পঞ্চদশ অধ্যায় - পুরুষোত্তম যোগ
পঞ্চদশ অধ্যায়
"ওঁ তৎ সৎ"
"ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়।"
শ্রীমদ্ভগবদ গীতা
*পঞ্চদশ অধ্যায়*
"।পুরুষোত্তম যোগ।"
শ্লোক:1:
শ্রীভগবানুবাচঃ
ঊর্ধ্বমূলমধঃশাখমশ্বত্থং প্রাহুঃরব্যয়ম্ ।
ছন্দাংসি যস্য পর্ণানি যস্তং বেদ স বেদবিৎ ॥১॥
শব্দার্থঃ
ঊর্ধ্ব-মূলম্ - ঊর্ধমূল, অধঃ- নিম্নমুখী শাখম্ - শাখা বিশিষ্ট, অশ্বত্থম্ - অশ্বত্থ বৃক্ষ, প্রাহুঃ - বলা হয়েছে, অব্যয়ম্ - নিত্য। ছন্দাংসি - বৈদিক মন্ত্র সমূহ, যস্য - যার, পর্ণানি - পত্র সমূহ, যঃ - যিনি, তম্ - সেই, বেদ - জানেন, সঃ - তিনি, বেদবিৎ- বেদজ্ঞ॥১॥
অনুবাদ:- পরমেশ্বর ভগবান বললেন- ঊর্ধমূল ও অধঃশাখা-বিশিষ্ট একটি অব্যয় অশ্বত্থ বৃক্ষের কথা বলা হয়েছে৷ বৈদিক মন্ত্রসমূহ সেই বৃক্ষের পত্রস্বরুপ। যিনি সেই বৃক্ষটিকে জানেন, তিনিই বেদজ্ঞ।
শ্লোক:2:
অধশ্চোর্ধ্বং প্রসৃতাস্তস্য শাখা গুণপ্রবৃদ্ধা বিষয়প্রবালাঃ ।
অধশ্চ মূলান্যনুসন্ততানি কর্মানুবন্ধীনি মনুষ্যলোকে ॥২॥
শব্দার্থঃ
অধঃ - নিম্নমুখী, চ - ও, ঊর্ধ্বম্ - ঊর্ধমুখী, প্রসৃতাঃ - বিস্তৃত, তস্য - তার, শাখাঃ - শাখা সমূহ, গুণ - জড়া প্রকৃতির গুণ সমূহের দ্বারা, প্রবৃদ্ধাঃ - পরিবর্ধিত, বিষয়- ইন্দ্রিয়ের বিষয় সমূহ, প্রবালাঃ - পল্লব। অধঃ - অধোমুখী , চ - এবং, মূলানি - মূল সমূহ, অনুসন্ততানি - প্রসারিত, কর্ম- কর্মের প্রতি, অনু-বন্ধীনি - আবদ্ধ, মনুষ্যলোকে - নরলোকে ॥২॥
অনুবাদ:- এই বৃক্ষের শাখাসমূহ জড়া প্রকৃতির তিনটি গুণের দ্বারা পুষ্ট হয়ে অধোদেশে ও ঊর্ধ্বদেশে বিস্তৃ্ত। ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহই এই শাখাগণের পল্লব। এই বৃক্ষের মূলগুলি অধোদেশে প্রসারিত এবং সেগুলি মনুষ্যলোকে সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ।
শ্লোক:3:
ন রূপমস্যেহ তথোপলভ্যতে নান্তো ন চাদির্ন চ সংপ্রতিষ্ঠা ।
অশ্বত্থমেনং সুবিরূঢ়মূলম্ অসঙ্গশস্ত্রেণ দৃঢ়েন ছিত্ত্বা ॥৩॥
শব্দার্থঃ
ন - না, রূপম্ - রূপ, অস্য - এই বৃক্ষের, ইহ - এই জগতে, তথা - ও, উপলভ্যতে - উপলব্ধ হয়, ন - না, অন্তঃ - শেষ, ন - না, চ - ও, আদিঃ - শুরু, ন - না, চ - ও, সংপ্রতিষ্ঠা - সমাক স্থিতি। অশ্বত্থম্ - অশ্বত্থ বৃক্ষ, এনম্ - এই, সুবিরূঢ়- সুদৃঢ়, মূলম্ - মূল, অসঙ্গ-শস্ত্রেণ - বৈরাগ্যরুপ অস্ত্রের দ্বারা, দৃঢ়েন - তীব্র, ছিত্ত্বা - ছেদন করে॥৩॥
