নবম অধ্যায় - রাজবিদ্যা-রাজগুহ্য যোগ
ওঁ তৎ সৎ
শ্রীমদ্ভগবদ গীতা
ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়ঃ
নবম অধ্যায় - রাজবিদ্যা-রাজগুহ্য যোগ
শ্লোক:1:
শ্রীভগবানুবাচঃ
ইদং তু তে গুহ্যতমং প্রবক্ষ্যাম্যনসূয়বে ।
জ্ঞানং বিজ্ঞানসহিতং যজ্ জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসেহশুভাৎ ॥১॥
শব্দার্থঃ শ্রীভগবান উবাচ—পরমেশ্বর ভগবান বললেন; ইদম্—এই; তু–কিন্তু, তে - তোমাকে, গুহ্যতমম্ - অতি গোপনীয়; প্রবক্ষ্যামি—বলছি; অনসূয়বে—নির্মৎসর। জ্ঞানম্ — জ্ঞান; বিজ্ঞান—উপলব্ধ জ্ঞান; সহিতম্–সহ; যৎ—যা; জ্ঞাত্বা-জেনে; মোক্ষ্যসে–মুক্ত হবে; অশুভাৎ—দুঃখময় সংসার বন্ধন থেকে।
অনুবাদ:- পরমেশ্বর ভগবান বললেন- হে অর্জুন ! তুমি নির্মৎসর বলে তোমাকে আমি পরম বিজ্ঞান সমন্বিত সবচেয়ে গোপনীয় জ্ঞান উপদেশ করছি ৷ সেই জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে তুমি দুঃখময় সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হও।
শ্লোক:2:
রাজবিদ্যা রাজগুহ্যং পবিত্রমিদমুত্তমম্ ।
প্রত্যক্ষাবগমং ধর্ম্যং সুসুখং কর্তুমব্যয়ম্ ॥২॥
শব্দার্থঃ রাজবিদ্যা – সমস্ত বিদ্যার রাজা, রাজগুহ্যম্— গোপনীয় জ্ঞানসমূহের রাজা, পবিত্রম্ –পবিত্র; ইদম—এই, উত্তমম্ – উত্তম, প্রত্যক্ষ - প্রত্যক্ষ অনুভূতির দ্বারা, অবগমম্— উপলব্ধ হয়; ধর্ম্যম্ - ধর্ম, সুসুখম্ - অত্যন্ত সুখদায়ক, কর্তুম্ - অনুষ্ঠান করতে, অব্যয়ম্ - অব্যয়।
অনুবাদ:- এই জ্ঞান সমস্ত বিদ্যার রাজা, সমস্ত গুহ্যতত্ত্ব থেকেও গুহ্যতর, অতি পবিত্র এবং প্রত্যক্ষ অনুভূতির দ্বারা আত্ম-উপলব্ধি প্রদান করে বলে প্রকৃত ধর্ম। এই জ্ঞান অব্যয় এবং সুখসাধ্য।
শ্লোক:3:
অশ্রদ্দধানাঃ পুরুষাঃ ধর্মস্যাস্য পরন্তপ ।
অপ্রাপ্য মাং নিবর্তন্তে মৃত্যুসংসারবর্ত্মনি॥৩॥
শব্দার্থঃ অশ্রদ্দধানাঃ–শ্রদ্ধাহীন; পুরুষাঃ - ব্যক্তিরা; ধর্মস্য—ধর্মের, অস—এই, পরন্তপ – হে পরন্তপ; অপ্রাপ্য—না পেয়ে; মাম্ - আমাকে; নিবর্তন্তে—ফিরে আসে, মৃত্যু – মৃত্যুর, সংসার - সংসার; বর্ত্মনি— পথে।
অনুবাদ:- হে পরন্তপ ! এই ভগবদ্ভক্তিতে যাদের শ্রদ্ধা উদিত হয়নি, তারা আমাকে লাভ করতে পারে না ৷ তাই তারা এই জড় জগতে জন্ম-মৃত্যুর পথে ফিরে আসে।
শ্লোক:4:
ময়া ততমিদং সর্বং জগদব্যক্তমূর্তিনা ।
মৎস্থানি সর্বভূতানি ন চাহং তেষ্ববস্থিতঃ ॥৪॥
শব্দার্থঃ ময়া - আমার দ্বারা; ততম্-ব্যাপ্ত: ইদম্ – এই সর্বম্-সমস্ত জগৎ-বিশ্ব; অব্যক্তমূর্তিনা—অব্যক্তরূপে; সংস্থানি—আমাতে অবস্থিত; সর্বভূতানি — সমস্ত জীব, ন–না: চ–ও: অহম্ – আমি; তেষু–তাতে; অবস্থিতঃ—অবস্থিত।
অনুবাদ:- অব্যক্তরূপে আমি সমস্ত জগতে ব্যাপ্ত আছি। সমস্ত জীব আমাতেই অবস্থিত, কিন্তু আমি তাতে অবস্থিত নই।
শ্লোক:5:
