Header Ads


একাদশ অধ্যায় - বিশ্বরুপদর্শন যোগ

একাদশ অধ্যায় - বিশ্বরুপদর্শন যোগ

ওঁ তৎ সৎ

ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়ঃ

শ্রীমদ্ভগবদ গীতা

শ্লোক:1:

অর্জুন উবাচঃ

মদনুগ্রহায় পরমং গুহ্যমধ্যাত্মসংজ্ঞিতম্ ।

যত্ত্বয়োক্তং বচস্তেন মোহোহয়ং বিগতো মম ॥১॥

শব্দার্থঃ অর্জুনঃ উবাচ—অর্জুন বললেন; মদনুগ্রহায় আমার প্রতি অনুগ্রহ করে, পরমম্— পরম; গুহ‍্যম্— গোপনীয়, অধ্যাত্ম-অধ্যাত্ম সংজ্ঞিতম্ – বিষয়ক। যৎ— যে; ত্বয়া— তোমার দ্বারা, মোহঃ তোমার দ্বারা, উক্তম্— উক্ত হয়েছে, বচঃ—বাক্য; তেন— তার দ্বারা, মোহঃ - মোহ, অয়ম্—এই, বিগতঃ — দূর হয়েছে, মম - আমার।

অনুবাদ:- অর্জুন বললেন- আমার প্রতি অনুগ্রহ করে তুমি যে অধ্যাত্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় পরম গুহ্য উপদেশ আমাকে দিয়েছ, তার দ্বারা আমার এই মোহ দূর হয়েছে।


শ্লোক:2:

ভবাপ্যয়ৌ হি ভূতানাং শ্রুতৌ বিস্তরশো ময়া ।

ত্বত্তঃ কমলপত্রাক্ষ মাহাত্মমপি চাব্যয়ম্ ॥২॥

শব্দার্থঃ ভব—উৎপত্তি; অপ‍্যায়ৌ – লয়; হি — অবশ্যই, ভূতানাম্ - সমস্ত জীবের, শ্রুতৌ - শ্রুত হয়েছে; বিস্তরশঃ — বিস্তারিতভাবে, ময়া - আমার দ্বারা, ত্বত্তঃ - তোমার থেকে, - কমলপত্রাক্ষ–হে পদ্মপলাশলোচন; মাহাত্ম্যম্ — মাহাত্ম্য: অপি–ও, চ - এবং, অব্যয়ম্—অব্যয়।

অনুবাদ:- হে পদ্মপলাশলোচন ! সর্বভূতের উৎপত্তি ও প্রলয় তোমার থেকেই হয় এবং তোমার কাছ থেকেই আমি তোমার অব্যয় মাহাত্ম্য অবগত হলাম।

শ্লোক:3:

এবমেতদ্ যথাত্থ ত্বমাত্মানং পরমেশ্বর ।

দ্রষ্টুমিচ্ছামি তে রূপমৈশ্বরং পুরুষোত্তম ॥৩॥

শব্দার্থঃ এবম্—এরূপ; এতং—এই; যথা — যথাযথ; আথ—বলেছ, ত্বম্—তুমি; আত্মান— নিজেকে; পরমেশ্বর— হে পরমেশ্বর ভগবান। দ্রষ্টুম্— দেখতে; ইচ্ছামি—ইচ্ছা করি; তে—তোমার; রূপম্—রূপ; ঐশ্বরম্ —ঐশ্বর্যময়; পুরুষোত্তম—হে পুরুষোত্তম।

অনুবাদ:- হে পরমেশ্বর! তোমার সম্বন্ধে যেরূপ বলেছ, যদিও আমার সম্মুখে তোমাকে সেই রূপেই দেখতে পাচ্ছি, তবুও হে পুরুষোত্তম! তুমি যে ভাবে এই বিশ্বে প্রবেশ করেছ, আমি তোমার সেই ঐশ্বর্যময় রূপ দেখতে ইচ্ছা করি।


শ্লোক:4:

মন্যসে যদি তচ্ছক্যং ময়া দ্রষ্টুমিতি প্রভো ।

যোগেশ্বর ততো মে ত্বং দর্শয়াত্মানমব্যয়ম্॥৪॥

শব্দার্থঃ মন্যসে—মনে কর; যদি— যদি, তৎ— তা, শক্যম্—সমর্থ; ময়া—আমার দ্বারা; দ্রষ্টুম—দেখতে; ইতি—এভাবে, প্রভো–হে প্রভু। যোগেশ্বর–হে যোগেশ্বর, ততঃ—তারপর; মে— আমাকে; ত্বম্ - তুমি; দর্শয়— দেখাও; আত্মানম্— তোমার স্বরূপ; অব্যয়ম্ —নিত্য।

অনুবাদ:- হে প্রভু, তুমি যদি মনে কর যে, আমিতোমার এই বিশ্বরূপ দর্শন করার যোগ্য, তা হলে হে যোগেশ্বর! আমাকে তোমার সেই নিত্যস্বরূপ দেখাও।


শ্লোক:5:

শ্রীভগবানুবাচঃ

পশ্য মে পার্থ রূপাণি শতশোহথ সহস্রশঃ ।

নানাবিধানি দিব্যানি নানা বর্ণাকৃতীনি চ ॥৫॥

শব্দার্থঃ শ্রীভগবান্ উবাচ—পরমেশ্বর ভগবান বললেন; পশ্য—দেখ; মে—আমার; পার্থ— হে পৃথাপুত্র; রূপাণি—রূপসকল; শতশঃ —শত শত, অথ—ও; সহস্রশঃ —সহস্র সহস্র। নানাবিধানি—নানাবিধ, দিব্যানি— দিব্য, নানা—বিভিন্ন, বর্ণ—বর্ণ; আকৃতীনি—আকৃতি, চ–ও |

অনুবাদ:- শ্রীভগবান বললেন- হে পার্থ ! নানা বর্ণ ও নানা আকৃতি-বিশিষ্ট শত শত ও সহস্র সহস্র আমার বিভিন্ন দিব্য রূপসমূহ দর্শন কর।


শ্লোক:6:

পশ্যাদিত্যান্ বসূন্ রুদ্রানঅশ্বিনৌ মরুতস্তথা ।

বহূন্যদৃষ্টপূর্বাণি পশ্যাশ্চর্যাণি ভারত ॥৬॥

শব্দার্থঃ পশ্য—দেখ; আদিত্যান্— অদিতির দ্বাদশ পুত্র, বসুন্— অষ্টবসু; রুদ্রান্—একাদশ রুদ্র; অশ্বিনৌ—অশ্বিনীকুমারদ্বয়; মরুতঃ—ঊনপঞ্চাশ মরুত (বায়ুর দেবতা); তথা—এবং। বহুনি—বহু, অদৃষ্ট—যা তুমি দেখনি; পূর্বাণি— পূর্বে, পশ‍্য - দেখ, আশ্চর্যাণি—আশ্চর্য; ভারত–হে ভারতশ্রেষ্ঠ।

অনুবাদ:- হে ভারত, দ্বাদশ আদিত্য, অষ্টবসু, একাদশ রুদ্র, অশ্বিনীকুমারদ্বয়, উনপঞ্চাশ মরুত এবং অনেক অদৃষ্টপূর্ব আশ্চর্য রূপ দেখ।


শ্লোক:7:

ইহৈকস্থং জগৎ কৃৎস্নং পশ্যাদ্য সচরাচরম্ ।

মম দেহে গুড়াকেশ যচ্চান্যদ্ দ্রষ্টুমিচ্ছসি ॥৭॥

শব্দার্থঃ ইহ্‌—এই, একস্থম্ —একত্রে অবস্থিত, জগৎ— বিশ্ব, কৃত্স্নম্ — সমগ্র: পশ্য – দেখ; অদ্য এক্ষণে, স— সহ, চর–জম, অচরম্–স্থাবর। মম- আমার, দেহে - শরীরে; গুড়াকেশ—হে অর্জুন, যৎ— যা কিছু চ–ও; অন্যৎ – অন্য; দ্রষ্টুম্ - দেখতে; ইচ্ছসি—ইচ্ছা কর।

অনুবাদ:- হে অর্জুন ! আমার এই বিরাট শরীরে একত্রে অবস্থিত সমগ্র স্থাবর-জঙ্গমাত্মক বিশ্ব এবং অন্য যা কিছু দেখতে ইচ্ছা কর, তা এক্ষণে দর্শন কর।


শ্লোক:8:

ন তু মাং শক্যসে দ্রষ্টুমনেনৈব স্বচক্ষুষা ।

দিব্যং দদামি তে চক্ষুঃ পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্ ॥৮॥

শব্দার্থঃ ন - না; তু—কিন্তু, মাম্ - আমাকে, শক্যসে— সক্ষম হবে; দ্রষ্টুম্—দেখতে; অনেন—এই; এব—অবশ্যই, স্বচক্ষুষা— তোমার নিজের চক্ষুর দ্বারা। দিব্যম্ – দিব্য; দদামি—প্রদান করছি; তে– তোমাকে; চক্ষুঃ - চক্ষু, পশ‍্য – দেখ, মে—আমার, যোগমৈশ্বরম্—অচিন্ত্য যোগশক্তি।

অনুবাদ:- কিন্তু তুমি তোমার বর্তমান চক্ষুর দ্বারা আমাকে দর্শন করতে সক্ষম হবে না। তাই, আমি তোমাকে দিব্যচক্ষু প্রদান করছি৷ তুমি আমার অচিন্ত্য যোগৈশ্বর্য দর্শন কর !