শ্লোক:4:
ততঃ পদং তৎপরিমার্গিতব্যং যস্মিন্ গতা ন নিবর্তন্তি ভুয়ঃ ।
তমেব চাদ্যং পুরুষং প্রপদ্যে যতঃ প্রবৃত্তিঃ প্রসৃতা পুরাণী ॥৪॥
শব্দার্থঃ
ততঃ - তারপর, পদম্ - পদ, তৎ - সেই, পরিমার্গিতব্যম্ - অন্বেষণ করা কর্তব্য, যস্মিন্ - যেখানে, গতাঃ - গমন করলে, ন - না, নিবর্তন্তি - ফিরে আসতে হয় , ভুয়ঃ - পুণরায়। তম্ - তাকে, এব - অবশ্যই, চ - ও, আদ্যম্ - আদি, পুরুষম্ - পুরুষের প্রতি, প্রপদ্যে - শরণ গ্রহণ কর, যতঃ - যাঁর থেকে, প্রবৃত্তিঃ - প্রবর্তন, প্রসৃতা - বিস্তৃত হয়েছে, পুরাণী - স্মরণাতীত কাল থেকে ॥৪॥
অনুবাদ:- এই বৃক্ষের স্বরূপ এই জগতে উপলব্ধ হয় না। এর আদি, অন্ত ও স্থিতি যে কোথায় তা কেউই বুঝতে পারে না। তীব্র বৈরাগ্যরূপ অস্ত্রের দ্বারা দৃঢ়মূল এই বৃক্ষকে ছেদন করে সত্য বস্তুর অন্বেষণ করা কর্তব্য, যেখানে গমন করলে, পুনরায় ফিরে আসতে হয় না। স্মরণাতীত কাল হতে যাঁর থেকে সমস্ত কিছু প্রবর্তন ও বিস্তৃত হয়েছে, সেই আদি পুরুষের প্রতি শরণাগত হও।
শ্লোক:5:
নির্মানমোহা জিতসঙ্গদোষা অধ্যাত্মনিত্যা বিনিবৃত্তকামাঃ ।
দ্বন্দ্বৈর্বিমুক্তাঃ সুখদুঃখসংজ্ঞৈ-র্গচ্ছন্ত্যমূঢ়াঃ পদমব্যয়ং তৎ ॥৫॥
শব্দার্থঃ
নিঃ- শূন্য, মান- অভিমান, মোহাঃ - মোহ, জিত - বিজিত, সঙ্গ - সঙ্গের, দোষাঃ -দোষ ,অধ্যাত্ম - পারমার্থিক জ্ঞানে, নিত্যাঃ - নিত্যত্ব, বিনিবৃত্ত- বর্জিত, কামাঃ - কামনা_বাসনা। দ্বন্দ্বৈঃ - দ্বন্দ্ব সমূহ থেকে,বিমুক্তাঃ - মুক্ত, সুখ-দুঃখ- সুখ ও দুঃখ, সংজ্ঞৈঃ - নামক, গচ্ছন্তি - লাভ করেন, অমূঢ়াঃ - মোহমুক্ত ব্যক্তিগণ , পদম্ - পদ, অব্যয়ম্ - নিত্য, তৎ - সেই॥৫॥
অনুবাদ:-যাঁরা অভিমান ও মোহশূন্য, সঙ্গদোষ রহিত, নিত্য-অনিত্য বিচার পরায়ণ, কামনা- বাসনা বর্জিত, সুখ-দুঃখ আদি দ্বন্দ্বসমূহ থেকে মুক্ত এবং মোহমুক্ত, তাঁরাই সেই অব্যয় পদ লাভ করেন ।
শ্লোক:6:
ন তদ্ ভাসয়তে সূর্যো ন শশাঙ্কো ন পাবকঃ ।
যদ্ গত্বা ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম ॥৬॥
শব্দার্থঃ
ন - না, তৎ - তা, ভাসয়তে - আলোকিত করতে পারে, সূর্যঃ - সূর্য, ন - না, শশাঙ্কঃ - চন্দ্র, ন - না, পাবকঃ- অগ্নি, বিদ্যুৎ। যৎ - যেখানে, গত্বা - গেলে, ন - না, নিবর্তন্তে - ফিরে আসে, তৎ - সেই, ধাম - ধাম, পরমম্ - পরম, মম - আমার ॥৬॥