ন চ মৎস্থানি ভূতানি পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্ ।
ভূতভৃন্ন চ ভূতস্থো মমাত্মা ভূতভাবনঃ ॥৫॥
শব্দার্থঃ ন–না; চ–ও; মৎস্থানি—আমাতে স্থিত; ভূতানি - সমগ্র সৃষ্টি; পশ্য—দেখ; মে—আমার; যোগমৈশ্বরম্— অচিন্ত্য যোগশক্তি; ভৃতভৃৎ—সমস্ত জীবের ধারক, ন - না, চ–ও, ভূতস্থঃ – জড় সৃষ্টির মধ্যে, মম—আমার; আত্মা - স্বরূপ, ভূতভাবনঃ— সমগ্র জগতের উৎস।
অনুবাদ:- যদিও সব কিছুই আমারই সৃষ্ট, তবুও তারা আমাতে অবস্থিত নয়। আমার যোগৈশ্বর্য দর্শন কর। যদিও আমি সমস্ত জীবের ধারক এবং যদিও আমি সর্বব্যাপ্ত, তবুও অমি এই জড় সৃষ্টির অন্তর্গত নই, কেন না আমি নিজেই সমস্ত সৃষ্টির উৎস।
শ্লোক:6:
যথাকাশস্থিতো নিত্যং বায়ুঃ সর্বত্রগো মহান্ ।
তথা সর্বাণি ভূতানি মৎস্থানীত্যুপধারয় ॥৬॥
শব্দার্থঃ যথা—যেমন; আকাশস্থিতঃ—আকাশে অবস্থিত; নিত্যম্ — সর্বদা; বায়ুঃ—বায়ু; সর্বত্রগঃ—সর্বত্র বিচরণশীল; মহান্— মহান; তথা— তেমনই; সর্বাণি—সমস্ত, ভৃতানি— জীবসমূহ; মৎস্থানি—আমাতে অবস্থিত; ইতি—এভাবে; উপধারয়— উপলব্ধি করতে চেষ্টা কর।
অনুবাদ:- অবগত হও যে, মহান বায়ু যেমন সর্বত্র বিচরণশীল হওয়া সত্ত্বেও সর্বদা আকাশে অবস্থান করে, তেমনই সমস্ত সৃষ্ট জীব আমাতে অবস্থান করে।
শ্লোক:7:
সর্বভূতানি কৌন্তেয় প্রকৃতিং যান্তি মামিকাম্ ।
কল্পক্ষয়ে পুনস্তানি কল্পাদৌ বিসৃজাম্যহম্ ॥৭॥
শব্দার্থঃ সর্বভূতানি—সমগ্র সৃষ্টি; কৌন্তেয়— হে কুণ্ডীপুত্র; প্রকৃতিম্—প্রকৃতি; যান্তি—প্রবেশ করে, মামিকাম্—আমার, কল্পক্ষয়ে - কল্পের অবসানে; পুনঃ— পুনরায়; তানি— তাদের সকলকে, কল্পাদৌ—কল্পের শুরুতে। বিসৃজামি—সৃষ্টি করি, অহম্—আমি।
অনুবাদ:- হে কৌন্তেয় ! কল্পান্তে সমস্ত জড় সৃষ্ট আমারই প্রকৃতিতে প্রবেশ করে এবং পুনরায় কল্পারম্ভে প্রকৃতির দ্বারা আমি তাদের সৃষ্টি করি।
শ্লোক:8:
প্রকৃতিং স্বামবষ্টভ্য বিসৃজামি পুনঃ পুনঃ ।
ভূতগ্রামমিমং কৃৎস্নমবশং প্রকৃতের্বশাৎ ॥৮॥
শব্দার্থঃ প্রকৃতিম্ —জড়া প্রকৃতি; স্বাম্— আমার নিজের; অবষ্টভ্য—আশ্রয় করে; বিসৃজামি—সৃষ্টি করি; পুনঃ পুনঃ— বার বার; ভূতগ্রামম্ — সমগ্র জড় সৃষ্টি; ইমম্ - এই; কৃৎস্নম্—সমগ্র; অবশম্— আপনা থেকে, প্রকৃতেঃ— প্রকৃতির; বশাৎ - বশে।
অনুবাদ:-এই জগৎ আমারই প্রকৃতির অধীন৷ তা প্রকৃতির বশে অবশ হয়ে আমার ইচ্ছার দ্বারা পুনঃ পুনঃ সৃষ্ট হয় এবং আমারই ইচ্ছায় অন্তকালে বিনষ্ট হ্য়৷
শ্লোক:9:
ন চ মাং তানি কর্মাণি নিবধ্নন্তি ধনঞ্জয় ।
উদাসীনবদাসীনমসক্তং তেষু কর্মসু ॥৯॥
শব্দার্থঃ ন - না; চ–ও; মাম্ - আমাকে; তানি—সেই সমস্ত, কর্মাণি—কর্ম; নিবধ্নন্তি— বন্ধন করে; ধনঞ্জয় – হে ধনঞ্জয়; উদাসীনবৎ - উদাসীনের ন্যায়; আসীনম্ - অবস্থিত; অসক্তম্—আসক্তি রহিত; তেষু — সেই সমস্ত; কর্মসু - কর্মে।