শ্লোক:9:

সঞ্জয় উবাচঃ

এবমুক্ত্বা ততো রাজন্ মহাযোগেশ্বরো হরিঃ ।

দর্শয়ামাস পার্থায় পরমং রূপমৈশ্বরম্ ॥৯॥

শব্দার্থঃ সঞ্জয়ঃ ঊবাচ—সঞ্জয় বললেন: এবম্—এভাবে, উক্তা - বলে; ততঃ - তারপর; রাজন—হে রাজন, মহাযোগেশ্বরঃ—মহান যোগেশ্বর, হরিঃ- পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দর্শয়ামাস—দেখালেন, পার্থায় - অর্জুনকে পরমম্— পরম; রূপম্ ঐশ্বরম্—বিশ্বরূপ।

অনুবাদ:- সঞ্জয় বললেন- হে রাজন! এভাবেই বলে, মহান যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তাঁর বিশ্বরূপ দেখালেন।


শ্লোক:10:

অনেকবক্ত্রনয়নমনেকাদ্ভুতদর্শনম্ ।

অনেকদিব্যাভরণং দিব্যানেকোদ্যতায়ুধম্ ॥১০॥

শব্দার্থঃ অনেক–বহু; বক্ত্র—মুখ; নয়নম্ – চক্ষু, অনেক - বহু, অদ্ভুত - অদ্ভুত, দর্শনম্ - দর্শনীয় বস্তু, অনেক — বহু, দিব্য — দিব‍্য আভরণম্ - অলঙ্কার, দিব‍্য - দিব‍্য, অনেক—অনেক; উদ্যত—উদ্যত; আয়ুধম্ — অস্ত্র।

শ্লোক:11:

দিব্যমাল্যাম্বরধরং দিব্যগন্ধানুলেপনম্ ।

সর্বাশ্চর্যময়ং দেবমনন্তং বিশ্বতোমুখম্ ॥১১||

শব্দার্থঃ দিব্য — দিব্য; মাল্য—মালা, অম্বরধরম্ —বস্ত্র শোভিত, দিব্য — দিব্য; গন্ধ — গন্ধ; অনুলেপনম্ — অনুলিপ্ত; সর্ব— সমস্ত; আশ্চর্যময়ম্—আশ্চর্যজনক; দেবম্ – দ্যুতিময়; অনন্তম্— অন্তহীন; বিশ্বতোমুখম্—সর্বত্র পরিব্যাপ্ত।

অনুবাদ:- অর্জুন সেই বিশ্বরূপে অনেক মুখ, অনেক নেত্র ও অনেক অদ্ভুত দর্শনীয় বস্তু দেখলেন৷ সেই রূপ অসংখ্য দিব্য অলঙ্কারে সজ্জিত ছিল এবং অনেক উদ্যত দিব্য অস্ত্র ধারণ করেছিল৷ সেই বিশ্বরূপ দিব্য মালা ও দিব্য বস্ত্রে ভূষিত ছিল এবং তাঁর শরীর দিব্য গন্ধ দ্বারা অনুলিপ্ত ছিল৷ সবই ছিল অত্যন্ত আশ্চর্যজনক, জ্যোর্তিময়, অনন্ত ও সর্বব্যপী।


শ্লোক:12:

দিবি সূর্যসহস্রস্য ভবেদ্ যুগপদুত্থিতা ।

যদি ভাঃ সদৃশী সা স্যাদ্ ভাসস্তস্য মহাত্মনঃ ॥১২॥

শব্দার্থঃ দিবি, সূর্য-সহস্রস্য, ভবেৎ, যুগপৎ, উত্থিতা, যদি, ভাঃ, সদৃশী, সা, স্যাৎ, ভাসঃ, তস্য, মহাত্মনঃ ॥১২॥

শব্দার্থঃ দিবি—আকাশে; সূর্য—সূর্যের; সহস্রস্য – সহস্র, ভবেৎ- হয়; যুগপৎ - একসঙ্গে, উত্থিতা—সমুদিত; যদি— যদি; ভাঃ – প্রভা; সদৃশী – তুলা, সা— তা, স্যাৎ - হতে পারে; ভাসঃ—প্রভা; তস্য—সেই, মহাত্মনঃ— মহাত্মা বিশ্বরূপের।

অনুবাদ:- যদি আকাশে সহস্র সূর্যের প্রভা যুগপৎ উদিত হয়, তা হলে সেই মহাত্মা বিশ্বরূপের প্রভার কিঞ্চিৎ তুল্য হতে পারে।


শ্লোক:13:

তত্রৈকস্থং জগৎ কৃৎস্নং প্রবিভক্তমনেকধা ।

অপশ্যদ্দেবদেবস্য শরীরে পাণ্ডবস্তদা ॥১৩॥

শব্দার্থঃ তত্র—সেখানে; একস্থম্—এক স্থানে অবস্থিত, জগৎ – বিশ্ব, কৃত্স্নম্ – সমগ্র, প্রবিভক্তম্—বিভক্ত; অনেকধা–বহু প্রকার; অপশ্যৎ – দেখলেন, দেবদেবস্য - পরমেশ্বর ভগবানের, শরীরে—বিশ্বরূপে, পাণ্ডবঃ—অর্জুন, তদা - তখন।

অনুবাদ:- তখন অর্জুন পরমেশ্বর ভগবানের বিশ্বরূপে নানাভাবে বিভক্ত সমগ্র জগৎ একত্রে অবস্থিত দেখলেন।


শ্লোক:14:

ততঃ স বিস্ময়াবিষ্টো হৃষ্টরোমা ধনঞ্জয়ঃ ।

প্রণম্য শিরসা দেবং কৃতাঞ্জলিরভাষত ॥১৪॥

শব্দার্থঃ ততঃ - তারপর, সঃ — তিনি; বিস্ময়াবিষ্টঃ — বিস্ময়ান্বিত; হৃষ্টরোমা—রোমাঞ্চিত হয়ে, ধনঞ্জয়ঃ—অর্জুন, প্রণম্য - প্রণাম করে; শিরসা-মস্তক দ্বারা, দেবম্— পরমেশ্বর ভগবানকে; কৃতাঞ্জলিঃ–করজোড়ে, অভাষত - বললেন।

অনুবাদ:- তারপর সেই অর্জুন বিস্মিত ও রোমাঞ্চিত হয়ে এবং অবনত মস্তকে ভগবানকে প্রণাম করে করজোড়ে বলতে লাগলেন ।


শ্লোক:15:

অর্জুন উবাচঃ

পশ্যামি দেবাংস্তব দেব দেহে সর্বাংস্তথা ভূতবিশেষসঙ্ঘান্ ।

ব্রহ্মাণমীশং কমলাসনস্থম্ ঋষীংশ্চ সর্বানুরগাংশ্চ দিব্যান্ ॥১৫॥

শব্দার্থঃ অর্জুনঃ উবাচ—অর্জুন বললেন; পশ্যামি—দেখছি, দেবান্― সমস্ত দেবতাদেরকে; তব–তোমার, দেব—হে দেব, দেহে—দেহে; সর্বান্— সমস্ত, তথা—ও; ভৃত – প্রাণীদেরকে; বিশেষসঙ্ঘান্ - বিশেষভাবে সমবেত, ব্রহ্মাণম্ - ব্রহ্মাকে, ঈশম্— শিবকে; কমলাসনস্থম্—–কমলাসনে স্থিত; ঋষীন্ – মহর্ষিদেরকে, চ–ও; সর্বান্— সমস্ত; উরগান্—সর্পদেরকে, চ―ও, দিব্যান্—দিবা।

অনুবাদ:- অর্জুন বললেন- হে দেব! তোমার দেহে দেবতাদের, বিবিধ প্রাণীদের, কমলাসনে স্থিত ব্রহ্মা, শিব, ঋষিদের ও দিব্য সর্পদেরকে দেখছি।


শ্লোক:16:

অনেকবাহূদরবক্ত্রনেত্রং পশ্যামি ত্বাং সর্বতোহনন্তরূপম্ ।

নান্তং ন মধ্যং ন পুনস্তবাদিং পশ্যামি বিশ্বেশর বিশ্বরূপ ॥১৬॥

শব্দার্থঃ অনেক—অনেক; বাহু—বাহু, উদর–উদর; বক্ত্র–মুখ; নেত্রম্ – চক্ষু; পশ্যামি— দেখছি: ত্বাম্—তোমাকে, সর্বতঃ—সর্বত্র, অনন্তরূপম্ – অনন্ত রূপ; ন অন্তম্ – অন্তহীন, ন মধ্যম—মধ্যহীন; ন–না, পুনঃ– পুণরায়, তব - তোমার, আদিম্ - আদি; পশ্যামি—দেখছি, বিশ্বেশ্বর— হে জগদীশ্বর, বিশ্বরূপ–হে বিশ্বরূপ।

অনুবাদ:- হে বিশ্বেশ্বর ! হে বিশ্বরূপ ! তোমার দেহে অনেক বাহু, উদর, মুখ এবং সর্বত্র অনন্ত রূপ দেখছি। আমি তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।


শ্লোক:17:

কিরীটিনং গদিনং চক্রিণং চ তেজোরাশিং সর্বতো দীপ্তিমন্তম্ ।

পশ্যামি ত্বাং দুর্নিরীক্ষ্যং সমন্তাদ্ দীপ্তানলার্কদ্যুতিমপ্রমেয়ম্ ॥১৭॥

শব্দার্থঃ কিরীটিনম্—কিরীটযুক্ত, গদিনম্— পদাধারী; চক্রিণম্― চক্রধারী; চ–এবং, তেজোরাশিম্—তেজঃপুঞ্জ স্বরূপ, সর্বতঃ—সর্বত্র; দীপ্তিমন্তম্-দীপ্তিমান; পশ্যামি— দেখছি, ত্বাম্—তোমাকে, দুর্নিরীক্ষাম্ - দুর্নিরীক্ষ্য; সমন্তাৎ—সবদিকে; দীপ্তানল - প্রদীপ্ত অগ্নি; অর্ক–সূর্যের, দ্যুতিম্— দ্যুতি অপ্রমেয়ম্—অপ্রমেয়।

অনুবাদ:- কিরীট শোভিত, গদা ও চক্রধারী, সর্বত্র দিপ্তীমান, তেজঃপুঞ্জ-স্বরূপ, দুর্নিরীক্ষ্য, প্রদীপ্ত অগ্নি ও সূর্যের মতো প্রভাবিশিষ্ট এবং অপ্রমেয় স্বরূপ তোমাকে আমি সর্বত্রই দেখছি।


শ্লোক:18:

ত্বমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্ ।

ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা সনাতনস্ত্বং পুরুষো মতো মে ॥১৮॥

শব্দার্থঃ ত্বম্—তুমি; অক্ষরম্ –ব্রহ্ম; পরমম্ - পরম; বেদিতব্যম্ — জ্ঞাতব্য, ত্বম্ —তুমি; অস্য—এই, বিশ্বস্য— বিশ্বের, পরম্ — পরম, নিধানম্ - আশ্রয়, ত্বম্– তুমি; অব্যয় - অব‍্যয়; শাশ্বতধর্মগোপ্তা - সনাতন ধর্মের রক্ষক; সনাতনঃ — নিত্য; ত্বম্― তুমি; পুরুষঃ —পরম পুরুষ, মতঃ মে - আমার মতে।

অনুবাদ:- তুমি পরম ব্রহ্ম এবং একমাত্র জ্ঞাতব্য। তুমি বিশ্বের পরম আশ্রয়৷ তুমি অব্যয়, সনাতন ধর্মের রক্ষক এবং সনাতন পরম পুরুষ৷ এই আমার অভিমত।


শ্লোক:19:

অনাদিমধ্যান্তমনন্তবীর্যম্ অনন্তবাহুং শশিসূর্যনেত্রম্ ।

পশ্যামি ত্বাং দীপ্তহুতাশবক্ত্রং স্বতেজসা বিশ্বমিদং তপন্তম্ ॥১৯॥

শব্দার্থঃ অনাদিমধ্যান্তম্—আদি, মধ্য ও অন্তহীন, অনন্ত—অন্তহীন; বীর্যম—বীর্যশালী; অনন্ত—অন্তহীন; বাহুম্ - বাহু, শশি—চন্দ্র; সূর্য –সূর্য; নেত্রম্ –চক্ষুদ্বয়; পশ্যামি - দেখছি: ত্বাম্—তোমাকে, দীপ্ত – প্রজ্জ্বলিত: হুতাশবক্ত্রম্ অগ্নিতুল্য মুখবিশিষ্ট; স্বতেজসা—স্বীয় তেজ দ্বারা, বিশ্বম্ – জগৎ, ইদম্ - এই, তপন্তম্— সন্তাপকারী।

অনুবাদ:- আমি দেখছি তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত নেই৷ তুমি অনন্ত বীর্যশালী ও অসংখ্য বাহুবিশিষ্ট এবং চন্দ্র ও সূর্য তোমার চক্ষুদ্বয়৷ তোমার মুখমণ্ডলে প্রদীপ্ত অগ্নির জ্যোতি এবং তুমি স্বীয় তেজে সমস্ত জগৎ সন্তপ্ত করছ।


শ্লোক:20:

দ্যাবাপৃথিব্যোরিদমন্তরং হি ব্যাপ্তং ত্বয়ৈকেন দিশশ্চ সর্বাঃ ।

দৃষ্ট্বাদ্ভুতং রূপমুগ্রং তবেদং লোকত্রয়ং প্রব্যথিতং মহাত্মন্ ॥২০॥

শব্দার্থঃ দ‍্যৌ - দ্যুলোক; আপৃথিব্যোঃ — পৃথিবীর; ইদম্—এই, অন্তরম্ — মধ্যস্থল, হি - অবশ্যই, ব্যাপ্তম্ – ব্যাপ্ত, ত্বয়া— তোমার দ্বারা, একেন একমাত্র, দিশঃ — দিক, চ– এবং; সর্বাঃ—সমস্ত, দৃষ্ট্বা—দেখে, অদ্ভুতম্ — অদ্ভুত, রূপম্ – রূপ; উগ্রম্— ভয়ংকর; তব—তোমার; ইদম্—এই, লোকত্রয়ম্ – ত্রিলোক; প্রব্যথিতম্ —ব্যথিত হচ্ছে: মহাত্মন্ –হে মহাত্মন।

অনুবাদ:- তুমি একাই স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যবর্তী অন্তরীক্ষ ও দশদিক পরিব্যাপ্ত করে আছ। হে মহাত্মন্! তোমার এই অদ্ভুত ও ভয়ঙ্কর রূপ দর্শন করে ত্রিলোক অত্যন্ত ভীত হচ্ছে।


শ্লোক:21:

অমী হি ত্বাং সুরসঙ্ঘাঃ বিশন্তি কোচিদ্ ভীতাঃ প্রাঞ্জলয়ো গৃণন্তি ।

স্বস্তীত্যুক্ত্বা মহর্ষিসিদ্ধসঙ্ঘাঃ স্তুবন্তি ত্বাং স্তুতিভিঃ পুষ্কলাভিঃ।২১॥

শব্দার্থঃ অমী—ঐ সমস্ত, হি—অবশ্যই, ত্বাম্ – তোমাকে, সুরসঙ্ঘাঃ — দেবতারা, বিশন্তি— প্রবেশ করছেন, কোচিৎ – কেউ কেউ, ভীতাঃ- ভীত হয়ে, প্রাঞ্জলয়ঃ—করজোড়ে। গৃণন্তি—গুণ বর্ণনা করছেন; স্বস্তি—শান্তিবাক্য; ইতি—এভাবে, উক্ত্বা - বলে; মহর্ষি—মহর্ষিগণ; সিদ্ধসঙ্ঘাঃ — সিদ্ধগণ, স্তবন্তি—স্তব করছেন, ত্বাম্ – তোমাকে; - স্তুতিভিঃ—স্তুতির দ্বারা, পুষ্কলাভিঃ— বৈদিক মন্ত্র।

অনুবাদ:- সমস্ত দেবতারা তোমার শরণাগত হয়ে তোমাতেই প্রবেশ করছেন। কেউ কেউ ভীত হয়ে করজোড়ে তোমার গুণগান করছেন৷ মহর্ষি ও সিদ্ধেরা 'জগতের কল্যাণ হোক' বলে প্রচুর স্তুতি বাক্যের দ্বারা তোমার স্তব করছেন।


শ্লোক:22:

রুদ্রাদিত্যা বসবো যে চ সাধ্যা বিশ্বেহশ্বিনৌ মরুতশ্চোষ্মপাশ্চ ।

গন্ধর্বযক্ষাসুরসিদ্ধসঙ্ঘাঃ বীক্ষন্তে ত্বাং বিস্মিতাশ্চৈব সর্বে ॥২২॥

শব্দার্থঃ রুদ্র–রুদ্র; আদিত্যাঃ — আদিত্যগণ, বসবঃ - বসুগণ, যে—যে সমস্ত, চ–এবং, সাধ্যাঃ—সাধাগণ, বিশ্বে - বিশ্বদেবগণ; অশ্বিনৌ– অশ্বিনীকুমারদ্বয়, মরুতঃ - মরুতগণ; চ―এবং; উষ্মপাঃ — পিতৃগণ, চ– এবং, গন্ধর্ব — গন্ধর্বগণ, যক্ষ – যক্ষগণ, অসুরসিদ্ধসঙ্ঘা—অসুরগণ ও সিদ্ধগণ, বীক্ষন্তে— দর্শন করছেন; ত্বাম্-তোমাকে; - বিস্মিতাঃ—বিস্ময়যুক্ত হয়ে চ - ও; এব—অবশ্যই, সর্বে—সকলে।

অনুবাদ:- রুদ্রগণ, আদিত্যগণ, সাধ্য নামক দেবতারা, বসুগণ, বিশ্বদেবগণ, অশ্বিনীকুমারদ্বয়, মরুতগণ, পিতৃগণ, গন্ধর্বগণ, যক্ষগণ, অসুরগণ ও সিদ্ধগণ সকলেই বিস্মৃত হয়ে তোমাকে দর্শন করছে।


শ্লোক:23:

রূপং মহত্তে বহুবক্ত্রনেত্রং মহাবাহো বহুবাহূরুপাদম্ ।

বহূদরং বহুদংষ্ট্রাকরালং দৃষ্ট্বা লোকাঃ প্রব্যথিতাস্তথাহম্ ॥২৩॥

শব্দার্থঃ রূপম - রূপ: মহৎ – মহৎ; তে— তোমার; বহু - বহু, বক্ত্র - মুখ, নেত্রম - চক্ষু, মহাবাহো—হে মহাবীর, বহু— অনেক, বাহু - বাহু, উরু - উরু, পাদম – পদ, বহুদরম্ –বহু উদর, বহুদংষ্ট্রা— বহু দন্ত, করালম্ - ভয়ংকর, দৃষ্ট্বা—দেখে, লোকা —সমস্ত লোক: প্রবাথিতা - ব্যথিত, তথা— তেমনই, অহম্ — আমি।

অনুবাদ:- হে মহাবাহু! বহু মুখ, বহু চক্ষু, বহু বাহু, বহু উরু, বহু চরণ, বহু উদর ও অসংখ্য করাল দন্তবিশিষ্ট তোমার বিরাটরূপ দর্শন করে সমস্ত প্রাণী অত্যন্ত ব্যথিত হচ্ছে এবং আমিও অত্যন্ত ব্যথিত হচ্ছি।


শ্লোক:24:

নভঃস্পৃশং দীপ্তমনেকবর্ণং ব্যাত্তাননং দীপ্তবিশালনেত্রম্ ।

দৃষ্ট্বা হি ত্বাং প্রব্যথিতান্তরাত্মা ধৃতিং ন বিন্দামি শমং চ বিষ্ণো ॥২৪॥

শব্দার্থঃ নভঃস্পৃশম্—আকাশস্পর্শী, দীপ্তম্― জ্বলন্ত, অনেক - বহু, বর্ণম্ – বর্ণ, ব্যাত্ত - বিস্ফারিত; আননম্—মুখ, দীপ্ত – উজ্জ্বল, বিশাল – আয়ত; নেত্রম্ – চক্ষু, দৃষ্টা - দর্শন করে, হি—অবশ্যই, ত্বাম— তোমাকে, প্রব্যথিত—ব্যথিত, অন্তরাত্মা —অন্তরাত্মা, ধৃতিম্ - ধৈর্য ; ন–না, বিন্দামি— পাচ্ছি; শমম্ শান্তি, চ– ও, বিষ্ণো - হে বিষ্ণু।

অনুবাদ:- হে বিষ্ণু ! তোমার আকাশস্পর্শী, তেজময়, বিবিধ বর্ণযুক্ত, বিস্তৃত মুখমণ্ডল ও উজ্জ্বল আয়্ত চক্ষুবিশিষ্ট তোমাকে দেখে আমার হৃদয় ব্যথিত হচ্ছে এবং আমি ধৈর্য ও শম অবলম্বন করতে পারছি না।


শ্লোক:25:

দংষ্ট্রাকরালানি চ তে মুখানি দৃষ্ট্বৈব কালানলসন্নিভানি ।

দিশো ন জানে ন লভে চ শর্ম প্রসীদ দেবেশ জগন্নিবাস ॥২৫॥

শব্দার্থঃ দংষ্ট্রা—দন্তযুক্ত, করালানি — ভীষণ, চ–ও, তে—তোমার; মুখানি—মুখসমূহ; দৃষ্ট্বা—দেখে; এব—এভাবে; কালানল - প্রলয়াগ্নি;, সন্নিভানি - সদৃশ, দিশঃ - দিকসমূহ; ন জানে—জানি না; ন লভে— পাচ্ছি না; চ–ও; শর্ম—সুখ; প্রসীদ - প্রসন্ন হও, দেবেশ—হে দেবেশ; জগন্নিবাস–হে জগদাশ্রয়৷

অনুবাদ:- হে দেবেশ ! হে জগন্নিবাস ! ভয়ঙ্কর দন্তযুক্ত ও প্রলয়াগ্নি তুল্য তোমার মুখসকল দেখে আমার দিকভ্রম হচ্ছে এবং আমি শান্তি পাচ্ছি না৷ তুমি আমার প্রতি প্রসন্ন হও।


শ্লোক:26:

অমী চ ত্বাং ধৃতরাষ্ট্রস্য পুত্রাঃ সর্বে সহৈবাবনিপালসঙ্ঘৈঃ ।

ভীষ্মো দ্রোণঃ সূতপুত্রস্তথাসৌ সহাস্মদীয়ৈরপি যোধমুখ্যৈঃ ॥২৬॥

শব্দার্থঃ অমী—এই সমস্ত; চ―ও, ত্বাম্ - তোমার ধৃতরাষ্ট্রস্য – ধৃতরাষ্ট্রের, পুত্রাঃ - পুত্রগণ, সর্বে—সমস্ত, সহ–সহ, এব— বাস্তবিকপক্ষে, অবনিপাল—নৃপতিগণ: সঙ্ঘৈঃ - দলবদ্ধভাবে, ভীষ্মঃ —ভীষ্মদেব; দ্রোণঃ– দ্রোণাচার্য; সূতপুত্রঃ— কর্ণ, তথা–ও, অসৌ—সেই; সহ–সহ, অস্মদীয়ৈঃ – আমাদের; অপি–ও, যোধমুখৈাঃ - প্রধান যোদ্ধাগণ।

শ্লোক:27:

বক্ত্রাণি তে ত্বরমাণা বিশন্তি দংষ্ট্রাকরালানি ভয়ানকানি ।

কেচিদ্ বিলগ্না দশনান্তরেষু সংদৃশ্যন্তে চুর্ণিতৈরুত্তমাঙ্গৈঃ ॥২৭॥

শব্দার্থঃ বক্ত্রাণি—মুখসমূহের মধ্যে, তে– তোমার, ত্বরমাণাঃ— দ্রুতবেগে, বিশস্তি—প্রবেশ করছে, দংষ্টা— দন্তবিশিষ্ট, করালানি - করাল, ভয়ানকানি - অত্যন্ত ভয়ঙ্কর; কেচিৎ–কেউ কেউ, বিলগ্না:—বিলগ্ন হয়ে, দশনান্তরেষু– দন্ত মধ্য, সংদৃশ্যন্তে—দেখা যাচ্ছে: চূণিতৈঃ– চূর্ণিত; উত্তমাঙ্গৈঃ — মস্তক দ্বারা।

শ্লোক:28:

যথা নদীনাং বহবোহম্বুবেগাঃ সমুদ্রমেবাভিমুখা দ্রবন্তি ।

তথা তবামী নরলোকবীরা বিশন্তি বক্ত্রাণ্যভিবিজ্বলন্তি ॥২৮॥

শব্দার্থঃ যথা— যেমন; নদীনাম্—নদীসমূহের; বহবঃ - বহু, অম্বুবেগা: — জলপ্রবাহ; সমুদ্রম্ — সমুদ্র, এব— অবশ্যই; অভিমুখাঃ—অভিমুখী হয়ে; দ্রবন্তি—প্রবেশ করে; তথা—তেমনই; তব— তোমার: অমী—এই সকল নৱলোকবীরাঃ - নরলোকের বীরগণ, বিশস্তি— প্রবেশ করছে: বক্ত্রাণি—মুখসমূহে অভিবিজ্বলন্তি— জ্বলন্ত।

শ্লোক:29:

যথা প্রদীপ্তং জ্বলনং পতঙ্গা বিশন্তি নাশায় সমৃদ্ধবেগাঃ ।

তথৈব নাশায় বিশন্তি লোকা-স্তবাপি বক্ত্রাণি সমৃদ্ধবেগাঃ ॥২৯॥

শব্দার্থঃ যথা— যেমন, প্রদীপ্ত - প্রজ্বলিত, জ্বলনম্—অগ্নি, পতঙ্গাঃ— পতঙ্গগণ, বিশস্তি—প্রবেশ করে, নাশায়— মরণের জন্য, সমৃদ্ধবেগাঃ প্রবল বেগে, তথা এব—তেমনই, নাশায়—মরণের জন্য; বিশস্তি—প্রবেশ করছে লোকাঃ - সমস্ত মানুষ, তব—তোমার, অপি–ও; বক্ত্রাণি—মুখসমূহের মধ্যে, সমৃদ্ধৰেগাঃ– অতিবেগে।

শ্লোক:30:

লেলিহ্যসে গ্রসমানঃ সমন্তা-ল্লোকান্ সমগ্রান্ বদনৈর্জ্বলদ্ভিঃ ।

তেজোভিরাপূর্য জগৎ সমগ্রং ভাসস্তবোগ্রাঃ প্রতপন্তি বিষ্ণো ॥৩০॥

শব্দার্থঃ লেলিহাসে - লেহন করছ, গ্রসমানঃ—গ্রাস করছ; সমস্তাৎ– চারি দিকে লোকান্— লোকসমূহকে; সমগ্রান্— সমগ্র: বদনৈঃ—মুখসমূহের দ্বারা, জ্বলচ্চিঃ— প্রদীপ্ত তেজোভিঃ– তেজোরাশির দ্বারা; আপূর্য— আবৃত করে জগৎ-জগৎ: সমগ্রম্ — সমগ্র ভাসঃ—দীপ্তিসমূহ তব — তোমার; উগ্রাঃ—ভয়ংকর প্রতপত্তি—সন্তপ্ত করছ: বিষো—হে সর্বব্যাপ্ত ভগবান।