অনুবাদ:-সূর্য, চন্দ্র, অগ্নি বা বিদ্যুৎ আমার সেই পরম ধামকে আলোকিত করতে পারে না। সেখানে গেলে আর এই জড় জগতে ফিরে আসতে হয় না।
শ্লোক:7:
মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ ।
মনঃষষ্ঠানীন্দ্রিয়াণি প্রকৃতিস্থানি কর্ষতি ॥৭॥
শব্দার্থঃ
মম - আমার; এব–অবশ্যই; অংশঃ-বিভিন্নাংশ; জীবলোকে - জড় জগতে, জীবভূতঃ—বদ্ধ জীব; সনাতনঃ – নিত্য। মনঃ—মন সহ, যষ্ঠানি—ছয়, ইন্দ্রিয়াণি - ইন্দ্রিয়গুলিকে, প্রকৃতি— জড়া প্রকৃতিতে; স্থানি—হিত, কর্ষতি - কঠোর সংগ্রাম করছে।
অনুবাদ:- এই জড় জগতে বদ্ধ জীবসমূহ আমার সনাতন বিভিন্নাংশ। জড়া প্রকৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ফলে তারা মন সহ ছয়টি ইন্দ্রিয়ের দ্বারা প্রকৃতিরূপ ক্ষেত্রে কঠোর সংগ্রাম করছে।
শ্লোক:8:
শরীরং যদবাপ্নোতি যচ্চাপ্যুৎক্রামতীশ্বরঃ ।
গৃহীত্বৈতানি সংযাতি বায়ুর্গন্ধানিবাশয়াৎ॥৮॥
শব্দার্থঃ
শরীরম্ - দেহ, যৎ - যেমন, অবাপ্নোতি - প্রাপ্ত হয়, যৎ - , চ অপি - ও, উৎক্রামতি - নিষ্ক্রান্ত হয়, ঈশ্বরঃ - দেহের ঈশ্বর। গৃহীত্বা - গ্রহণ করে, এতানি - এই সমস্ত, সংযাতি - গমন করে, বায়ুঃ - বায়ু, গন্ধান - গন্ধ, ইব - মতন, আশয়াৎ - ফুল থেকে॥৮॥
অনুবাদ:- বায়ু যেমন ফুলের গন্ধ নিয়ে অন্যত্র গমন করে, তেমনই এই জড় জগতে দেহের ঈশ্বর জীব এক শরীর থেকে অন্য শরীরে তার জীবনের বিভিন্ন ধারণাগুলি নিয়ে যায়।
শ্লোক:9:
শ্রোত্রং চক্ষুঃ স্পর্শনং চ রসনং ঘ্রাণমেব চ ।
অধিষ্ঠায় মনশ্চায়ং বিষয়ানুপসেবতে ॥৯॥
শব্দার্থঃ
শ্রোত্রম্ - কর্ণ, চক্ষুঃ - চক্ষু, স্পর্শনম্ - ত্বক, চ - ও, রসনম্ - জিহ্বা, ঘ্রাণম্ - ঘ্রাণশক্তি, এব - ও, চ - এবং। অধিষ্ঠায় - আশ্রয় করে, মনঃ - মন, চ - ও, অয়ম্ - এই জীব, বিষয়ান - ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহ, উপসেবতে - উপভোগ করে ॥৯॥
অনুবাদ:-এই জীব চক্ষু, কর্ণ, ত্বক, জিহ্বা, নাসিকা ও মনকে আশ্রয় করে ইন্দ্রিয়ের বিষয়সমূহ উপভোগ করে।
শ্লোক:10:
উৎক্রামন্তং স্থিতং বাপি ভুঞ্জানং বা গুণান্বিতম্।
বিমুঢ়া নানুপশ্যন্তি পশ্যন্তি জ্ঞানচক্ষুষঃ ॥১০॥
শব্দার্থঃ