অনুবাদ:- হে ধনঞ্জয় ! সেই সমস্ত কর্ম আমাকে আবদ্ধ করতে পারে না। আমি সেই সমস্ত কর্মে অনাসক্ত ও উদাসীনের ন্যায় অবস্থিত থাকি।
শ্লোক:10:
ময়াধ্যক্ষেণ প্রকৃতিঃ সূয়তে সচরাচরম্ ।
হেতুনানেন কৌন্তেয় জগদ্ বিপরিবর্ততে ॥১০॥
শব্দার্থঃ ময়া—আমার; অধ্যক্ষেণ— অধ্যক্ষতার দ্বারা; প্রকৃতিঃ—জড়া প্রকৃতি; সূয়তে— প্রকাশ করে, স—সহ; চরাচরম্ – স্থাবর ও জঙ্গম; হেতুনা—কারণে; অনেন—এই, কৌন্তেয়—হে কুন্তীপুত্র; জগৎ—জগৎ, বিপরিবর্ততে—পুনঃ পুনঃ পরিবর্তিত হয়।
অনুবাদ:- হে কৌন্তেয় ! আমার অধ্যক্ষতার দ্বারা জড়া প্রকৃতি এই চরাচর বিশ্ব সৃষ্টি করে। প্রকৃতির নিয়মে এই জগৎ পুনঃ পুনঃ সৃষ্টি হয় এবং ধ্বংস হয়।
শ্লোক:11:
অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতম্ ।
পরং ভাবমজানন্তো মম ভূতমহেশ্বরম্ ॥১১॥
শব্দার্থঃ অবজানন্তি - অবজ্ঞা করে, মাম্ – আমাকে, মৃঢ়ঃ - মূঢ় ব্যক্তিরা, মানুষীম্ - মনুষ্যরূপে; তনুম্ — শরীর, আশ্রিতম্ - ধারণ করে। পরম্ — পরম; ভাবম্—তত্ত্ব, অজানন্তঃ - না জেনে, মম—আমার; ভূত—সব কিছুর, মহেশ্বরম্ - পরম ঈশ্বর।
অনুবাদ:- আমি যখন মনুষ্যরূপে অবতীর্ণ হই, মূর্খেরা আমাকে অবজ্ঞা করে৷ তারা আমার পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয় এবং তারা আমাকে সর্বভূতের মহেশ্বর বলে জানে না।
শ্লোক:12:
মোঘাশা মোঘকর্মাণো মোঘজ্ঞানা বিচেতসঃ ।
রাক্ষসীমাসুরীং চৈব প্রকৃতিং মোহিনীং শ্রিতাঃ ॥১২॥
শব্দার্থঃ মোঘাশাঃ—বার্থ আশা, মোঘকৰ্মাণঃ–নিষ্ফল কর্ম; মোঘজ্ঞানাঃ - বিফল জ্ঞান; বিচেতসঃ—মোহাচ্ছম; রাক্ষসীম্—রাক্ষসী; আসুরীম্—আসুরী; চ—এবং, এব - অবশ্যই; প্রকৃতিম্—প্রকৃতি; মোহিনীম্—মোহকারী; শ্রিতাঃ— আশ্রয় গ্রহণ করে।
অনুবাদ:- এভাবেই যারা মোহাচ্ছন্ন হয়েছে, তারা রাক্ষসী ও আসুরী ভাবের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেই মোহাছন্ন অবস্থায় তাদের মুক্তি লাভের আশা, তাদের সকাম কর্ম এবং জ্ঞানের প্রয়াস সমস্তই ব্যর্থ হয়।
শ্লোক:13:
মহাত্মানস্তু মাং পার্থ দৈবীং প্রকৃতিমাশ্রিতাঃ ।
ভজন্ত্যনন্যমনসো জ্ঞাত্বা ভূতাদিমব্যয়ম্ ॥১৩॥
শব্দার্থঃ মহাত্মানঃ—মহাত্মাগণ; তু—কিন্তু, মাম্—আমাকে: পার্থ—হে পৃথাপুত্র, দেবীম্ - দৈবী, প্রকৃতিম—প্রকৃতি; আশ্রিতাঃ—আশ্রয় করে; ভজন্তি–ভজনা করেন; অনন্যমনসঃ — অনন্যমনা হয়ে; জ্ঞাত্বা-জেনে; ভৃত – সৃষ্টির; আদিম্— আদি; অব্যয়ম—অব্যয়।
অনুবাদ:- হে পার্থ ! মোহমুক্ত মহাত্মাগণ আমার দৈবী প্রকৃতিকে আশ্রয় করেন। তাঁরা আমাকে সর্বভূতের আদি ও অব্যয় জেনে অনন্যচিত্তে আমার ভজনা করেন।
শ্লোক:14:
সততং কীর্তয়ন্তো মাং যতন্তশ্চ দৃঢ়ব্রতাঃ ।
নমস্যন্তশ্চ মাং ভক্ত্যা নিত্যযুক্তা উপাসতে ॥১৪॥
