৎস্নম্ - সমগ্র, প্রকাশয়তি - প্রকাশ করে, ভারত- হে ভারত ॥৩৪॥


অনুবাদ:- হে ভারত ! এক সূর্য যেমন সমগ্র জগৎকে প্রকাশ করে, সেই রকম ক্ষেত্রী আত্মাও সমগ্র ক্ষেত্রকে প্রকাশ করে।


শ্লোক:35:

ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞয়োরেবমন্তরং জ্ঞানচক্ষুষা ।

ভূতপ্রকৃতিমোক্ষং চ যে বিদুর্যান্তি তে পরম্ ॥৩৫॥


শব্দার্থঃ ক্ষেত্র- দেহ, ক্ষেত্রজ্ঞয়োঃ - ক্ষেত্রজ্ঞের, এবম্ - এভাবে, অন্তরম্ - ভেদ, জ্ঞানচক্ষুষা - জ্ঞান চক্ষুর দ্বারা। ভূত- জীবের, প্রকৃতি- জড়া প্রকৃতি থেকে, মোক্ষম্ - মুক্তি, চ - ও, যে - যাঁরা, বিদুঃ - জানেন, যান্তি - প্রাপ্ত হন, তে - তারা, পরম্ - পরম পদ ॥৩৫॥


অনুবাদ:- যাঁরা এভাবেই জ্ঞানচক্ষুর দ্বারা ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞের পার্থক্য জানেন এবং জড়া প্রকৃতির বন্ধন থেকে জীবগণের মুক্ত হওয়ার পন্থা জানেন, তাঁরা পরম গতি লাভ করেন।



ওঁ তৎসদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে 'ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞবিভাগযোগো' নামক ত্রয়োদশোঽধ্যায়ঃ সমাপ্তম্।

💐💐💐💐💐

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.