উৎক্রামন্তম্ - দেহ ত্যাগ করে, স্থিতম্ - দেহে স্থিত, বা অপি - দুটির মধ্যে কোন একটি, ভুঞ্জানম্ - উপভোগ করে, বা - অথবা, গুণ-অন্বিতম্ - প্রকৃতির গুণের প্রভাবে আচ্ছন্ন। বিমুঢ়াঃ - মূঢ় লোকেরা, ন - না, অনুপশ্যন্তি - দেখতে পায়, পশ্যন্তি - দেখতে পান, জ্ঞানচক্ষুষঃ - জ্ঞানচক্ষু বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ॥১০॥
অনুবাদ:- মুঢ় লোকেরা দেখতে পায় না কিভাবে জীব দেহ ত্যাগ করে অথবা প্রকৃতির গুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিভাবে তার পরবর্তী শরীর সে উপভোগ করে। কিন্তু জ্ঞান-চক্ষুবিশিষ্ঠ ব্যক্তিগণ সমস্ত বিষয় দেখতে পান।
শ্লোক:11:
যতন্তো যোগিনশ্চৈনং পশ্যন্ত্যাত্মন্যবস্থিতম্।
যতন্তোহ্প্যকৃতাত্মানো নৈনং পশ্যন্ত্যচেতসঃ ॥১১॥
শব্দার্থঃ
যতন্তঃ - যত্নশীল, যোগিনঃ - যোগীগণ, চ - ও, এনম্ - এই, পশ্যন্তি - দর্শন করতে পারেন, আত্মনি - আত্মায়, অবস্থিতম্ - অবস্থিত। যতন্তঃ - যত্ন পরায়ণ হয়ে, অপি - ও, অকৃত-আত্মানঃ - আত্মত্বত্ত্ব জ্ঞান রহিত, ন - না, এনম্ - এই, পশ্যন্তি - দেখতে পায়, অচেতসঃ - অবিবেকিগণ ॥১১॥
অনুবাদ:- আত্মজ্ঞানে অধিষ্ঠিত যত্নশীল যোগীগণ, এই তত্ত্ব দর্শন করতে পারেন ৷ কিন্তু আত্ম-তত্ত্বজ্ঞান রহিত অবিবেকীগণ যত্নপরায়্ণ হয়েও এই তত্ত্ব অবগত হয় না।
শ্লোক:12:
যদাদিত্যগতং তেজো জগদ্ ভাসয়েতেহখিলম্ ।
যচ্চন্দ্রমসি যচ্চাগ্নৌ তত্তেজো বিদ্ধি মামকম্ ॥১২॥
শব্দার্থঃ
যৎ - যে, আদিত্য-গতম্ - সূর্যস্থিত, তেজঃ - জ্যোতি, জগৎ - বিশ্বকে, ভাসয়েতে - প্রকাশিত করে, অখিলম্ - সমগ্র। যৎ - যে, চন্দ্রমসি - চন্দ্রে, যৎ - যে, চ - ও, অগ্নৌ - অগ্নিতে, তৎ - সেই, তেজঃ - তেজ, বিদ্ধি - জানবে, মামকম্ - আমার॥১২॥
অনুবাদ:- সূর্যের যে জ্যোতি এবং চন্দ্র ও অগ্নির যে জ্যোতি সমগ্র জগতকে উদ্ভাসিত করে, তা আমারই তেজ বলে জানবে।
শ্লোক:13:
গামাবিশ্য চ ভূতানি ধারয়াম্যহমোজসা ।
পুষ্ণামি চৌষধীঃ সর্বাঃ সোমো ভূত্বা রসাত্মকঃ ॥১৩॥
শব্দার্থঃ
গাম্ - পৃথিবীতে, আবিশ্য - প্রবিষ্ট হয়ে, চ - ও, ভূতানি - জীব সমূহকে, ধারয়ামি - ধারণকরি, অহম্ - আমি, ওজসা - আমার শক্তি দ্বারা। পুষ্ণামি - পুষ্ট করছি, চ - এবং, ওষধীঃ - ধান, রব আদি ঔষধি, সর্বাঃ - সমস্ত, সোমঃ - চন্দ্র, ভূত্বা - হয়ে, রস-আত্মকঃ - রসময় ॥১৩॥