শব্দার্থঃ সততম্— নিরন্তর; কীর্তয়ন্তঃ - কীর্তন করে, মাম্ - আমাকে, যতন্তঃ - যত্নশীল হয়ে, চ - ও, দৃঢ়ব্রতাঃ–দৃঢ়ব্রত; নমস্যন্তঃ - নমস্কার করে, চ-ও; মাম্ - আমাকে, ভক্তা-ভক্তি সহকারে; নিত্যযুক্ত্যাঃ - নিরন্তর যুক্ত হয়ে, উপাসতে - উপাসনা করে।
অনুবাদ:- দৃঢ়ব্রত ও যত্নশীল হয়ে, সর্বদা আমার মহিমা কীর্তন করে এবং আমাকে প্রণাম করে, এই সমস্ত মহাত্মারা নিরন্তর যুক্ত হয়ে ভক্তি সহকারে আমার উপাসনা করে।
শ্লোক:15:
জ্ঞানযজ্ঞেন চাপ্যন্যে যজন্তো মামুপাসতে ।
একত্বেন পৃথক্ত্বেন বহুধা বিশ্বতোমুখম্ ॥১৫॥
শব্দার্থঃ জ্ঞানযজ্ঞেন—জ্ঞানরূপ যজ্ঞের দ্বারা; চ–ও; অপি – অবশ্যই; অন্যে-অনোরা; যজন্তঃ – যজন করে; মাম্ - আমাকে; উপাসতে — উপাসনা করেন, একত্বেন - অভেদ চিন্তার দ্বারা, পৃথক্ ত্বেন – পৃথক চিন্তার দ্বারা, বহুধা — বহু প্রকারে, বিশ্বতোমুখম্—বিশ্বরূপের।
অনুবাদ:- অন্য কেউ কেউ জ্ঞান যজ্ঞের দ্বারা অভেদ চিন্তাপূর্বক, কেউ কেউ বহুরূপে প্রকাশিত ভেদ চিন্তাপূর্বক এবং অন্য কেউ আমার বিশ্বরূপের উপাসনা করেন।
শ্লোক:16:
অহং ক্রতুরহং যজ্ঞঃ স্বধাহমহমৌষধম্ ।
মন্ত্রোহহমহমেবাজ্যমহমগ্নিরহং হুতম্ ॥১৬॥
শব্দার্থঃ অহম্ — আমি; ক্রতুঃ—অগ্নিষ্টোম আদি শ্রোত যজ্ঞ; অহম্ —আমি; যজ্ঞঃ—স্মার্ত যজ্ঞ, স্বধা — শ্রাদ্ধ আদি কর্ম; অহম্ — আমি অহম্ – আমি; ঔষধম্ – রোগ নিবারক ভেষজ, মন্ত্ৰঃ—মন্ত্ৰ, অহম্ – আমি, অহম্ আমি; এব–অবশ্যই; আজ্যম্ - ঘৃত; অহম – আমি; অগ্নিঃ—অগ্নি; অহম্ — আমি; হুতম্ – হোমক্রিয়া।
অনুবাদ:- আমি অগ্নিষ্টোম আদি শ্রৌত যজ্ঞ, আমি বৈশ্ব্যদেব আদি স্মার্ত যজ্ঞ, আমি পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে শ্রাদ্ধাদি কর্ম, আমি রোগ নিবারক ভেষজ, আমি মন্ত্র, আমি হোমের ঘৃত, আমি অগ্নি এবং আমিই হোমক্রিয়া।
শ্লোক:17:
পিতাহমস্য জগতো মাতা ধাতা পিতামহঃ ।
বেদ্যং পবিত্রম্ ওঙ্কার ঋক্ সাম যজুরেব চ ॥১৭॥
শব্দার্থঃ পিতা—পিতা; অহম্ – আমি; অস্য— এই, জগতঃ—জগতের; মাতা—মাতা; ধাতা—বিধাতা; পিতামহঃ — পিতামহ; বেদ্যম্ – জ্ঞেয় বস্তু; পবিত্রম্ — শোধনকারী; - ওঙ্কারঃ—ওঙ্কার; ঋক্ —ঋগ্বেদ; সাম— সামবেদ; যজুঃ—যজুর্বেদ; এব—অবশ্যই; চ - এবং।
অনুবাদ:- আমিই এই জগতের পিতা, মাতা, বিধাতা ও পিতামহ৷ আমি জ্ঞেয় বস্ত্ত,শোধনকারী ও ওঙ্কার৷ আমিই ঋক্, সাম ও যজুর্বেদ।
শ্লোক:18:
গতির্ভর্তা প্রভূঃ সাক্ষী নিবাসঃ শরণং সুহৃৎ ।
প্রভবঃ প্রলয়ঃ স্থানং নিধানং বীজমব্যয়ম্ ॥১৮॥
শব্দার্থঃ গতিঃ—গতি; ভর্তা—পতি; প্রভুঃ—নিয়তা, সাক্ষী - সাক্ষী, নিবাসঃ- নিবাস, শরণম্—রক্ষাকর্তা; সুহৃৎ— সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুঃ প্রভবঃ— সৃষ্টি, প্রলয়ঃ—প্রলয়; স্থানম্ – স্থিতি, নিধানম্ —আশ্রয়; বীজম্ — বীজ, অব্যয়ম্ — অবিনাশী।