অনুবাদ:- ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা, তাদের মিত্র সমস্ত রাজন্যবর্গ এবং ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ এবং আমাদের পক্ষের সমস্ত সৈন্যেরা তোমার করাল দন্তবিশিষ্ট মুখের মধ্যে দ্রুতবেগে প্রবেশ করছে এবং সেই দন্তমধ্যে বিলগ্ন হয়ে তাদের মস্তক চূর্ণিত হচ্ছে। নদীসমূহ যেমন সমুদ্রাভিমুখে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে প্রবেশ করে, তেমনই নরলোকের বীরগণ তোমার জ্বলন্ত মুখবিবরে প্রবেশ করছে। পতঙ্গগণ যেমন দ্রুত গতিতে ধাবিত হয়ে মরণের জন্য জ্বলন্ত অগ্নিতে প্রবেশ করে, তেমনই এই লোকেরাও মৃত্যুর জন্য অতি বেগে তোমার মুখবিবরে প্রবেশ করছে। হে বিষ্ণু! তুমি তোমার জ্বলন্ত মুখসমূহের দ্বারা সকল লোককে গ্রাস করছ এবং তোমার তেজোরাশির দ্বারা সমগ্র জগৎকে আবৃত করে সন্তপ্ত করছ।


শ্লোক:31:

আখ্যাহি মে কো ভবানুগ্ররূপো নমহস্তু তে দেববর প্রসীদ ।

বিজ্ঞাতুমিচ্ছামি ভবন্তমাদ্যং ন হি প্রজানামি তব প্রবৃত্তিম্ ॥৩১॥

শব্দার্থঃ আখ্যাহি—দয়া করে বল; মে—আমাকে; কঃ—কে; ভবান্ - তুমি, উগ্ররূপঃ - উগ্রমূর্তি; নমঃ অস্তু— নমস্কার করি; তে - তোমাকে দেববর–হে দেবশ্রেষ্ঠ; প্রসীদ–প্রসন্ন হও; বিজ্ঞাতুম্ – বিশেষভাবে জানতে, ইচ্ছামি—ইচ্ছা করি; ভবন্তম্ – তোমাকে; আদ্যম্—আদিপুরুষ; ন–না; হি—অবশ্যই; প্রজানামি—জানতে পারছি; তব—তোমার; প্রবৃত্তিম্—প্রচেষ্টা।

অনুবাদ:- উগ্রমূর্তি তুমি কে, কৃপা করে আমাকে বল। হে দেবশ্রেষ্ঠ! তোমাকে নমস্কার করি, তুমি প্রসন্ন হও। তুমি হ্চ্ছ আদিপুরুষ৷ আমি তোমার প্রবৃত্তি অবগত নই, আমি তোমাকে বিশেষভাবে জানতে ইচ্ছা করি।

শ্লোক:32:

শ্রীভগবানুবাচঃ

কালোহস্মি লোকক্ষয়কৃৎ প্রবৃদ্ধো লোকান্ সমাহর্তুমিহ প্রবৃত্তঃ ।

ঋতেহপি ত্বাং ন ভবিষ্যন্তি সর্বে যেহবস্থিতাঃ প্রত্যনীকেষু যোধাঃ ॥৩২॥

শব্দার্থঃ শ্রীভগবান্ উবাচ—– পরমেশ্বর ভগবান বললেন; কালঃ – কাল; অস্মি–হই; লোক – লোক; ক্ষয়কৃৎ—ধ্বংসকারী; প্রবৃদ্ধঃ—বৃদ্ধিপ্রাপ্ত, লোকান্‌-লোকসমূহকে; সমাহতুম্—সংহার করতে; ইহ – এক্ষণে, প্রবৃত্তঃ – প্রবৃত্ত হয়েছি, ঋতে - ব্যতীত; অপি—ও; ত্বাম্—তোমাকে; ন–না; ভবিষ্যন্তি - থাকবে; সর্বে—সকলে; যে— যে; অবস্থিতাঃ—অবস্থিত আছে; প্রত্যনীকেষু – বিপক্ষ দলে, যোধাঃ—যোদ্ধাগণ।

অনুবাদ:- শ্রীভগবান বললেন- আমি লোকক্ষয়কারী প্রবৃদ্ধ কাল এবং এই সমস্ত লোক সংহার করতে এক্ষণে প্রবৃত্ত হয়েছি৷ তোমরা (পাণ্ডবেরা) ছাড়া উভয় পক্ষীয় সমস্ত যোদ্ধারাই নিহ্ত হবে।


শ্লোক:33:

তস্মাত্ত্বমুত্তিষ্ঠ যশো লভস্ব জিত্বা শত্রূন্ ভুঙক্ষ্ব রাজ্যং সমৃদ্ধম্ ।

ময়ৈবৈতে নিহতাঃ পূর্বমেব নিমিত্তমাত্রং ভব সব্যসাচিন্ ॥৩৩॥

শব্দার্থঃ তস্মাৎ—অতএব; ত্বম্— তুমি; উত্তিষ্ঠ—উঠ; যশঃ – যশ, লভস্ব - লাভ কর; জিত্বা–জয় করে; শত্ৰুন - শত্রুদের, ভুঙক্ষ্ব—ভোগ কর; রাজ্যম্ - রাজ্য, সমৃদ্ধম্ — সমৃদ্ধশালী; ময়া—আমার দ্বারা; এব—অবশ্যই, এতে - এই সমস্ত, নিহতাঃ—নিহত হয়েছে, পূর্বমেব—পূর্বেই, নিমিত্তমাত্রম্― নিমিত্ত মাত্র, ভব— হও; সব্যসাচিন্ - হে সব্যসাচী।

অনুবাদ:- অতএব, তুমি যুদ্ধ করার জন্য উত্থিত হও, যশ লাভ কর এবং শত্রুদের পরাজিত করে সমৃদ্ধশালী রাজ্য ভোগ কর। আমার দ্বারা এরা পূর্বেই নিহত হয়েছে। হে সব্যসাচী! তুমি নিমিত্ত মাত্র হও।


শ্লোক:34:

দ্রোণং চ ভীষ্মং চ জয়দ্রথং চ কর্ণং তথান্যানপি যোধবীরান্ ।

ময়া হতাংস্ত্বং জহি মা ব্যথিষ্ঠা যুধ্যস্ব জেতাসি রণে সপত্নান্॥৩৪॥

শব্দার্থঃ দ্রোণম্ চ–দ্রোণাচার্যও, ভীষ্মম্ চ–ভীষ্মদেবও; জয়দ্রথম্ চ - জয়দ্রথও, কর্ণম - কর্ণ, তথা - এবং, অন্যান্ — অন্যান্য অপি—অবশ্যই, যৌধবীরান - যুদ্ধবীরগণ, ময়া—আমার দ্বারা; হতাম্ – নিহত হয়েছে: ত্বম্ – তুমি, জহি–বধ কর; মা–না, ব্যথিষ্ঠাঃ—বিচলিত হয়ো, যুধ্যস্ব - যুদ্ধ কর; জেতাসি— জয় করবে, রণে— যুদ্ধে; সপত্নান্—শত্রুদের।

অনুবাদ:- ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, জয়দ্রথ এবং অন্যান্য যুদ্ধ বীরগণ, পূর্বেই আমার দ্বারা নিহত হয়েছে। সুতরাং, তুমি তাদেরই বধ কর এবং বিচলিত হয়ো না৷ তুমি যুদ্ধে শত্রুদের নিশ্চয়ই জয় করবে, অতএব যুদ্ধ কর।


শ্লোক:35:

সঞ্জয় উবাচঃ

এতচ্ছ্রুত্বা বচনং কেশবস্য কৃতাঞ্জলির্বেপমানঃ কিরীটী ।

নমস্কৃত্বা ভুয় এবাহ কৃষ্ণং সগদ্ গদং ভীতভীতঃ প্রণম্য ॥৩৫॥

শব্দার্থঃ সঞ্জয় উবাচ – সঞ্জয় বললেন; এতৎ– এই, শ্ৰুত্বা–শুনে; বচনম্-বাণী, কেশবস্য–কেশবের; কৃতাঞ্জলিঃ – হাত জোড় করে, বেপমানঃ—কম্পিত কলেবরে; কিরীটী—অর্জুন; নমস্কৃত্বা - নমস্কার করে, ভূয়ঃ— পুনরায়, এব–ও, আহ—বললেন; কৃষ্ণম্ — শ্রীকৃষ্ণকে, সগদ্‌গদম্ – গদ্‌গদভাবে; ভীতভীতঃ - ভীতচিত্তে; প্রণম্য–প্রণাম করে।

অনুবাদ:- সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন- হে রাজন! ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই বাণী শ্রবণ করে অর্জুন অত্যন্ত ভীত হয়ে কম্পিত কলেবরে কৃতাঞ্জলিপুটে প্রণাম করে গদ্ গদ বাক্যে শ্রীকৃষ্ণকে বললেন৷


শ্লোক:36:

অর্জুন উবাচঃ

স্থানে হৃষীকেশ তব প্রকীর্ত্যা জগৎ প্রহৃষ্যত্যনুরজ্যতে চ ।

রক্ষাংসি ভীতানি দিশো দ্রবন্তি সর্বে নমস্যন্তি চ সিদ্ধসঙ্ঘাঃ ॥৩৬॥

শব্দার্থঃ অর্জুন উবাচ—অর্জুন বললেন, স্থানে— যুক্তিযুক্ত; হৃষীকেশ—হে হৃষীকেশ; তব— তোমার, প্রকীর্ত্যা—মহিমা কীর্তন ছাড়া, জগৎ - সমগ্র বিশ্ব, প্রহৃষ্যতি—হৃষ্ট হচ্ছে; অনুরজ্যতে—অনুরক্ত হচ্ছে: চ―এবং রক্ষাংসি - রাক্ষসেরা, ভীতানি—ভীত হয়ে; দিশঃ—দিকসমূহে, দ্রবন্তি— পলায়ন করছে, সর্বে—সমস্ত, নমস্যন্তি—নমস্কার করছে; চ–ও, সিদ্ধসঙ্ঘা–সিদ্ধগণ।

অনুবাদ:- অর্জুন বললেন– হে হৃষীকেশ! তোমার মহিমা কীর্তনে সমস্ত জগৎ প্রহৃষ্ট হয়ে তোমার প্রতি অনুরক্ত হচ্ছে। রাক্ষসেরা ভীত হয়ে নানা দিকে পলায়ন করছে এবং সিদ্ধরা তোমাকে নমস্কার করছে। এই সমস্তই যুক্তিযুক্ত।


শ্লোক:37:

কস্মাচ্চ তে ন নমেরন্মহাত্মন্ গরীয়সে ব্রহ্মণোহ্প্যাদিকর্ত্রে।

অনন্ত দেবেশ জগন্নিবাস ত্বমক্ষরং সদসত্তৎপরং যৎ ॥৩৭॥

শব্দার্থঃ কষ্মাৎ–কেন; চ–ও, তে— তোমাকে, নমেরন - নমস্কার করিবেন; মহাত্মন্―হে মহাত্মা, গরীয়সে - গরীয়ান, ব্রহ্মণঃ - ব্ৰহ্মা অপেক্ষা, অপি—যদিও, আদিকর্ত্রে — আদিকর্তা; অনন্ত— হে অনন্ত, দেবেশ – হে দেবেশ জগন্নিবাস – জগদাশ্রয়: ত্বম্–তুমি; অক্ষরম্ ব্রহ্মা; সদসৎ - কারণ ও কার্য; তৎ পরম্― উভয়ের অতীত; যৎ—যে।

অনুবাদ:- হে মহাত্মন্! তুমি এমন কি ব্রহ্মা থেকেও শ্রেষ্ঠ এবং আদি সৃষ্টিকর্তা সকলে কেন তোমাকে নমস্কার করবেন না? হে অনন্ত! হে দেবেশ! হে জগন্নিবাস! তুমি সৎ ও অসৎ উভয়ের অতীত অক্ষরতত্ত্ব ব্রহ্ম।


শ্লোক:38:

ত্বমাদিদেবঃ পুরুষঃ পুরাণ-স্ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্ ।

বেত্তাসি বেদ্যং চ পরং চ ধাম ত্বয়া ততং বিশ্বমনন্তরূপ ॥৩৮॥

শব্দার্থঃ ত্বম্ –তুমি; আদিদেবঃ—আদি পরমেশ্বর ভগবান, পুরুষঃ—পুরুষ, পুরাণঃ - পুরাতন; ত্বম্—তুমি; অস্য—এই, বিশ্বস্য— বিশ্বের, পরম্ – পরম; নিধানম্ — আশ্রয়; বেত্তা—জ্ঞাতা; অসি—হও; বেদ্যম্ চ–এবং জ্ঞেয়; পরং চ ধাম— এবং পরম ধাম; ত্বয়া—তোমার দ্বারা ,ততম্―ব্যাপ্ত, বিশ্বম্— জগৎ; অনন্তরূপ — হে অনন্ত রূপ।

অনুবাদ:- তুমি আদি দেব, পুরাণ পুরুষ এবং এই বিশ্বের পরম আশ্রয়। তুমি সবকিছুর জ্ঞাতা, তুমিই জ্ঞেয় এবং তুমিই গুণাতীত পরম ধামস্বরূপ৷ হে অনন্তরূপ! এই জগৎ তোমার দ্বারা পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে।


শ্লোক:39:

বায়ুর্যমোহগ্নির্বরুণঃ শশাঙ্কঃ প্রজাপতিস্ত্বং প্রপিতামহশ্চ ।

নমো নমস্তেহস্তু সহস্রকৃত্বঃ পুনশ্চ ভূয়োহপি নমো নমস্তে ॥৩৯॥

শব্দার্থঃ বায়ুঃ — বায়ু; যমঃ — যম, অগ্নিঃ— অগ্নি; বরুণঃ—বরুণ; শশাঙ্কঃ–চন্দ্র: - প্রজাপতিঃ— ব্রহ্মা, ত্বম্ — তুমি; প্রপিতামহঃ—প্রপিতামহ চ–ও, নমঃ— নমস্কার; নমস্তে—তোমাকে নমস্কার করি, অস্তু-হোক; সহস্ৰকৃত্বঃ—সহস্রবার; পুনঃ চ - এবং পুনরায়, ভূয়ঃ—বারবার; অপি–ও; নমঃ— নমস্কার; নমস্তে — তোমাকে - নমস্কার করি।

অনুবাদ:- তুমিই বায়ু, যম, অগ্নি, বরুণ, চন্দ্র, প্রজাপতি ব্রহ্মা ও প্রপিতামহ৷ অতএব, তোমাকে আমি সহস্রবার প্রণাম করি, পুনরায় নমস্কার করি এবং বারবার নমস্কার করি।


শ্লোক:40:

নমঃ পুরস্তাদথ পৃষ্ঠতস্তে নমোহস্তু তে সর্বত এব সর্ব ।

অনন্তবীর্যামিতবিক্রমস্ত্বং সর্বং সমাপ্নোষি ততোহসি সর্বঃ ॥৪০॥

শব্দার্থঃ নমঃ - নমস্কার; পুরস্তাৎ—সম্মুখে, অথ - ও, পৃষ্ঠতঃ - পশ্চাতে, তে— তোমাকে; নমঃ অস্ত— নমস্কার করি; তে—তোমাকে; সর্বত:—সব দিক থেকে; এব - বস্তুত; সর্ব—হে সর্বাত্মা, অনন্তবীর্য—অন্তহীন শক্তি, অমিতবিক্রমঃ— অসীম বিক্রমশালী; ত্বম্ –তুমি; সর্বম্—সমগ্র জগতে; সমাপ্নোষি - পরিব্যাপ্ত আছ, ততঃ—সেই হেতু; অসি—তুমি হও, সর্বঃ—সব কিছু।

অনুবাদ:- হে সর্বাত্মা! তোমাকে সম্মুখে, পশ্চাতে ও সমস্ত দিক থেকেই নমস্কার করছি৷ হে অনন্তবীর্য! তুমি অসীম বিক্রমশালী। তুমি সমগ্র জগতে ব্যাপ্ত, অতএব তুমিই সর্ব-স্বরূপ।


শ্লোক:41:

সখেতি মত্বা প্রসভং যদুক্তং হে কৃষ্ণ হে যাদব হে সখেতি ।

অজানতা মহিমানং তবেদং ময়া প্রমাদাৎ প্রণয়েন বাপি ॥৪১॥

শব্দার্থঃ সখা - সখা; ইতি—এভাবে; মত্বা—মনে করে, প্রসভম—প্রগল্‌ভভাবে; যৎ—যা কিছু, উক্তম্-বলা হয়েছে, হে কৃষ্ণ–হে কৃষ্ণ; হে যাদব–হে যাদব; হে সখে - হে সখা; ইতি—এভাবেই; অজানতা–না জেনে; মহিমানম্-মহিমা; তব–তোমার; ঈদম্—এই; ময়া—আমার দ্বারা; প্রমাদাৎ—অজ্ঞতাবশত, প্রণয়েন—প্রণয়বশত; বা অপি–অথবা।

শ্লোক:42:

যচ্চাবহাসার্থমসৎকৃতোহসি বিহারশয্যাসনভোজনেষু ।

একোহথবাপ্যচ্যুত তৎসমক্ষং তৎ ক্ষাময়ে ত্বামহমপ্রমেয়ম্ ॥৪২॥

শব্দার্থঃ যৎ—যা কিছু, চ - ও; অবহাসার্থম্—পরিহাস ছলে, অসৎকৃতঃ— অসম্মান; অসি—করা হয়েছে, বিহার–বিহার; শয্যা - শয়ন; আসন–উপবেশন; ভোজনেষু—অথবা একত্রে আহার করার সময়; একঃ—একাকী; অথবা—অথবা, অপি–ও, অচ্যুত–হে অচ্যুত; তৎসমক্ষম্ – তাদের সামনে; তৎ— সেই সব; ক্ষাময়ে - ক্ষমা প্রার্থনা করছি, ত্বাম্--তোমার কাছে; অহম্ - আমি; অপ্রমেয়ম্ - অপরিমেয়।

অনুবাদ:- তোমার মহিমা না জেনে, সখা মনে করে তোমাকে আমি প্রগল্ ভভাবে “হে কৃষ্ণ”, “হে যাদব”, “হে সখা”, বলে সম্বধন করেছি। প্রমাদবশত অথবা প্রণয়বশত আমি যা কিছু করেছি তা তুমি দয়া করে ক্ষমা কর। বিহার, শয়ন, উপবেশন ও ভোজনের সময় কখন একাকী এবং কখন বন্ধুদের সমক্ষে আমি যে তোমাকে অসম্মান করেছি, হে অচ্যুত! আমার সে সমস্ত অপরাধের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।