অনুবাদ:-আমি পৃথিবীতে প্রবিষ্ট হয়ে আমার শক্তির দ্বারা সমস্ত জীবদের ধারণ করি এবং রসাত্মক চন্দ্ররূপে ধান, যব আদি ঔষধি পুষ্ট করছি।
শ্লোক:14:
অহং বৈশ্বানরো ভূত্বা প্রাণিনাং দেহমাশ্রিতঃ ।
প্রাণাপানসমাযুক্তঃ পচাম্যন্নং চতুর্বিধম্ ॥১৪॥
শব্দার্থঃ
অহম্- আমি, বৈশ্বানরঃ- জঠরাগ্নি, ভূত্বা - হয়ে, প্রাণিনাম্ - প্রাণিগণের, দেহম্ - দেহ, আশ্রিতঃ - আশ্রয় করে। প্রাণ- প্রাণবায়ু, অপান- অপানবায়ু, সমাযুক্তঃ - সংযোগে, পচামি - পরিপাক করি, অন্নম্ - খাদ্য, চতুঃ-বিধম্ - চার প্রকার॥১৪॥
অনুবাদ:- আমি জঠরাগ্নি রূপে প্রাণীগণের দেহ আশ্রয় করে প্রাণ ও অপান বায়ুর সংযোগে চার প্রকার খাদ্য পরিপাক করি।
শ্লোক:15:
সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো মত্তঃ স্মৃতির্জ্ঞানমপোহনং চ ।
বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যো বেদান্তকৃদ্ বেদবিদেব চাহম্ ॥১৫॥
শব্দার্থঃ
সর্বস্য - সমস্ত জীবের, চ - এবং, অহম্ - আমি, হৃদি - হৃদয়ে, সন্নিবিষ্টঃ - অবস্থিত, মত্তঃ - আমার থেকে, স্মৃতিঃ - স্মৃতি, জ্ঞানম্ - জ্ঞান, অপোহনম্ - বিলোপ, চ - এবং। বেদৈঃ - বেদ সমূহের দ্বারা, চ - ও, সর্বৈঃ - সমস্ত, অহম্ - আমি, এব - অবশ্যই, বেদ্যঃ - জ্ঞাতব্য, বেদান্তকৃৎ - বেদান্তকর্তা, বেদবিৎ - বেদজ্ঞ, এব - অবশ্যই, চ - ও, অহম্ - আমি ॥১৫॥
অনুবাদ:- আমি সমস্ত জীবের হৃদয়ে অবস্থিত এবং আমার থেকেই স্মৃতি, জ্ঞান ও বিলোপ হয়। আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য এবং আমিই বেদান্তকর্তা ও বেদবিৎ।
শ্লোক:16:
দ্বাবিমৌ পুরুষৌ লোকে ক্ষরশ্চাক্ষর এব চ ।
ক্ষরঃ সর্বাণি ভূতানি কুটস্থোহক্ষর উচ্যতে ॥১৬॥
শব্দার্থঃ
দ্বৌ - দুই, ইমৌ - এই, পুরুষৌ - জীব, লোকে - জগতে, ক্ষরঃ - বিনাশী, চ - ও, অক্ষরঃ - অবিনাশী, এব - অবশ্যই, চ - এবং। ক্ষরঃ - বিনাশী, সর্বাণি - সমস্ত, ভূতানি - জীব, কুটস্থঃ - একভাবে স্থিত, অক্ষরঃ - অবিনাশী, উচ্যতে - বলা হয়॥১৬॥
অনুবাদ:- ক্ষর ও অক্ষর দুই প্রকার জীব রয়েছে। এই জড় জগতের সমস্ত জীবকে ক্ষর, এবং চিৎ-জগতের সমস্ত জীবকে অক্ষর বলা হয়।
শ্লোক:17:
উত্তমঃ পুরুষস্ত্বন্যঃ পরমাত্মেত্যুদাহৃত ।
যো লোকত্রয়মাবিশ্য বিভর্ত্যব্যয় ঈশ্বরঃ ॥১৭॥
শব্দার্থঃ