অনুবাদ:- আমি সকলের গতি, ভর্তা, প্রভু, সাক্ষী, নিবাস, শরণ ও সুহৃৎ৷ আমিই উৎপত্তি, নাশ, স্থিতি, আশ্রয় ও অব্যয় বীজ।
শ্লোক:19:
তপাম্যহমহং বর্ষং নিগৃহ্নাম্যুৎসৃজামি চ ।
অমৃতং চৈব মৃত্যুশ্চ সদসচ্চাহমর্জুন ॥১৯॥
শব্দার্থঃ তপামি—তাপ প্রদান করি, অহম্ — আমি; অহম্ — আমি; বৰ্ষম্ — বৃষ্টি; নিগৃহ্নামি - আকর্ষণ করি; উৎসৄজামি—বর্ষণ করি; চ–এবং, অমৃতম্ – অমৃত, চ–এবং; এব— অবশ্যই; মৃত্যুঃ–মৃত্যু; চ–এবং, সৎ–চেতন; অসৎ—জড় বস্তু; চ–এবং; অহম্ — আমি; অর্জুন-হে অর্জুন।
অনুবাদ:- হে অর্জুন ! আমি তাপ প্রদান করি এবং আমি বৃষ্টি বর্ষণ করি ও আকর্ষণ করি৷ আমি অমৃত এবং আমি মৃত্যু৷ জড় ও চেতন বস্তু উভয়ই আমার মধ্যে।
শ্লোক:20:
ত্রৈবিদ্যা মাং সোমপাঃ পূতপাপা যজ্ঞৈরিষ্ট্বা স্বর্গতিং প্রার্থয়ন্তে ।
তে পুণ্যমাসাদ্য সুরেন্দ্রলোকম্ অশ্নন্তি দিব্যান্ দিবি দেবভোগান্ ॥২০॥
শব্দার্থঃ ত্রৈবিদ্যাঃ - ত্রিবেদজ্ঞগণ, মাম্ - আমাকে; সোমপাঃ- সোমরস পানকারী, পূত - পবিত্র, পাপাঃ—পাপ; যজ্ঞৈঃ — যজ্ঞের দ্বারা; ইষ্টা—পূজা করে, স্বর্গতিম - স্বর্গে গমন, প্রার্থয়ন্তে—প্রার্থনা করেন; তে—তাঁরা; পুণ্যম্— পুণ্য; আসাদ্য - লাভ করে, সুরেন্দ্র—ইন্দ্র, লোকম্-লোক; অশ্নন্তি—ভোগ করেন; দিব্যান্—দিব্য, দিবি - স্বর্গে, দেবভোগান্— দেবতাদের ভোগসমূহ।
অনুবাদ:- ত্রিবেদজ্ঞগণ যজ্ঞানুষ্ঠান দ্বারা আমাকে আরাধনা করে যজ্ঞাবশিষ্ট সোমরস পান করে পাপমুক্ত হন এবং স্বর্গে গমন প্রার্থনা করেন। তাঁরা পুণ্যকর্মের ফলস্বরূপ ইন্দ্রলোক লাভ করে দেবভোগ্য দিব্য স্বর্গসুখ উপভোগ করেন।
শ্লোক:21:
তে তং ভুক্ত্বা স্বর্গলোকং বিশালং ক্ষীণে পুণ্যে মর্ত্যলোকং বিশন্তি ।
এবং ত্রয়ীধর্মমনুপ্রপন্না গতাগতং কামকামা লভন্তে ॥২১॥
শব্দার্থঃ তে—তাঁরা; তম্ – সেই; ভুক্ত্বা—ভোগ করে; স্বৰ্গলোকম্ - স্বৰ্গলোক; বিশালম্ - বিশাল: ক্ষীণে—ক্ষীণ হলে; পুণ্যে— পুণ্যফল; মর্ত্যলোকম— মর্ত্যলোকে, বিশন্তি– অধঃপতিত হন; একম্ — এভাবে; ত্রয়ী—তিন বেদের; ধর্মম - ধর্ম, অনুপ্রপন্না— অনুষ্ঠান-পরায়ণ; গতাগতম্ – জন্ম ও মৃত্যু; কামকামাঃ—ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের আকাঙ্ক্ষী; লভন্তে - লাভ করেন।
অনুবাদ:- তাঁরা সেই বিপুল স্বর্গসুখ উপভোগ করে পুণ্য ক্ষয় হলে মর্তলোকে ফিরে আসেন। এভাবেই ত্রিবেদোক্ত ধর্মের অনুষ্ঠান করে ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের আকাঙ্ক্ষী মানুষেরা সংসারে কেবলমাত্র বারংবার জন্ম-মৃত্যু লাভ করে থাকেন।
শ্লোক:22:
অনন্যাশ্চিন্তয়ন্তো মাং যে জনাঃ পর্যুপাসতে।
তেষাং নিত্যাভিযুক্তানাং যোগক্ষেমং বহাম্যহম্ ॥২২॥