শ্লোক:43:

পিতাসি লোকস্য চরাচরস্য ত্বমস্য পূজ্যশ্চ গুরুর্গরীয়ান্ ।

ন ত্বৎসমোহ্স্ত্যভ্যধিকঃ কুতোহন্যো লোকত্রয়েহ্প্যপ্রতিমপ্রভাব ॥৪৩॥

শব্দার্থঃ পিতা — পিতা, অসি— হও; লোকসা—জগতের, চরাচরস্য— স্থাবর ও জঙ্গমের, তুম্ – তুমি; অস্য—এই, পূজ্যঃ—পূজনীয়; চ–ও; গুরুঃ– গুরু, গরীয়ান্ - গুরুশ্রেষ্ঠ; ন–না; ত্বৎসমঃ- তোমার সমকক্ষ; অস্তি—আছে; অভ্যধিকঃ — মহত্তর, কুতঃ – কিভাবে সম্ভব, অন্যঃ- অন‍্য; লোকত্রয়ে–ত্রিলোকে, অপি–ও, অপ্রতিম—অপ্রমেয়, প্রভাব—প্রভাব।

অনুবাদ:- হে অমিত প্রভাব! তুমি এই চরাচর জগতের পিতা, পুজ্য, গুরু ও গুরুশ্রেষ্ঠ। ত্রিভুবনে তোমার সমান আর কেউ নেই, অতএব তোমার থেকে শ্রেষ্ঠ অন্য কে হতে পারে?


শ্লোক:44:

তস্মাৎ প্রণম্য প্রণিধায় কায়ং প্রসাদয়ে ত্বামহমীশমীড্যম্ ।

পিতেব পুত্রস্য সখেব সখ্যুঃ প্রিয়ঃ প্রিয়ায়ার্হসি দেব সোঢ়ুম ॥৪৪॥

শব্দার্থঃ তস্মাৎ – অতএব, প্রণম্য—প্রণাম করে; প্রণিধায়—দণ্ডবৎ পতিত হয়ে; কায়ম - দেহ; প্রসাদয়ে—কৃপাভিক্ষা করছি; ত্বাম্—তোমার কাছে, অহম্—আমি; ঈশম্ - পরমেশ্বর ভগবান; ঈড‍্যম্—পরমপূজা। পিতা ইব–পিতা যেমন; পুত্রস্য—পুত্রের, সখা ইব—সখা যেমন; সখ্যুঃ — সখার, প্রিয়ঃ—প্রেমিক; প্রিয়ায়াঃ—প্রিয়ার; অর্হসি— সমর্থ; দেব – হে দেব; সোঢ়ুম—ক্ষমা করতে।

অনুবাদ:-তুমি সমস্ত জীবের পরম পূজ্য পরমেশ্বর ভগবান৷ তাই, আমি তোমাকে দণ্ডবৎ প্রনাম করে তোমার কৃপাভিক্ষা করছি। হে দেব! পিতা যেমন পুত্রের, সখা যেমন সখার, প্রেমিক যেমন প্রিয়ার অপরাধ ক্ষমা করেন, তুমিও সেভাবেই আমার অপরাধ ক্ষমা করতে সমর্থ।


শ্লোক:45:

অদৃষ্টপূর্বং হৃষিতোহস্মি দৃষ্ট্বা ভয়েন চ প্রব্যথিতং মনো মে ।

তদেব মে দর্শয় দেব রূপং প্রসীদ দেবেশ জগন্নিবাস ॥৪৫॥

শব্দার্থঃ অদৃষ্টপূর্বম্—অদৃষ্টপূর্ব; হৃষিতঃ—আনন্দিত; অস্মি—হয়েছি: দৃষ্ট্বা - দেখে, ভয়েন - ভয়ে; চ–ও; প্রব্যথিতম্—ব্যথিত হয়েছে; মনঃ—মন; মে - আমার, তৎ - সেই, এব—অবশ্যই; মে—আমাকে; দর্শয়—দেখাও; দেব– হে দেশ, রূপম্ - রূপ, প্রসীদ—প্রসন্ন হও; দেবেশ – হে দেবেশ; জগন্নিবাস–হে জগন্নিবাস।

অনুবাদ:- তোমার এই বিশ্বরূপ, যা পূর্বে কখনও দেখিনি, তা দর্শন করে আমি আনন্দিত হয়েছি, কিন্তু সেই সঙ্গে আমার মন ভয়ে ব্যথিত হয়েছে। তাই, হে দেবেশ! হে জগন্নিবাস! আমার প্রতি প্রসন্ন হও এবং পুনরায় তোমার সেই রূপই আমাকে দেখাও।


শ্লোক:46:

কিরীটিনং গদিনং চক্রহস্তম্ ইচ্ছামি ত্বাং দ্রষ্টুমহং তথৈব ।

তেনৈব রূপেণ চতুর্ভুজেন সহস্রবাহো ভব বিশ্বমূর্তে ॥৪৬॥

শব্দার্থঃ কিরীটিনম্—কিরীটধারী; গদিনম্— গদাধারী; চক্রহস্তম্—চক্রধারী; ইচ্ছামি—ইচ্ছা করি; ত্বাম্—তোমাকে; দ্রষ্টুম—দর্শন করতে; অহম্ — আমি; তথা এব–পূর্বের মতো; তেন এব—সেই, রূপেণ—রূপে; চতুর্ভুজেন—চতুর্ভুজ; সহস্রবাহো-হে সহস্ৰবাহো; ভব—হও; বিশ্বমূর্তে—হে বিশ্বমূর্তি।

অনুবাদ:- হে বিশ্বমূর্তি! হে সহস্রবাহো! আমি তোমাকে পূর্ববৎ সেই কিরীট, গদা ও চক্রধারীরূপে দেখতে ইচ্ছা করি। এখন তুমি তোমার সেই চতুর্ভুজ রূপ ধারণ কর।


শ্লোক:47:

শ্রীভগবানুবাচঃ

ময়া প্রসন্নেন তবার্জুনেদং রুপং পরং দর্শিতমাত্মযোগাৎ ।

তেজোময়ং বিশ্বমনন্তমাদ্যং যন্মে ত্বদন্যেন ন দৃষ্টপূর্বম্ ॥৪৭॥

শব্দার্থঃ শ্রীভগবান্ উবাচ—পরমেশ্বর ভগবান বললেন; ময়া— আমার দ্বারা, প্রসন্নেন - প্রসন্ন হয়ে; তব–তোমাকে, অর্জুন— হে অর্জুন, ইদম্—এই; রূপম্—রূপ, পরম্ - পরম, দর্শিতম্—দর্শিত হল; আত্মযোগাৎ—আমার অন্তরঙ্গা শক্তির দ্বারা, তেজোময়ম্ - তজোময়; বিশ্বম্–সমগ্র জগৎরূপী, অনন্তম্ – অন্তহীন; আদ‍্যম্ আদি, যৎ - যা, মে— আমার, ত্বৎ অন্যেন– তুমি ছাড়া; ন দৃষ্টপূর্বম–পূর্বে কেউ দেখেনি।

অনুবাদ:- শ্রীভগবান বললেন- হে অর্জুন! আমি প্রসন্ন হয়ে তোমাকে আমার অন্তরঙ্গা শক্তি দ্বারা জড় জগতের অন্তর্গত এই শ্রেষ্ঠ রূপ দেখালাম। তুমি ছাড়া পূর্বে আর কেউই এই অনন্ত, আদি ও তেজোময় রূপ দেখেনি।

শ্লোক:48:

ন বেদযজ্ঞাধ্যয়নৈর্ন দানৈ-র্ন চ ক্রিয়াভির্ন তপোভিরুগ্রৈঃ ।

এবংরূপঃ শক্য অহং নৃলোকে দ্রষ্টুং ত্বদন্যেন কুরুপ্রবীর ॥৪৮॥

শব্দার্থঃ ন—না; বেদ—বৈদিক জ্ঞান; যজ্ঞ— যজ্ঞ; অধ্যয়নৈঃ–অধ্যয়নের দ্বারা; ন–না; দানৈঃ—দানের দ্বারা; ন–না; চ–ও; ক্রিয়াভিঃ– পুণ্যকর্মের দ্বারা; ন–না; তপোভিঃ —তপস্যার দ্বারা; উগ্রৈঃ—কঠোর; এবংরূপঃ—এই রূপে; শক‍্যঃ - যোগ্য, অহম্ - আমি; নৃলোকে—এই জড় জগতে; দ্রষ্টুম্-দর্শন করতে, ত্বৎ-তুমি ছাড়া, অন্যেন—অন্য কারও দ্বারা; কুরুপ্রবীর — হে কুরুশ্রেষ্ঠ।

অনুবাদ:- হে কুরুশ্রেষ্ঠ! বেদ অধ্যয়ন, যজ্ঞ, দান, পুণ্যকর্ম ও কঠোর তপস্যার দ্বারা এই জড় জগতে তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমার এই বিশ্ব রূপ দর্শন করতে সমর্থ নয়।

শ্লোক:49:

মা তে ব্যথা মা চ বিমূঢ়ভাবো দৃষ্ট্বা রূপং ঘোরমীদৃঙ্ মমেদম্ ।

ব্যপেতভীঃ প্রীতমনাঃ পুনস্ত্বং তদেব মে রূপমিদং প্রপশ্য ॥৪৯॥

শব্দার্থঃ মা—না হোক; তে—তোমার; ব্যথা–কষ্ট; মা-না হোক; চ–ও, বিমুঢ়ভাব - মোহাচ্ছন্নতা; দৃষ্ট্বা—দেখে; রূপম – রূপ; ঘোরম্— ভয়ংকর, ঈদৃক্ - এই প্রকার, মম—আমার; ইদম্—এই, ব্যপেতভীঃ—সমস্ত ভয় থেকে মুক্ত হয়ে, প্রীতমনাঃ —প্রসন্নচিত্তে, পুনঃ— পুনরায়; ত্বম্ – তুমি; তৎ-তা; এব—এভাবে, মে - আমার, রূপম্—রূপ; ইদম্-এই, প্রপশ্য—দর্শন কর।

অনুবাদ:- আমার এই প্রকার ভয়ঙ্কর বিশ্বরূপ দেখে তুমি ব্যথিত হয়ো না। সমস্ত ভয় থেকে মুক্ত হয়ে এবং প্রসন্ন চিত্তে তুমি পুনরায় আমার চতুর্ভুজ রূপ দর্শন কর।


শ্লোক:50:

সঞ্জয় উবাচঃ

ইত্যর্জুনং বাসুদেবস্তথোক্ত্বা স্বকং রুপং দর্শয়ামাস ভূয়ঃ ।

আশ্বাসয়ামাস চ ভীতমেনং ভূত্বা পুনঃ সৌম্যবপুর্মহাত্মা ॥৫০॥

শব্দার্থঃ সঞ্জয়ঃ উবাচ – সঞ্জয় বললেন; ইতি—এভাবে, অর্জুনম্ - অর্জুনকে; বাসুদেবঃ— কৃষ্ণ; তথা—সেভাবে; উক্ত্বা—বলে; স্বকম্ — তাঁর নিজের; রূপম্-রূপ; দর্শয়ামাস—দেখালেন; ভূয়ঃ— পুনরায়; আশ্বাসয়ামাস—আশ্বস্ত করলেন; চ–ও, ভীতম্—ভীত; এনম্—তাঁকে; ভূত্বা—হয়ে; পুনঃ—পুনর্বার; সৌম্যবপুঃ—প্রসন্নমূর্তি, মহাত্মা—মহাত্মা।

অনুবাদ:- সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন- মহাত্মা বাসুদেব অর্জুনকে এভাবেই বলে তাঁর চতুর্ভুজ রূপ দেখালেন এবং পুনরায় দ্বিভুজ সৌম্যমূর্তি ধারণ করে ভীত অর্জুনকে আশ্বস্ত করলেন।


শ্লোক:51:

অর্জুন উবাচঃ

দৃষ্ট্বেদং মানুষং রূপং তব সৌম্যং জনার্দন ।

ইদানীমস্মি সংবৃত্তঃ সচেতাঃ প্রকৃতিং গতঃ ॥৫১॥

শব্দার্থঃ অর্জুনঃ উবাচ–অর্জুন বললেন; দৃষ্টা— দেখে; ইদম্— এই, মানুষম্— মানুষ, রূপম্—রূপ; তব—তোমার; সৌম্যম্ — সৌম‍্য, জনার্দন—হে জনার্দন; ইদানীম্‌ - এখন, অস্মি - হই, সংবৃত্তঃ— স্থির হল, সচেতাঃ - চিত্ত, প্রকৃতিম্ - প্রকৃতিস্থ, গতঃ - হলাম।

অনুবাদ:-অর্জুন বললেন- হে জনার্দন! তোমার এই সৌম্য মানুষমূর্তি দর্শন করে এখন আমার চিত্ত স্থির হল এবং আমি প্রকৃতিস্থ হলাম।


শ্লোক:52:

শ্রীভগবানুবাচঃ

সুদুর্দশমিদং রূপং দৃষ্টবানসি যন্মম ।

দেবা অপ্যস্য রূপস্য নিত্যং দর্শনকাঙ্ক্ষিণঃ ॥৫২॥

শব্দার্থঃ শ্রীভগবান্ উবাচ - পরমেশ্বর ভগবান বললেন, সুদুদর্শম্– অতি দুর্লভ দর্শন, ইদম্ - এই, রূপম্ – রূপ, দৃষ্টবান্ অসি—দেখলে; যৎ- যে; মম-আমার, দেবাঃ - দেবতারা; অপি–ও; অস্য—এই, রূপস্য – রূপের; নিত‍্যম্ - সর্বদা, দর্শনকাঙ্ক্ষিণঃ - দর্শনাকাঙ্ক্ষী।

অনুবাদ:- পরমেশ্বর ভগবান বললেন- তুমি আমার যে রূপ দেখছ তা অত্যন্ত দুর্লভ দর্শন। দেবতারাও এই নিত্য রূপের সর্বদা দর্শনাকাঙ্ক্ষী।

শ্লোক:53:

নাহং বেদৈর্ন তপসা ন দানেন ন চেজ্যয়া ।

শক্য এবংবিধো দ্রষ্টুং দৃষ্টবানসি মাং যথা ॥৫৩॥

শব্দার্থঃ ন - না, অহম্—আমি; বেদৈঃ—বেদ অধ্যয়নের দ্বারা; ন– না; তপসা - তপস্যার দ্বারা, ন-না; দানেন - দানের দ্বারা; ন–না; চ–ও, ইজ‍্যয়া–পূজার দ্বারা, শক‍্যঃ —সমর্থ হয়; এবংবিধঃ—এই প্রকার; দ্রষ্টুম্—দর্শন করতে; দৃষ্টবান— দেখছ, অসি— তুমি; মাম্ - আমার; যথা—যেরূপ।

অনুবাদ:- তুমি তোমার দিব্য চক্ষুর দ্বারা আমার যেরূপ দর্শন করছ, সেঅহমেবংবিধোহর্জুনই প্রকার আমাকে বেদ অধ্যয়্ন, তপস্যা, দান ও পূজার দ্বারা কেউই দর্শন করতে সমর্থ হয় না।


শ্লোক:54:

ভক্ত্যা ত্বনন্যয়া শক্য অহমেবংবিধোহর্জুন ।

জ্ঞাতুং দ্রষ্টুং চ তত্ত্বেন প্রবেষ্টুং চ পরন্তপ ॥৫৪॥

শব্দার্থঃ ভক্ত্যা-ভক্তির দ্বারা, তু–কিন্তু; অনন্যয়া-কর্ম ও জ্ঞানের আবরণ থেকে মুক্ত; শক‍্যঃ–সমর্থ, অহম্ - আমি, এবংবিধঃ—এই প্রকার, অর্জুন- হে অর্জুন, জ্ঞাতুম্—জানতে, দ্রষ্টুম্—দেখতে, চ–ও, তত্ত্বেন—তত্ত্বত, প্রবেষ্টুম্ - প্রবেশ করতে, চ-ও; পরন্তপ — হে পরন্তপ।

অনুবাদ:- হে অর্জুন! হে পরন্তপ! অনন্য ভক্তির দ্বারাই কিন্তু এই প্রকার আমাকে তত্ত্বত জানতে, প্রত্যক্ষ করতে এবং আমার চিন্ময় ধামে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়।


শ্লোক:55:

মৎকর্মকৃন্মৎপরমো মদ্ভক্তঃ সঙ্গবর্জিতঃ ।

নির্বৈরঃ সর্বভূতেষু যঃ স মামেতি পাণ্ডব ॥৫৫॥

শব্দার্থঃ মৎকর্মকৃৎ - আমার কর্মে যুক্ত, মৎপরমঃ—মৎপরায়ণ, মদ্ভক্ত - আমাতে ভক্তিযুক্ত; সঙ্গবর্জিতঃ—জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত, নির্বৈরঃ — শত্রুভাব রহিত, সর্বভূতেষু - সর্ব জীবের প্রতি, যঃ - যিনিঃ, সঃ - তিনি, মাম্ আমাকে, এতি—লাভ করেন, পান্ডব — হে পাণ্ডুপুত্র।

অনুবাদ:- হে অর্জুন! যিনি আমার অকৈতব সেবা করেন, আমার প্রতি নিষ্ঠাপরায়ণ, আমার ভক্ত, জড় বিষয়ে আসক্তি রহিত এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি শত্রুভাব রহিত, তিনিই আমাকে লাভ করেন।


ওঁ তৎসদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে 'বিশ্বরূপদর্শনযোগো' নামক একাদশোঽধ্যায়ঃ সমাপ্তম্।

আরো জানুন: Shrimad Bhagwat Geeta In Hindi ~ सम्पूर्ण श्रीमद्‍भगवद्‍गीता ,   सम्पूर्ण श्रीमद भागवत गीता – Complete Shrimad Bhagwat Geeta in Hindi,   শ্রীতুলসী আরতি ,   বাংলা অর্থসহ শিবতান্ডব স্তোত্রম ,   মহিষাসুরমর্দিনী স্ত্রোত্র,   শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌ গীতা ,   সূর্য দ্বাদশ নাম স্তোত্রম

💐💐💐💐💐

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.