উত্তমঃ - উত্তম, পুরুষঃ - পুরুষ, তু - কিন্তু, অন্যঃ - অন্য, পরম- পরম, আত্মা - আত্মা, ইতি - এইভাবে, উদাহৃত - বলা হয়। যঃ - যিনি, লোক- ভূবনে, ত্রয়ম্ - তিন, আবিশ্য - প্রবিষ্ট হয়ে, বিভর্তি - পালন করছেন, অব্যয়ঃ - অব্যয়, ঈশ্বরঃ - ঈশ্বর॥১৭॥
অনুবাদ:- এই উভয় থেকে ভিন্ন উত্তম পুরুষকে বলা হয় পরমাত্মা, যিনি ঈশ্বর ও অব্যয় এবং ত্রিজগতের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে পালন করছেন।
শ্লোক:18:
যস্মাৎ ক্ষরমতীতোহহমক্ষরাদপি চোত্তমঃ ।
অতোহস্মি লোকে বেদে চ প্রথিতঃ পুরুষোত্তম্ ॥১৮॥
শব্দার্থঃ
যস্মাৎ - যেহেতু, ক্ষরম্ - ক্ষরের, অতীতঃ - অতীত, অহম্ - আমি, অক্ষরাৎ - অক্ষর থেকে, অপি - ও, চ - এবং, উত্তমঃ - উত্তম। অতঃ - অতএব, অস্মি - হই, লোকে - জগতে, বেদে - বৈদিক শাস্ত্রে, চ - ও, প্রথিতঃ - বিখ্যাত, পুরুষ-উত্তমঃ - পুরুষোত্তম নামে॥১৮॥
অনুবাদ:- যেহেতু আমি ক্ষরের অতীত এবং অক্ষর থেকেও উত্তম, সেই হেতু জগতে ও বেদে আমি পুরুষোত্তম নামে বিখ্যাত।
শ্লোক:19:
যো মামেবমসংমূঢ় জানাতি পুরুষোত্তমম্ ।
স সর্ববিদ্ ভজতি মাং সর্বভাবেন ভারত ॥১৯॥
শব্দার্থঃ
যঃ - যিনি, মাম্ - আমাকে, এবম্ - এভাবে, অসংমূঢ়ঃ - নিঃসন্দেহে, জানাতি - জানেন, পুরুষ-উত্তমম্ - পরমেশ্বর ভগবান। সঃ - তিনি, সর্ববিৎ - সর্বজ্ঞ, ভজতি - ভজনা করেন, মাম্ - আমাকে, সর্বভাবেন - সর্বতোভাবে, ভারত - হে ভারত ॥১৯॥
অনুবাদ:- হে ভারত ! যিনি নিঃসন্দেহে আমাকে পুরুষোত্তম বলে জানেন, তিনি সর্বজ্ঞ এবং তিনি সর্বতোভাবে আমাকে ভজনা করেন।
শ্লোক:20:
ইতি গুহ্যতমং শাস্ত্রমিদমুক্তং ময়ানঘ ।
এতদ্ বুদ্ধা বুদ্ধিমান্ স্যাৎ কৃতকৃত্যশ্চ ভারত ॥২০॥
শব্দার্থঃ
ইতি - এভাবেই, গুহ্যতমম্ - সবচেয়ে গোপনীয়, শাস্ত্রম্ -শাস্ত্র, ইদম্ - এই, উক্তম্ - কথিত হল, ময়া - আমার দ্বারা, অনঘ - হে নিষ্পাপ। এতৎ - এই, বুদ্ধা - অবগত হয়ে, বুদ্ধিমান্ - বুদ্ধিমান, স্যাৎ - হন, কৃতকৃত্যঃ - কৃতার্থ, চ - ও, ভারত - হে ভারত ॥২০॥
অনুবাদ:- হে নিষ্পাপ অর্জুন! হে ভারত! এভাবেই সবচেয়ে গোপনীয় শাস্ত্র আমি তোমার কাছে প্রকাশ করলাম। যিনি এই তত্ত্ব অবগত হয়েছেন, তিনি প্রকৃত বুদ্ধিমান ও কৃতার্থ হন।
ওঁ তৎসদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে 'পুরুষোত্তমযোগো' নামক পঞ্চদশোঽধ্যায়ঃ সমাপ্তম্।
<
Post a Comment