শব্দার্থঃ অনন্যাঃ—অনন্য; চিত্তয়ন্তঃ — চিন্তা করতে করতে; মাম্ — আমাকে; যে—যে; জনাঃ—ব্যক্তিগণ; পর্যুপাসতে— যথযথভাবে আরাধনা করেন; তেষাম্—তাদের; নিত্য—সর্বদা; অভিযুক্তানাম্ —ভগবদ্ভক্তিতে যুক্ত; যোগক্ষেমম্—অপ্রাপ্ত বস্তুর প্রাপ্তি এবং প্রাপ্ত বস্তুর সংরক্ষণ, বহামি - বহন করি, অহম্ —আমি।
অনুবাদ:- অনন্য চিত্তে আমার চিন্তায় মগ্ন হয়ে, পরিপূর্ণ ভক্তি সহকারে যাঁরা সর্বদাই আমার উপাসনা করেন, তাঁদের সমস্ত অপ্রাপ্ত বস্তু আমি বহন করি এবং তাঁদের প্রাপ্ত বস্তুর সংরক্ষণ করি।
শ্লোক:23:
যেহ্প্যন্যদেবতাভক্তা যজন্তে শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ ।
তেহপি মামেব কৌন্তেয় যজন্ত্যবিধিপূর্বকম্ ॥২৩॥
শব্দার্থঃ যে— যারা; অপি— ও; অন্য—অন্য; দেবতা– দেবতা; ভক্তাঃ– ভক্তেরা; যজন্তে - পূজা করে; শ্রদ্ধয়ান্বিতাঃ—শ্রদ্ধা সহকারে; তে—তারা; অপি—এ, মাম্ এব - আমাকেই; কৌন্তেয়—হে কুম্ভীপুত্র; যজন্তি— পূজা করে; অবিধিপূর্বকম - অবিধিপূর্বক।
অনুবাদ:- হে কৌন্তেয় ! যারা অন্য দেবতাদের ভক্ত এবং শ্রদ্ধা সহকারে তাঁদের পূজা করে, প্রকৃতপক্ষে তারা অবিধিপূর্বক আমারই পূজা করে।
শ্লোক:24:
অহং হি সর্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ ।
ন তু মামভিজানন্তি তত্ত্বেনাতশ্চ্যবন্তি তে॥২৪॥
শব্দার্থঃ অহম্ —আমি; হি—নিশ্চয়ই; সর্ব—সমস্ত; যজ্ঞানাম্ — যজ্ঞের; ভোক্তা—ভোক্তা; চ—এবং; প্রভুঃ—প্রভু; এব—ও; চ–এবং; ন–না, ভু – কিন্তু, মাম্ - আমাকে; অভিজানন্তি–জানে; তত্ত্বেন– স্বরূপত; অতঃ– অতএব; চ্যবন্তি— অধঃপতিত হয়; তে - তারা।
অনুবাদ:- আমিই সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা ও প্রভু। কিন্তু যারা আমার চিন্ময় স্বরূপ জানে না, তারা আবার সংসার সমুদ্রে অধঃপতিত হয়।
শ্লোক:25:
যান্তি দেবব্রতা দেবান্ পিতৃন্ যান্তি পিতৃব্রতাঃ ।
ভূতানি যান্তি ভূতেজ্যা যান্তি মদ্ যাজিনোহপি মাম্ ॥২৫॥
শব্দার্থঃ যান্তি—প্রাপ্ত হন, দেবব্রতাঃ–দেবতাদের উপাসক, দেবান্— দেবতাদের, পিতৃন্ পূর্ব-পুরুষদের; যান্তি - লাভ করেন; পিতৃব্রতাঃ– পিতৃপুরুষদের উপাসকগণ; ভূতানি—ভূত-প্রেতদের, যান্তি - লাভ করেন; ভূতেজ্যাঃ—ভূত-প্রেত আদির উপাসকগণ; যান্তি–লাভ করেন; মৎ— আমার; যাজিনঃ – ভক্তগণ; অপি – কিন্তু; মাম্ — আমাকে।
অনুবাদ:- দেবতাদের উপাসকেরা দেবলোক প্রাপ্ত হবেন; পিতৃপুরুষদের উপাসকেরা পিতৃলোক লাভ করেন; ভূত-প্রেত আদির উপাসকেরা ভূতলোক লাভ করেন; এবং আমার উপাসকেরা আমাকেই লাভ করেন।
শ্লোক:26:
পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।
তদহং ভক্ত্যুপহৃতমশ্নামি প্রযতাত্মনঃ ॥২৬॥
শব্দার্থঃ পত্রম্ - পত্ৰ, পুষ্পম- ফুল, ফলম্ ফল; তোয়ম্ – জল, যঃ - যে, মছ - আমাকে; ভক্ত্যা—ভক্তি সহকারে, প্রযচ্ছতি - প্রদান করেন; তৎ–তা, অহম্ - আমি, ভক্ত্যুপহৃতম্ – ভক্তি সহকারে নিবেদিত, অশ্নামি - গ্রহণ করি, প্রযতাত্মনঃ —আমার ভক্তি প্রভাবে বিশুদ্ধচিত্ত সেই ব্যক্তির।
অনুবাদ:- যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে এমনকি পত্র, পুষ্প, ফল ও জলও অর্পণ করেন, আমি তাঁর সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি।
শ্লোক:27:
যৎকরোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ ।
যত্তপস্যসি কৌন্তেয় তৎকুরুষ্ব মদর্পণম্ ॥২৭॥
শব্দার্থঃ যৎ—যা; করোষি—তুমি কর; যৎ - যা, অশ্নাসি— তুমি খাও; যৎ - যা, জুহোষি - হোম কর, দদাসি – দান কর; যৎ- যা, যৎ- যা, তপস্যসি - তপস্যা কর, কৌন্তেয়—হে কুন্তীপুত্ৰ, তৎ—তা; কুরুষ্ব–কর; মৎ— আমাকে, অপর্ণম্–সমৰ্পণ।
অনুবাদ:- হে কৌন্তেয় ! তুমি যা অনুষ্ঠান কর, যা আহার কর, যা হোম কর, যা দান কর এবং যে তপস্যা কর, সেই সমস্তই আমাকে সমর্পণ কর।
শ্লোক:28:
শুভাশুভফলৈরেবং মোক্ষ্যসে কর্মবন্ধনৈঃ ।
সন্ন্যাসযোগযুক্তাত্মা বিমুক্তো মামুপৈষ্যসি ॥২৮॥
শব্দার্থঃ শুভ—মঙ্গলজনক; অশুভ — অমঙ্গলজনক; ফলৈঃ—ফলবিশিষ্ট; একম্ — এভাবে, মোক্ষ্যসে–মুক্ত হবে, কর্ম - কর্ম; বন্ধনৈঃ —বন্ধন হতে, সন্ন্যাস—সন্ন্যাস; যোগ— যোগ: যুক্তাত্মা—যুক্তচিত্ত, বিমুক্তঃ– মুক্ত: মাম্ —আমাকে, উপৈষ্যসি—প্রাপ্ত হবে।
অনুবাদ:- এভাবেই আমাতে সমস্ত কর্ম অর্পণ দ্বারা শুভ ও অশুভ ফলবিশিষ্ট কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হবে। এভাবেই সন্ন্যাস যোগে যুক্ত হয়ে তুমি মুক্ত হবে এবং আমাকেই প্রাপ্ত হবে।
শ্লোক:29:
সমোহহং সর্বভূতেষু ন মে দ্বেষ্যোহস্তি ন প্রিয়ঃ।
যে ভজন্তি তু মাং ভক্ত্যা ময়ি তে তেষু চাপ্যহম্॥২৯॥
শব্দার্থঃ সমঃ—সমভাবাপন্ন; অহম্— আমি, সর্বভূতেষু — সমস্ত জীবের প্রতি; ন–নয়, মে - আমার; দ্বেষ্যঃ – বিদ্বেষ ভাবাপন্ন, অস্তি— হয়; ন - নয়; প্রিয়ঃ—প্রিয়; যে - যারা; ভজন্তি—ভজনা করেন; তু–কিন্তু, মাম্ - আমাকে; ভক্ত্যা-ভক্তির দ্বারা, ময়ি - আমাতে; তে—তাঁরা, তেষু – তাদের; চ–ও; অপি—অবশ্যই; অহম্— আমি।
অনুবাদ:- আমি সকলের প্রতি সমভাবাপন্ন। কেউই আমার বিদ্বেষ ভাবাপন্ন নয় এবং প্রিয়ও নয়। কিন্তু যাঁরা ভক্তিপূর্বক আমাকে ভজনা করেন, তাঁরা আমাতে অবস্থান করেন এবং আমিও তাদের মধ্যে বাস করি।
শ্লোক:30:
অপি চেৎ সুদুরাচারো ভজতে মামনন্যভাক্ ।
সাধুরেব স মন্তব্যঃ সম্যগ্ ব্যবসিতো হি সঃ ॥৩০॥
শব্দার্থঃ অপি—এমন কি; চেৎ—যদি; সুদুরাচারঃ–অত্যন্ত দুরাচারী ব্যক্তি, ভজতে–ভজনা করেন; মাম্ - আমাকে: অনন্যভাক্—অনন্য ভক্তি সহকারে; সাধুঃ – সাধু; এব— অবশ্যই; সঃ– তিনি, মন্তব্যঃ - মনে করা উচিত, সম্যক্ - পূর্ণরূপে, ব্যবসিতঃ— দৃঢ়ভাবে অবস্থিত; হি–অবশ্যই; সঃ—তিনি।
অনুবাদ:- অতি দুরাচারী ব্যক্তিও যদি অনন্য ভক্তি সহকারে আমাকে ভজনা করেন, তাকে সাধু বলে মনে করবে, কারণ তাঁর দৃঢ় সংকল্পে তিনি যথার্থ মার্গে অবস্থিত।
শ্লোক:31:
ক্ষিপ্রং ভবতি ধর্মাত্মা শশ্বচ্ছান্তিং নিগচ্ছতি ।
কৌন্তেয় প্রতিজানীহি ন মে ভক্তঃ প্রণশ্যতি ॥৩১॥
শব্দার্থঃ ক্ষিপ্রম্—অতি শীঘ্র; ভবতি – হন; ধর্মাত্মা— ধার্মিক; শশ্বৎ—নিত্য; শান্তিম্ - শান্তি, নিগচ্ছতি—প্রাপ্ত হন; কৌন্তেয়—হে কুন্তীপুত্র; প্রতিজানীহি—ঘোষণা করা, ন - না; মে—আমার, ভক্তঃ – ভক্ত, প্রণশ্যতি – বিনাশ প্রাপ্ত হন।
অনুবাদ:- তিনি শীঘ্রই ধর্মাত্মায় পরিণত হন এবং নিত্য শান্তি লাভ করেন। হে কৌন্তেয় ! তুমি দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা কর যে, আমার ভক্ত কখনও বিনষ্ট হন না।
শ্লোক:32:
মাং হি পার্থ ব্যপাশ্রিত্য যেহপি স্যুঃ পাপযোনয়ঃ ।
স্ত্রিয়ো বৈশ্যাস্তথা শূদ্রাস্তেহপি যান্তি পরাং গতিম্ ॥৩২॥
শব্দার্থঃ মাম্—আমাকে; হি—অবশ্যই; পার্থ— হে পৃথাপুত্র; ব্যপাশ্রিত্য—বিশেষভাবে আশ্রয় করে; যে—যারা; অপি–ও; স্যুঃ— হয়; পাপযোনয়ঃ — নীচকুলে জাত, স্ত্রিয়ঃ - স্ত্রী, বৈশ্যাঃ—বৈশ্য; তথা – এবং, শূদ্রাঃ - শূদ্র; তে, অপি— তারাও; যান্তি—লাভ করে, পরাম্ - পরম্, গতিম্ — গতি।
অনুবাদ:- হে পার্থ ! যারা আমাকে বিশেষভাবে আশ্রয় করে, তারা স্ত্রী, বৈশ্য, শূদ্র আদি নীচকুলে জাত হলেও অবিলম্বে পরাগতি লাভ করে।
শ্লোক:33:
কিং পুনর্ব্রাহ্মণাঃ পুণ্যা ভক্তা রজর্ষয়স্তথা ।
অনিত্যমসুখং লোকমিমং প্রাপ্য ভজস্ব মাম্ ॥৩৩॥
শব্দার্থঃ কিম্—কি; পুনঃ—পুনরায়; ব্রাহ্মণাঃ– ব্রাহ্মণেরা; পুণ্যাঃ—পুণ্যবান; ভক্তাঃ - ভক্তেরা; রজর্ষয়ঃ—রাজর্ষিরা; তথা— ও, অনিত্যম্ – অনিত্য; অসুখম–দুঃখময়; লোকম্— লোক; ইমম্ - এই, প্রাপ্য - লাভ করে; ভজস্ব - ভজনা কর, মাম্ - আমাকে।
অনুবাদ:- পুণ্যবান ব্রাহ্মণ, ভক্ত ও রাজর্ষিদের আর কি কথা ? তাঁরা আমাকে আশ্রয় করলে নিশ্চয়ই পরাগতি লাভ করবেন। অতএব, তুমি এই অনিত্য দুঃখময় মর্ত্যলোক লাভ করে আমাকে ভজনা কর।
শ্লোক:34:
মন্মনা ভব মদ্ভক্তো মদ্ যাজী মাং নমস্কুরু ।
মামেবৈষ্যসি যুক্ত্বৈবমাত্মানং মৎপরায়ণঃ ॥৩৪॥
শব্দার্থঃ মন্মনাঃ— মদ্গত চিত্ত; ভব— হও, মৎ—আমার, ভক্তঃ–ভক্ত, মৎ—আমার, যাজী— পূজাপরায়ণ; মাম্ - আমাকে, নমস্কুরু - নমস্কার কর, মাম্—আমাকে; এব–সম্পূর্ণরূপে; এষ্যসি— প্রাপ্ত হবে; যুক্ত্বৈবম্—এভাবে অভিনিবিষ্ট হয়ে, আত্মানম্—তোমার আত্মা, মৎপরায়ণঃ - মৎপরায়ণ হয়ে।
অনুবাদ:- তোমার মনকে আমার ভাবনায় নিযুক্ত কর, আমার ভক্ত হও, আমাকে প্রণাম কর এবং আমার পূজা কর। এভাবেই মৎপরায়্ণ হয়ে সম্পূর্ণরূপে আমাতে অভিনিবিষ্ট হলে, নিঃসন্দেহে তুমি আমাকে লাভ করবে।
ওঁ তৎসদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে
শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে 'রাজবিদ্যারাজগুহ্যযোগো' নামক নবমোঽধ্যায়ঃ সমাপ্তম্।
Post a Comment